হোম ঢাকাফরিদপুর পতিতালয়ে টাকা নিয়ে বাকবিতণ্ডায় মিলনকে হত্যা করে রোজিনা

পতিতালয়ে টাকা নিয়ে বাকবিতণ্ডায় মিলনকে হত্যা করে রোজিনা

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 107 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক:

ফরিদপুর বাস টার্মিনালে লাগেজের মধ্যে যুবকের মরদেহ ফেলে রেখে যায় অজ্ঞাতরা। ঘটনার দুই দিন পর ওই যুবকের পরিচয় শনাক্ত ও হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। দৌলতদিয়া পতিতা পল্লীতে টাকা নিয়ে বাকবিতণ্ডার জেরে তাকে হত্যা করা হয়। অভিযান চালিয়ে মিলন প্রামাণিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত যৌনকর্মী রোজিনা আক্তার কাজলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।

পুলিশ সুপার জানান, পাবনা সদর উপজেলার মিলন প্রামাণিক (৩৯) রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়ায় ইটের ভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন। ২৬ জানুয়ারি রাতে মিলন দৌলতদিয়া যৌন পল্লীতে যায়। সেখানে গিয়ে যৌনকর্মী রোজিনা আক্তার কাজলের রুমে যান। শারীরিক সম্পর্ক শেষে তাদের মধ্যে টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে রোজিনা ক্ষিপ্ত হয়ে তার পরিহিত ওড়না মিলনের গলায় পেঁচিয়ে হত্যা করে।

তিনি আরও জানান, সকালে মিলনের মরদেহ কম্বল দিয়ে পেঁচিয়ে স্যুটকেসে ভরে ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে মরদেহ ভর্তি লাগেজটি নিয়ে রিকশা যোগে গোয়ালন্দ বাজারে যান। সেখান থেকে মাহিন্দ্র গাড়িতে ফরিদপুর বাস টার্মিনালে আসেন। বিকাশ পরিবহনের গাড়ির টিকিট কাটেন এবং মরদেহ ভর্তি লাগেজটি গাড়ির হেলপারের সহায়তায় গাড়িতে রাখেন। গাড়ি ছাড়তে কিছুটা বিলম্ব হলে কৌশলে নাস্তা খাওয়ার কথা বলে রোজিনা দ্রুত পালিয়ে যান।

পুলিশ সুপার জানান, সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মঙ্গলবার ভোরে ডিএমপির কদমতলী থানার জুরাইন এলাকার এক বাসা থেকে রোজিনা আক্তারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হবে তাকে।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত যৌনকর্মী রোজিনা আক্তার কাজল বলেন, মিলন মাঝে মধ্যেই আমার কাছে আসতো। আমি ওর কাছে টাকা পাইতাম। ওই রাতে ঝগড়া হয় এক পর্যায়ে আমি ক্ষিপ্ত হয়ে ওড়না গলায় পেঁচিয়ে মারধর করি। কিন্তু এতে সে মারা যাবে ভাবতে পারিনি। রাগের মাথায় এ ঘটনা ঘটেছে।

স্যুটকেসে মরদেহ বহনকারী রিকশাচালক তালেব বেপারী জানান, সকাল থেকেই আমি রিকশা চালাই। প্রতিদিনের মতো শনিবার সকালে দৌলতদিয়া পতিতা পল্লীর সামনে অবস্থান করছিলাম। এমন সময় যৌনকর্মী রোজিনা আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। বলে একটি এসি ও কিছু মালামাল আছে বাইরে আনতে হবে।

তিনি আরও জানান, আমি ভিতরে গিয়ে স্যুটকেস ভারি দেখে তাকে জানাই এটা নিতে আরও একজন লোক লাগবে। ৬০০ টাকা দিতে হবে। রোজিনা বলে ঠিক আছে। আমি মাথায় নিয়ে অর্ধেক রাস্তায় আসি, পরে আমার সঙ্গে থাকা আরেকজন মাথায় নেয়। পরে রিকশায় করে দৌলতদিয়া বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে যাই। পরে সেখান থেকে রোজিনা ওই স্যুটকেস মাহিন্দ্র করে নিয়ে যায়।

মাহিন্দ্র চালক গানু বেপারী জানান, দৌলতদিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বোরকা পরা এক নারী ফরিদপুরে আসার জন্য আমার মাহিন্দ্রতে ওঠে। দুটি সিট নেয়, ৬০০ টাকা ভাড়া নেই। সে ফরিদপুর বাস টার্মিনালে এসে নামে। স্যুটকেস এতো ভারি কেন জানতে চাইলে ওই নারী বলেন, ভেতরে এসি ও লোহার কিছু মালামাল রয়েছে এ কারণে ভারি। আমি টার্মিনালে নামিয়ে দিয়ে চলে যাই।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুজন বিশ্বাস জানান, ঘটনার পর থেকেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ শুরু করে। সিসিটিভি ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দঘাট বাজার থেকে মাহিন্দ্র গাড়ির চালককে শনাক্ত করে হেফাজতে নেয়া হয়। তার দেয়া তথ্য মতে, লাগেজ বহনকারী রিকশাচালককে হেফাজতে নিয়ে গোয়ালন্দ পতিতা পল্লীর জনৈক রুবেল মাতুব্বরের বাড়ির দ্বিতীয় তলার ভাড়াটিয়া রোজিনার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

তিনি আরও জানান, ঘটনার পর থেকে রোজিনা পলাতক ছিল। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় রোজিনাকে মঙ্গলবার ভোরে ডিএমপির কদমতলী থানার জুরাইন এলাকার জনৈক মো. দেওয়ান বাড়ির ৬ তলা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

এসআই সুজন জানান, রোজিনাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে ১০/১২ বছর যাবৎ গোয়ালন্দঘাট দৌলতদিয়া পতিতা পল্লীতে রয়েছে। তার বয়স যখন ১৪ বছর, তখন তার বাবা মা তাকে বিয়ে দেয়। বিয়ের কিছু দিন পর তার বিচ্ছেদ ঘটে। পরবর্তীতে দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর চায়ের দোকানদার জনৈক হাকিমের সঙ্গে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। হাকিম মারা যাওয়ার পর সে জনৈক সুজনের সঙ্গে তৃতীয় বিয়ে হয়।

তিনি আরও জানান, মিলন প্রামাণিক (৩৯) পাবনা সদর উপজেলার নতুন গোহাইল বাড়ি এলাকার কাশেম প্রামাণিকের ছেলে। মিলন প্রামাণিকের বাড়ি পাবনা সদর হলেও রাজবাড়ী জেলায় বিভিন্ন ইট ভাটায় কাজ করত এবং মাঝে মাঝে যৌন পল্লীতে আসত। ২৬ জানুয়ারি রাতে রোজিনার ঘরে যায় মিলন। তাদের মধ্যে টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে রোজিনা তার পরিহিত ওড়না মিলনের গলায় পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন