হোম খুলনা নেই সেতু: ১৪ বছর ধরে ভেলায় চড়েই স্কুলে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা

নেই সেতু: ১৪ বছর ধরে ভেলায় চড়েই স্কুলে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 45 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক:

নয় বছর বয়সী সুমাইয়া আক্তার। খুলনার কয়রা উপজেলার মঠবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। বাড়ি থেকে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যেতে একটি খাল পার হতে হয় তাকে। প্লাস্টিকের ভেলায় চড়ে এই খাল পাড়ি দিতে বেজায় ভয় তার। তবে বিকল্প না থাকায় পানিতে পড়ে যাওয়ার শঙ্কার মধ্যেই বিদ্যালয়ে যায় সে। একটি সেতুর অভাবে এমন করে গত ১৪ বছর ধরে এ গ্রামের শিক্ষার্থীরা পার হচ্ছে খাল।

সুমাইয়ার শঙ্কা অবশ্য অমূলক নয়। মঠবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, বছরের শুরুতে ছেলে-মেয়েরা নতুন বই নিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় ভেলা উল্টে শিক্ষার্থীরা খালে পড়ে যায়। আশপাশের লোকজন এসে শিশুদের উদ্ধার করলেও তাদের নতুন বইগুলো ভিজে যায়।

তবে এ ধরনের দুর্ঘটনা বর্ষাকালে বেশি হয় বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি সেতু নির্মাণ না হলে এখানকার দুর্ভোগ কমবে না।

খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ি গ্রামটিকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছে প্রায় তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২৫০ মিটার চওড়া একটি খাল। ২০০৯ সালে গ্রাম সংলগ্ন শাকবাড়িয়া নদীর বাঁধ ভেঙে জোয়ার-ভাটার প্রবল স্রোতে খালটি সৃষ্টি হয়। এক বছর পর বাঁধ মেরামত হলেও খালটি ভরাট হয়নি। ফলে গত ১৪ বছর ধরে গ্রামের মানুষ ভেলায় চড়ে খাল পার হচ্ছেন। এতে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খালটির পশ্চিম পাড়ে প্রতাপ স্মরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মঠবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া একটি কমিউনিটি ক্লিনিকও রয়েছে সেখানে। প্রথমদিকে খালের অন্যপাড় থেকে বিদ্যালয়গামী ছেলেমেয়েরা ডিঙি নৌকায় পারাপার হতো। কিন্তু নৌকা সব সময় পাওয়া যায় না। জেলেরা নৌকা নিয়ে সুন্দরবনে চলে গেলে কলার ভেলায় পার হতে হয় তখন। এতে ঝুঁকি ছিল বেশি। পরে প্লাস্টিকের ড্রামের উপর কাঠের তক্তা দিয়ে স্থায়ীভাবে ভেলা বানানো হয়।

শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রতিদিন ভেলায় খাল পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসতে যেতে ভয় লাগে তাদের। ভেলা থেকে পড়ে গেলে বই, খাতা ভিজে যায়। অনেক সময় ভেলায় লোকজন বেশি উঠলে পার হতে পারে না তারা। এজন্য ক্লাসে উপস্থিত হতে দেরি হয় তাদের। বিদ্যালয় দুটির অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর যাতায়াত করতে হয় এমন ঝুঁকি নিয়ে।

প্লাস্টিকের ড্রাম চারকোনা করে বেঁধে ওপরে তক্তার পাটাতন বিছিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ এই ভেলা। খালের দুই পাশে একটি লম্বা রশি আড়াআড়িভাবে খুঁটির সঙ্গে টানিয়ে রাখা হয়েছে। লোকজন ভেলায় চড়ে নিজেরাই রশি টেনে পারাপার হচ্ছেন। সেখানকার বাসিন্দাদের উপজেলা সদরে যেতে হয় ভেলায় খাল পেরিয়ে। প্রায় ৫ হাজার জনসংখ্যার বড় এ গ্রামটির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শাকবাড়িয়া নদী পেরিয়ে সুন্দরবন। রয়েছে একটি বাজার ও ফরেস্ট স্টেশন। খালের পূর্ব পাড়ে সুপেয় পানির সংকট থাকায় বাসিন্দারা ভেলায় খাল পেরিয়ে পশ্চিম পাড় থেকে পানি নিয়ে আসেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সাইদ বলেন, ‘সাড়ে ১৪ বছর আগে তৈরি হওয়া খালটির পাড়ে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পারাপারে ভোগান্তি লাঘবে খালের ওপর একটি সেতু হলে এই এলাকার কয়েক হাজার মানুষ নিরাপদ যোগাযোগের সুযোগ পাবেন।’

মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের বাজেট দিয়ে এতো বড় খালে সেতু বানানো সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনা করে দেখব।’

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের স্কুলে পৌঁছাতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে; এটা দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছি। আপাতত একটি ভাসমান সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন