মহম্মদপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি:
নাশকতার অভিযোগে পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় মাগুরার মহম্মদপুরের ৫ সংবাদকর্মীকে আসামি করায় সাংবাদিক দের মধ্যে ভীতির স ার হয়েছে। গা ঢাকা দিয়েছে অধিকাংশ বিএনপি সমর্থিত সাংবাদিক। তবে গত ১লা অক্টোবর মহম্মদপুরে পুলিশের গাড়ি ভাংচুর এবং ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপি’র মহাসমাবেশে বিএনপি সমর্থিত এক সাংবাদিক যোগদান করে ঢাকার বুকে বিশৃঙ্খলা করার পরও তার নাম না থাকায় এবং নিরাপরাধ সাংবাদিকদের নাশকতার মামলায় আসামি করায় তাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এছাড়া প্রবাসীকে সাবেক এক ছাত্রদল নেতা এবং সরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কে আসামি করায় ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি’র পলাতক নেতারা। তবে এ মামলার আসামি হওয়া সংবাদিকদের অধিকাংশই নিস্ক্রিয় বলে দাবি করেছেন স্থানীয় জৈষ্ঠ সাংবাদিকরা।
গত ২ নভেম্বর নাশকতা কর্মকান্ড ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে মহম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে ৫জন সাংবাদিক, একজন প্রবাসী, দুইজন প্রধান শিক্ষকসহ স্থানীয় বিএনপি’র ১৯৯ জন নেতা-কর্মীর নামে মামলা দ্বায়ের করেন। এরমধ্যে উপজেলা সদরের সরকারি আরএসকেএইস ইনষ্ঠিটিউশানের প্রধান শিক্ষক মো. নাসিরুল ইসলাম বাদে অন্যান্যরা বিএনপি’র রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার খবর পাওয়া গেছে।
যে সকল সাংবাদিকরা এ মামলার আসামি হয়েছেন তারা হলেন- দৈনিক ইত্তেফাক এর উপজেলা প্রতিনিধি মেহেদী হাসান পলাশ, ভোরের দর্পণ পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি মো. রাসেল পারভেজ, খবরের আলো পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি মো. ওয়াহাব বিশ্বাস, যশোর থেকে প্রকাশিত লোকসমাজ পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি মো. তরিকুল ইসলাম তারা এবং নিউ নেশন পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি মো. রফিকুল ইসলাম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এরা সবাই সাংবাদিকতার পাশাপাশি বিএনপি’র রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক পদে রয়েছেন ওহাব বিশ্বাস, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক পদে রয়েছে মো. তরিকুল ইসলাম তারা, উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মেহেদী হাসান পলাশ। উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব পদে মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি ধোয়াইল আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
অন্যদিকে-বাহরাইনে থাকেন মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের বাদশা শিকদারের ছেলে রাজীব শিকদার। তিনি এক সময় ছাত্রদলের সক্রিয় নেতা ছিলেন। চলতি বছরের জুনে তিন মাসের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন। ছুটি শেষে গত ১১ সেপ্টেম্বর আবার বাহরাইনে ফিরে যান। মহম্মদপুর থানায় নাশকতা ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে পুলিশের করা এ মামলায় তাকেও আসামি করা হযছে। তিনি উপজেলা সদরের বাদশা শিকদারের ছেলে। গত ২ নভেম্বর এই মামলাটি দায়ের করেন মহম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মোস্তাফিজুর রহমান। মামলায় বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীসহ ১৯৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আরো তিন শতাধিক ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয় বাদী ১ নভেম্বর রাতে মহম্মদপুর বাজারে টহল দিচ্ছিলেন। রাত পৌনে ১২টার দিকে তিনি খবর পান অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কর্মীরা নাশকতা কর্মকান্ড ঘটানোর উদ্দেশে মাগুরা-মহম্মদপুর সড়কের ধোয়াইল আদর্শ নুরানী হাফেজি মাদ্রাসা ও এতিমখানার সামনে জড়ো হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিএনপি ও সমমনা দলের কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৭ জনকে আটক করে। জব্দ করা হয় বিস্ফোরিত ও অবিস্ফোরিত ককটেল বোমাসদৃশ কৌটা, জালের কাঠি, বাঁশের লাঠিসহ বিভিন্ন বস্তু।
মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ধোয়াইল গ্রামের মো. বাবুল শেখ ও কাবুল শেখ নামের দুই ব্যক্তিকে। জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, রাত দুইটার দিকে যখন বোমা বিস্ফোরণের শব্দ হয়, তখন তাঁরা ঘুমাচ্ছিলেন। বোমার শব্দ শুনলেও ভয়ে তাঁরা কেউই ঘর থেকে বের হননি। পুলিশ তাদের ডেকে তোলে। পরে তাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেওয়া হয়।
মহম্মদপুরে কর্মরত একজন সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, নামে সবাই সাংবাদিক হলেও কেউ মুল ধারার সাংবাদিক নন। তাদের প্রধান পরিচয় তারা বিএনপির বিভিন্ন সংগঠনের পদধারী নেতা।
মামলার আসামি সাংবাদিক ওয়াহাব বিশ্বাস বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৭৬ বছর। একসময় রাজনীতি করতাম। এখন শুধু সাংবাদিকতা করি। মামলায় আসামির তালিকায় নিজের নাম দেখে বিস্মিত হয়েছি। শুনেছে উপজেলা বিএনপি’র কমিটিতে আমার নাম আছে। তবে কারা দিয়ে রেখেছে আমার জানা নেই। আমি কোন মিটিং মিছিল সভা-সমাবেশে যায় না। আমার একটি ছেলে বাজারে ব্যবসা করে তাকেও এ মামলার আসামি করা হয়েছে। মো. রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, ঘটনার দিন তিনি এক আত্মীয়কে ডাক্তার দেখাতে ফরিদপুরে অবস্থান করছিলেন। আমি বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও আমার মুল পেশা শিক্ষকতা। পাশাপাশি সাংবাদিকতা করি। নাশকতায় আমার কোন সংশ্লিষ্ঠতা নাই। প্রবাসী রাজীবের বাবা বাদশা শিকদার জানান, রাজিব এক সময় ছাত্রদলের রাজনীতি করত। এ কারণেই হয়তো কেউ শত্রুতামূলকভাবে তার নাম দিয়েছে।
তবে রাজিবের ভাই সজীব শিকদার মহম্মদপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক এবং ১লা অক্টোবর মহম্মদপুরে বিএনপি’র বিক্ষোভ মিছিল থেকে পুলিশের গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় তিনি এবং তার আরেক ভাই তারিখ শিকদারের সংশ্লিষ্ঠতার প্রমান মিললেও তাদের আসামি না করায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ব্যক্তি শত্রুতার জেরে অধিকাংশ সাধারান মানুষকে এ মামলার আসামি করা হয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন বিএনপির দুইজন সিনিয়র নেতা। তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা যায়, ১অক্টোবর মহম্মদপুরে বিএনপি’র বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহনকারী মাছুদ রানা নামের এক সাংবাদিক পুলিশের গাড়ি ভাংচুরে অংশ নেয় এবং ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপি’র সমাবেশ থেকে নাশকতার সংশ্লিষ্ঠতা থাকলেও আওয়ামীলীগের কয়েকজন নেতৃবৃন্দের সাথে তার সখ্যতা থাকায় তাকে মামলার আসামি করা হয়নি। ১লা অক্টোবরের ঘটনায় পরদিন ১০১ নেতা-কমীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো সহ¯্রাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে এসআই বাদশা মিয়া বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। মাছুদরা রানা বিএনপি’র সাম্প্রতিক বিতর্কিত কর্মকান্ডে সংশ্লিষ্ঠতার বিষয় অস্বিকার করে বলেন, আমি শুধুমাত্র সাংবাদিকতা পেশার সাথে জড়িত আছি।
এ বিষয়ে মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বোরহান উল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে সবকিছু যাচাইয়ের সুযোগ থাকে না। তদন্তে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ না পেলে চার্জশিট থেকে তাদের নাম বাদ যাবে।’