চন্দন চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধি : বেছে বেছে মেধাবী ছাত্রদের টার্গেট করতেন। তারপর পুলিশে চাকুরির প্রলোভন দেখাতেন। কয়েকজন মেধাবী ছাত্রকে টার্গেট করলে এদের মধ্যে কেউ না কেউ পুলিশে চাকুরির পরীক্ষায় টিকে যেতো। তখন সেই প্রার্থীকে তিনিই চাকুরি দিয়েছেন বলে কৌশলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন।
মোঃ এনামুল হক(৪০) নামের এমনই এক প্রতারকের সন্ধান পাওয়া গেছে সাতক্ষীরায়। তিনি খুলনা জেলার ফুলতলা থানা এলাকার জামিরা গ্রামের মোসলেম সরদারের ছেলে। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে তিনি আপাতত শ্রীঘরে বন্দী রয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার(১৪ মার্চ) পাটকেলঘাটা থানার তৈলকুপি এলাকায় এরকমই এক প্রতারনা করতে গিয়ে ধরা পড়েন এই প্রতারক। এসময় তার কাছ থেকে প্রতারনার কাজে ব্যবহৃত তিনটি একশো টাকার স্ট্যাম্প(খপ-৪২৮৫৯৪৬, খম-৫৭০২৫৬০, খপ-৪২৮৫৯৪৪), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শূন্য চেক(০২৭৮১২৮০০০০০২৮৪ একাউন্টের অনুকুলে ডি-৪৬০৭৪৯৭), ডাচ বাংলা ব্যাংকের শূন্য চেক(১৮০১৫৮০০৩১৩১৪ একাউন্টের অনুকুলে ১৩০৫৮৭২) সহ অন্যান্য কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার মোঃ মতিউর রহমান সিদ্দিকী।
শুক্রবার দুপুরে সাতক্ষীরা পুলিশ লাইন্স ড্রিলশেডে এক সংবাদ সম্মেলনে পুরো ঘটনা বর্ননা করেন পুলিশ সুপার। এসময় তার সাথে গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ তারেক ফয়সাল ইবনে আজিজ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিকুল ইসলাম সহ গনমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ সুপার বলেন, পাটকেলঘাটার তৈলকুপি গ্রামে ইয়াছিন আলী নামের এক পুলিশে চাকুরিপ্রার্থীর সাথে প্রতারনা করতে গিয়েছিলো প্রতারক এনামুল। উত্তীর্ন হলে ১৪ লক্ষ টাকা দিতে হবে এই মর্মে শূন্য ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও দুটি ব্যাংকের শূন্য চেকে ইয়াছিনের মা ফিরোজা বেগমের স্বাক্ষর করিয়ে নেয় সে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে প্রতারনা ও তার সংঘবদ্ধ চক্রের কথা স্বীকার করেছে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, সম্প্রতি সাতক্ষীরায় যে ৪৯ জন প্রার্থী পুলিশের চাকুরির পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়েছে তাদের সাথে কথা বলা হবে। তারা যদি কোথাও কোন কমিটমেন্ট দিয়ে থাকে বা অর্থ লেনদেন করে থাকে তবে সেই টাকাও ফেরত আনার ব্যবস্থা করা হবে।
যে প্রার্থীর কাছ থেকে প্রতারনা করা হচ্ছিলো সে উত্তীর্ন হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, তিনি অত্যন্ত কাছাকাছি ছিলেন। হয়তো সামনের বার তিনি উত্তীর্ন হয়ে যেতেন কারন এখানে অভিজ্ঞতার একটা ব্যাপার আছে। তখনই হয়তো প্রতারক চক্র কৌশলে তার কাছ থেকে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতো। কারন পুলিশে পরীক্ষা দিচ্ছে এমন মেধাবী প্রার্থীদের টার্গেট করতো প্রতারক এনামুল। এদের মধ্যে কারো চাকুরি হলে বা মেধাতালিকায় টিকে গেলে কৌশলে তার কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতো চক্রটি। প্রতারক চক্রটির অন্য সদস্যদের ধরতে পুলিশের এ ধরনের অভিযান অব্যহত থাকবে বলেও জানান পুলিশ সুপার।
পূর্ববর্তী পোস্ট