মহম্মদপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি:
মাগুরার মহম্মদপুরে শেখ হাসিনা সেতুসহ মধুমতী নদীর দুইতীরে অপেক্ষামান উৎসাগত লাখো মানুষ। নদীর উত্তরে রুইজানি এলাকা থেকে ছেড়ে আসবে ১৫টি সুসজ্জিত বাইচের নৌকা। তিল পরিমান ঠাঁই নেই কোথাও। লাখো দর্শক দু’চোঁখ ভরে নৌকাবাইচ উপভোগ করতে জড়ো হন। শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষসহ সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের সরব উপস্থিতিতে নদীর দুই তীর উপচে পড়ে। অপেক্ষার প্রহর শেষ। ঘড়ির কাটা তখন প্রায় তিনটার ঘরে। এসময় চড়ন্দারের ঘঁণ্টার টং টং আওয়াজের তালে তাল মিলিয়ে বাইচাররা হেলেদুলে বইঠা টেনে ছুটে আসেন দুরন্ত গতীতে। এ সময় মধুমতী নদীতে বৈঠার ছন্দ উপস্থিত লাখো দর্শককে যেন উলসিত করে তোলে। খুলনাসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আগত ১৫টি সুসজ্জিত বাইচের নৌকা প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে।
এটা ছিল দক্ষিণ-পশ্চিমা লের সর্ববৃহৎ গ্রামীণ ঐতিহ্যের নৌকাবাইচ। শনিবার বিকেলে শেখ হাসিনা সেতু সংলগ্ন মধুমতী নদীতে জমজমাট বিহারী লাল নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় আগত আমুদে দর্শকরা আনন্দঘন ও উৎসব মুখরতার মধ্যদিয়ে ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন। এদিন সকাল থেকেই আমুদে দর্শকরা নদীর দুই তীরে এসে জড়ো হতে থাকেন। সবারই উদ্দেশ্য-দু’চোখ ভরে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ উপভোগ করা। এদিকে মেলাকে ঘিরে মহম্মদপুর উপজেলা সদরসহ আশে-পাশের অন্তত: ১০ গ্রামে কয়েকদিন আগে থেকেই উৎসব শুরু হয়।
বসুরধূলজুড়ী, ভোলানাথপুর, রুইজানী, গোপালরগর, জাঙ্গালিয়া, ধুপুড়িয়া, রায়পাশা, চরমুরাইল, চরজাঙ্গালিয়া, চররুইজানীসহ আশেপাশে অন্তত: ২০ গ্রামের মানুষসহ পার্শ্ববর্তী কয়েক জেলার কয়েক লাখ মানুষ মেতেছিলেন নৌকা বাইচ উপভোগে। মধুমতির দুই তীরে লাখো দর্শক দু’চোখ ভরে নৌকা বাইচ উপভোগ করেন। শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষসহ সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের সরব উপস্থিতিতে নদীর দুই তীর পরিনত হয় মিলন মেলায়। শেখ হাসিনা সেতু সংলগ্ন প্রায় তিন বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মেলায় বসেছে সুসজ্জিত স্টল। উপজেলার সীমান্তবর্তী বিনোদপুর থেকে শেখ হাসিনা সেতু প্রর্যন্তু প্রায় দশ কিলোমিটার সড়কে ব্যানার, পোষ্টার ও গেইট সাজিয়ে সৌন্দর্য বর্ধন করে মেলাকে আকর্শনীয় করে তোলা হয়। অন্যদিকে চারু, কারু, কাঠ-বাস, বেত আসবাবপত্র. তৈজষপত্র, মিষ্টি মাছসহ রকমারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে হাজার হাজার স্টল ও পুরো মেলা জুড়ে চলে ক্রেতা-বিক্রেতার মিলন মেলা। মাগুরাসহ আসপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েক লাখ মানুষ সমাগত হয় এই মেলায়। মূল মেলা একদিন হলেও মেলার আগে ও পরে কয়েকদিন ধরে চলে মেলার কেনা-বেচা।
বিগত ১০ বছরে এটি খুলনা লের সর্ববৃহৎ নৌকাবাইচ মেলায় পরিণত হয়েছে। উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনের মাগুরা, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, পাবনা, ফরিদপুর, খুলনা, মাদারীপুর ও রাজবাড়ীসহ দূর-দূরান্তের ১৫টি বাহারি রঙের ও সাঁজের বাইচের নৌকা প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে। অধিক সংখ্যক বাইচের নৌকা আসায় দুই গ্রুপে ভাগ করে প্রতিযোগিতায় সামিল করে আয়োজক কমিটি। নৌকাবাইচ উপভোগের জন্য মধুমতির দুইপাড়ে লাখো দর্শক-দর্শণার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ের দৃশ্যও হয়ে ওঠে দৃস্টিনন্দন। উপজেলার ধুলজুড়ী, ভোলানাথপুর, রুইজানী, গোপালনগর, জাঙ্গালিয়া ও ধুপুড়িয়া গ্রামে মধুমতির দুইতীরে অন্তত: পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লাখো দর্শকের সমাগম ঘটে। জমজমাট নৌকাবাইচ দু’চোখ ভরে উপভোগ করেন তারা।
সব অপেক্ষা-প্রতীক্ষা শেষে বেলা তিনটায় শুরু হয় জাঁকজমকপূর্ণ ও দর্শকদের কাঙ্খিত নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। আবহমান বাংলার চিরন্তণ এ দৃশ্য অন্যরকম উপভোগ্য হয়ে ওঠে। দৃস্টিনন্দন আবহ তৈরি হয় নদীবক্ষে। হেমন্তের এই নির্মলতায় মধুমতি নদীতে অনুষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী ও মনোমুগ্ধকর নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা দু’চোখ ভরে উপভোগ করেন লাখো মানুষ।
উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে স্থানীয় এমপি ড. বীরেন শিকদারের আর্থিক সহায়তায় তার মরহুম পিতা বিহারী লাল শিকদারের নামে অনুষ্ঠিত এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা শেষে সন্ধায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন স্থানীয় সাংসদ সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার।
উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার আহবায়ক মেলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) বাসুদেব মালো’র সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাগুরা জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান, সাধারন সম্পাদক মোস্তফা কামাল সিদ্দিকী লিটন, উপজেলা চেয়ারম্যান আবু আব্দুল্লাহেল কাফী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বেবী নাজনীন প্রমূখ।