হোম Uncategorizedবাংলাদেশ টেন্ডার ছাড়া গাছ কর্তন : মেজাজ হারিয়ে সাংবাদিক ও ছাত্রলীগের ছেলেদের দুষলেন অধ্যক্ষ হাদী

টেন্ডার ছাড়া গাছ কর্তন : মেজাজ হারিয়ে সাংবাদিক ও ছাত্রলীগের ছেলেদের দুষলেন অধ্যক্ষ হাদী

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 107 ভিউজ

স্টাফ রিপোর্টার : ‘বেশীরভাগ সাংবাদিকরা হলুদ সাংবাদিকগিরি করে। ছাত্রলীগের ছেলেরা গাঁজা খায়, ব্যবসা করে’। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে টেন্ডার ছাড়াই গাছ কাটার সচিত্র প্রতিবেদন তৈরী করতে গেলে তেড়ে এসে ফুঁসতে ফুঁসতে এসব কথা বলেন কলেজটির অধ্যক্ষ আমানুল্লাহ আল হাদী।

শনিবার দুপুরে এই প্রতিবেদক সরকারি কলেজের পুরাতন হোস্টেলের পাশে টেন্ডার ছাড়া গাছ কাটা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান। আগে থেকেই মাঠের পাশে অবস্থান করা অধ্যক্ষ আমানুল্লাহ হাদী ক্যামেরা দেখে তেড়ে আসেন। বলেন, আগে আমার সাথে কথা বলতে হবে। এরপর তিনি সাংবাদিক ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে অবান্তর কথাবার্তা বলেন।

টেন্ডার ছাড়া কেন গাছ কাটা হচ্ছে সাংবাদিকের এমন প্রশ্ন তিনি কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘আমি কলেজের শিক্ষকদের সাথে আলোচনার পর প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে গাছ কেটেছি। এমনকি জেলা আওয়ামী লীগের নেতা নজরুল সাহেবকেও বিষয়টি অবগত করেছি। শুক্রবারে গাছটি কাটা হয়েছে, আজ তার গুড়ি ও ডালপালা সরানো হচ্ছে’।

সরকারি কলেজ হোস্টেলের পাশে প্রায় অর্ধশত বছর বয়সী একটি খইগাছ কয়েকমাস আগে কালবৈশাখী ঝড়ে হেলে পড়ে। তবে অধ্যক্ষ আমানুল্লাহ্ আল হাদী বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘খই গাছটি ছাড়াও অনেক শিশুগাছে এক ধরনের পোকা লেগেছে। এজন্য গাছটি মারা গিয়েছে। মরা গাছ রেখে কি লাভ? গাছের কাটা ও ডালপালা পড়ে মানুষ আহত হচ্ছে, ছেলেরা খেলতে পারছে না। তাছাড়া খইগাছের এমন কোন দাম নেই। গাছটি দিয়ে কলেজের ফার্নিচার বানানো হবে’।

অধ্যক্ষ হাদীর কথা অনুযায়ী গাছটি মারা গেলেও সরেজমিনে দেখা গেছে অন্য চিত্র। গাছের পাতা সবুজ বর্নই রয়ে গেছে। ডালাপালাও কাঁচা। কাটা স্থানে গাছ থেকে আঠা বের হচ্ছে। অর্থাৎ জীবিত গাছটিকেই কেটে ফেলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয়রা জানান, ‘খই গাছটি কয়েকমাস আগে ঝড়ে হেলে যায়। তবে গাছটি মারা যায়নি। হয়তো গোড়ায় একটু মাটি সরে গিয়েছে’।

গাছটি না কেটে শুধু ডালপালা ছেঁটে দিলেই স্থানীয়দের ভোগান্তি কমে যেতো কিনা জানতে চাইলে অধ্যক্ষ হাদী বলেন, ‘আরে, এই গাছটি না কাটলে ছাত্রলীগের ছেলেপেলে এসে কেটে নিয়ে বিক্রি করতো। ইতোমধ্যেই তারা ডালপালা কাটা শুরু করেছে। এদের ভয়ে আমি তড়িঘড়ি করে গাছটি কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিই’।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার সামাজিক বনবিভাগের ফরেস্টার জিএম মারুফ বিল্লাহ্ বলেন, ‘সরকারি যেকোন গাছ কাটতে গেলে আমাদের অনুমতি নিতে হবে। এটাই নিয়ম। কিন্তু অধ্যক্ষ হাদী আমাদের কাছ থেকে কোন অনুমতি নেননি। অনুমতি ছাড়া একজন সরকারি কর্মকর্তা গায়ের জোরে এ ধরনের কাজ করতে পারেন না’।

উল্লেখ্য, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ এরিয়ায় প্রায় কয়েক কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে যা জমিদার প্রাননাথ রায়ের সময়ে লাগানো হয়েছিলো। বিভিন্ন সময়ে কৌশলে এসব গাছ কাটা হয়ে থাকে। ২০২১ সালের ২০ আগস্ট কলেজটির ভাইস প্রিন্সিপাল পদে কর্মরত থাকাকালীন আমানুল্লাহ হাদী কলেজ চত্বরের পুরাতন তিনটি কৃষ্ণচূড়া গাছ বিনা টেন্ডারে রাতের আঁধারে কেটে ফেলেন। তখন বিভিন্ন গনমাধ্যমে বিষয়টি উঠে এলেও তৎকালীন অধ্যক্ষ আফজাল হোসেনের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দিয়ে তিনি পার পেয়ে যান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজটির একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘হাদী স্যারের আচরন অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ন। যেখানেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি থাকে স্যার তাদের ওপরে চড়াও হন। বিশেষ করে ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা আওয়ামী লীগের কোন অঙ্গসংগঠনের নাম শুনলেই মাথা গরম হয়ে যায় তার। কারন তিনি জামাতপন্থী। আর জামাতপন্থীদের একটি বৈশিষ্ঠ্য হলো তারা গাছ কাটতে খুব পছন্দ করে’।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন