মহম্মদপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি:
শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলার ১৫ ইউনিয়ন,মাগুরা সদর উপজেলার চার ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাগুরা-২ আসন। এ আসনটি আওয়ামীলীগের দূর্গ হিসেবে খ্যাঁত। এ আসনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আলোচনার উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। যার মূল বিষয় হচ্ছে মনোনয়ন। আগামী ৭ জানুয়ারি অনষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ১৫ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় বর্তমান এমপি, ক্রিকেটার, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, আইনজীবি, আমলা, সাবেক ছাত্রনেতা, এমনকি সংগঠনের পদহীন ব্যক্তিরাও আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চেয়েছেন। তরে শেষ প্রর্যন্তু চুড়ান্ত পর্যায়ে নৌকার মাঝি কে হচ্ছেন তা নিয়ে জনপদ ঘিরে চলছে জল্পনা-কল্পনা। ক্রিকেটার শাকিব আল হাসান এ আসনের মনোনয়ন ফরম ক্রয় করায় মনোনয়ন যুদ্ধে চমক আসতে পারে বলে ধারনা উৎসাহী এবং প্রতিক্ষিত নেতা-কর্মী এবং সাধারন মানুষ।
মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন-বর্তমান এমপি সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার, মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুজ্জামান বাচ্চু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানব বিষয়ক সম্পাদক কর্ণেল শরীফ উদ্দীন, জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ড. ওহিদুর রহমান টিপু, মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি কবিরুরুজ্জামান, প্রকৌশলী নুরুজ্জামান, মাগুরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নবীব আলী, অ্যাডভোকেট ফয়েজুর রহমান ফরিদ, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ সভাপতি শওকতুজ্জামান সৈকত, কেদ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য শাহিদুল হাসান খোকন, মাগুরা জেলা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আবু আউব বিশ্বাস, অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান এবং ঢাকা বিশ^ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ বিভাগের সহ সভাপতি আব্বাস আল কোরশী।
আওয়ামীলীগের বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার ফের মনোনয়ন পাবেন বলেই জানান দিচ্ছেন তার অনুসারি অধিকাংশ নেতাকর্মীরা। তবে সংগঠনের পদাধিষ্ঠ অধিকাংশ সিনিয়র নেতা-কর্মীরা নেতৃত্বের পরিবর্তন প্রত্যাশা করছেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন কে সামনে রেখে মরহুম সাংসদ অ্যাডভোকেট আছাদুজ্জামানের জৈষ্ঠ পূত্র মাগুরা জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুজ্জামান বাচ্চু, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সদস্য নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, মাগুরা জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক কর্ণেল (অব:) কাজী শরিফ উদ্দীন, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ড. ওহিদুর রহমান টিপু, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী নুরুজ্জামান দলীয় মনোনয়ন পেতে এলাকায় ব্যাপক গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচন কে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের হেবি ওয়েট একাধিক প্রার্থী আগেভাগেই মাঠে নেমে পড়ায় বর্তমান সাংসদ ড. শ্রী বীরেন শিকদারের কপালে পড়েছে দু:শ্চিন্তার ভাজ। এদের সকলেই লবিংএ এগিয়ে থাকতে এখন ঢাকায় অবস্থান করে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সাকিব আল হাসান মনোনয়ন ফরম কেনায় ব্যাপক আলোচনা এবং সমালোচনা হচ্ছে নির্বাচনী এলাকাজুড়ে। মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান বলেন, সাকিবের পরিবার কখনোই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন নাই বরং তার বাবা এবং মামার পরিবার বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িত। তবে অধিকাংশ নেতাকর্মীরা মনে করছেন মনোনয়ন যুদ্ধে চমক দেখাতে পারে সাকিব। তিনি মাগুরা-১ এবং ঢাকা-১০ আসনেও মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেছেন।
১৯৯৪ সালে মাগুরা-২ আসনের সাবেক সাংসদ অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামানের মৃত্যুর পর এ আসনটির উপ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সেই সময় রাজনীতিতে নতুন মুখ শিল্পপতি কাজী সালিমুল হক কামাল আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী শফিকুজ্জামান বাচ্চুর বিরুদ্ধে জয় লাভ করার পর ভোট ডাকাতির অভিযোগ ওঠে। বিতর্কিত এই নির্বাচন নিয়ে সরকার বিরোধী যে আন্দোলন গড়ে ওঠে তা জাতীয় পর্যায়ে রুপ নেয়। ১৯৯৬ সালে সেই আন্দোলন অবশেষে গনআন্দোলনে রুপান্তরিত হয়। এবং শেষ প্রর্যন্তু ১৯৯৬ সালে দুইবার সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামীলীগ চুড়ান্তভাবে রাজনৈতিক বিজয় অর্জন করে। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় আওয়ামীলীগ এবং মাগুরা-২ আসনের ভোট যুদ্ধে বিএনপির প্রার্থী কাজী সালিমুল হক কামালের সাথে লড়াই করে আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থী ড. শ্রী বীরেন শিকদার বিপুল ভোটে জয় লাভ করেন। জাতীয় সংসদের ৯২ নম্বর এই নির্বাচনী এলাকায় স্বাধীনতার আগে থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্তু আওয়ামীলীগ থেকে অ্যাডভোকেট আছাদুজ্জামান পরপর চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন থেকেই এই আসনটি আওয়ামীলীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৯৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৯৪ সালের ২০ মার্চ সেই বিতর্কিত উপনির্বাচন হয় অনুষ্ঠিত হয়। শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলার ১৫ ইউনিয়ন এবং মাগুরা সদর উপজেলার চার ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাগুরা-২ আসনটিতে আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে আলোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে। যার মূল বিষয় হচ্ছে মনোনয়ন। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নিতাই রায় চৌধুরীর সাথে লড়াই করে সামান্য ভোটের ব্যবধানে জয় লাভ করেন বীরেন শিকদার। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ, ২০১৮ একাদশ জাতীয় সংসদেও তিনি মাগুরা-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ বছর আওয়ামী লীগের একাধিক হেবি ওয়েট প্রার্থী গনসংযোগ করায় বর্তমান সংসদ সদস্য ড. শ্রী বীরেনশিকদারের মনোনয়ন দোদুল্যমান বলে মনে করছেন রাজনীতির বাইরে থাকা সাধারন মানুষ। আর এলাকার কৌতুহলী সাধারন মানুষ অধির আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন চুড়ান্তভাবে কে পাচ্ছেন দলের মনোনয়ন। তবে বেশীরভাগ মানুষের চাহিদা নতুন মুখের। মরহুম সাবেক সাংসদ এ্যাডভোকেট আছাদুজ্জামানের জেষ্ঠ্য পূত্র এ্যাডভোকেট শফিকুজ্জামান বাচ্চুর পক্ষেও কথা বলছেন নেতা-কর্মীরা।
বর্তমান সাংসদ সাবেক যুব ও ক্রীড়াপ্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার বিগত ৫ বছরে তার নির্বাচনী এলাকায় হিসেবেও ব্যাপক উন্নয়ন ও সফলতার দাবি করেছেন তিনি। পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এলাকার জনগণের সাথে সব সময়ই আমি সম্পৃক্ত রয়েছি। সপ্তাহে দুইদিন নির্বাচনী এলাকায় থেকে জনগনের সুখ-দুঃখে সময় দেওয়াসহ বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি সব সময়। মহম্মদপুরবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন মধুমতি নদীর ওপর শেখ হাসিনা সেতু নির্মিত হয়েছে এবং শালিখা এবং মহম্মদপুর উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া এলাকার রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করে অনুন্নত শালিখা-মহম্মদপুরকে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে শতভাগ প্রতিশ্রæতি পালন করেছি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সমানভাবে উন্নয়ন ঘটিয়েছি। গোটা জেলার ক্রীড়া উন্নয়নে আধুনিক স্টেডিয়াম নির্মাণসহ একাধিক মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করেছি। মনোনয়েনের ব্যাপারে সংসদ সদস্য বীরেন শিকদার বলেন, ‘নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার ওপর যতবার আস্থা রেখেছেন, ততবার আমি সেই আস্থার প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে আবার এ আসনটি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারবো। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-২ আসন থেকে মনোনয়ন প্রাপ্তির যোগ্য উত্তসুরি বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট শফিকুজ্জামান বাচ্চু। তিনি আরো বলেন, তার মরহুম পিতা এ আসনে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পরপর চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ্আওয়ামীলীগের পদাধিষ্ঠ সকল নেতাসহ সাধারন মানুষ তাকেই এমপি হিসেবে দেখতে চায়। অধ্যাপক কর্ণেল কাজী শরিফ উদ্দীন বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আমি এলাকায় গনসংযোগসহ নেতাকর্মীদের সাথে মত বিনিময় করে যাচ্ছি। আমি দলের মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী। নির্বাচনী এলকার জনগনও আমার উপর আস্থা রাখতে চান। প্রকৌশলী নুরুজ্জামান বলেন, আমি গনসংযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়েছি। তাদের সুখ দু:খের কথা শুনেছি এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছি। ড. ওহিদুর রহমান টিপু বলেন, ২০০৮ সাল থেকে আমি সুখে দু:খে আমি এলকার মানুষের সাথে কাজ করে যাচ্ছি। আমার কর্মকান্ড সম্পর্কে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অবহিত আছেন। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে আমি না। নির্মল কুমার চ্যাটার্জী বলেন, অধিকাংশ সময় সাংগঠনিক কাজে আমাকে ঢাকায় থাকতে হয়। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে আমার নির্বাচনী এলকার মানুষের সাথে সমন্বয় রাখতে বলেছেন। আমি প্রতি সমপ্তাহে একবার এলকায় গিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীসহ সাধারন মানুষের সাথে সমস্বয় সাধন করি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা বলেন, বীরন শিকদার দীর্ঘদিন ধরে দলের কর্মীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে রেখেছেন। তাছাড়া তার ভাইকে দিয়ে বিগত পাঁচ বছর তিনি এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য, অধিকাংশ চাকুরির ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে জড়িয়ে পড়েন। যা ফেসবুকে ব্যাপক ভাইরাল হয়। অবশ্য বীরেন শিকদার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।