হোম অন্যান্যসারাদেশ কুলিয়ায় সংখ্যালঘু’র বন্দোবস্তের জমিসহ ভিটেবাড়ি জবরদখলে নিতে হামলা-মামলা

দেবহাটা প্রতিনিধি:

দেবহাটার কুলিয়াতে বন্দোবস্তের জমিসহ বসতভিটা বাঁচাতে প্রতিপক্ষের মামলা-হামলা ও হয়রানির শিকার হয়ে বর্তমানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নির্মল মিস্ত্রী (৫৯) নামক এক অসহায় সংখ্যালঘুর পরিবার। তিনি কুলিয়া ইউনিয়নের রঘুনাথপুর-আন্দুলপোতা গ্রামের বাসিন্দা এবং স্থানীয় সতীশ মিস্ত্রীর ছেলে।

সরকারি ভিপি সম্পত্তির বন্দোবস্তকৃত ১০ শতক জমিসহ ভিটেবাড়ি জবরদখলে ব্যর্থ হয়ে প্রতিপক্ষের দায়েরকৃত হয়রানি মুলোক একটি মারপিটের মামলায় আসামী হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।

একই মামলায় আসামী হয়ে জেলখেটে ফিরেছেন তার ভাই বিমল মিস্ত্রীর ছেলে সুজিত মিস্ত্রি (৩৫) এবং তাদের প্রতিবেশি যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ছেলে নির্মল সরকার (৪৫)। এছাড়াও হয়রানী মুলোক ওই মামলায় পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে অপর আসামী স্থানীয় স্কুল শিক্ষিকা সুষামা সরকার (৪০), ও পার্শ্ববর্তী ঢালির ঘের গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল সানা (৩৫) কে।

ভুক্তভোগী নির্মল মিস্ত্রী বলেন, রামনগর মৌজার ৩নং খতিয়ানের ১২৪ দাগের যে ১০ শতক জমিতে আমার ছেলে সুনীল মিস্ত্রী স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন, তা পার্শ্ববর্তী নদী ভরাটি সরকারি ভিপি সম্পত্তি। একযুগ আগে সেখানে বসবাস করতেন ভুপেন্দ্র সরকার ও তার ছেলে সুধাংশু সরকারের পরিবার।

ওই বসতভিটার কিছুটা দূরে ভুপেন্দ্র সরকারের পরিবারের আরও ৪ একর রেকর্ডিয় সম্পত্তি ছিল। ২০০৪ সালে রেকর্ডিয় ৪ একর সম্পত্তি তাদের শরীক মৃত অমুল্য সরকারের ছেলে মনোরঞ্জনের কাছে এবং বসতভিটার ১০ শতক ভিপি সম্পত্তি আমার কাছে বিক্রি করে স্বপরিবারে ভারতে চলে যায় ভুপেন্দ্র ও তার ছেলে সুধাংশু সরকার।

এরপর থেকে বিগত একযুগ ওই ভিটেবাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছে আমার ছেলে সুনীল মিস্ত্রী। তাছাড়া গত ছয় বছর ধরে সরকারের কাছ থেকে আমার ছেলে সুনীলের নামে ওই ১০ শতক জমি বন্দোবস্ত নিয়ে নিয়মিত খাজনাও পরিশোধ করছি আমরা। এরইমধ্যে ভারতে পাড়ি জমানো ভূপেন্দ্র নাথের কাছ থেকে কেনা বিলান ৪ একর জমির মালিকানা দেখিয়ে আমাদের বন্দোবস্তকৃত ভিটেবাড়ি জবরদখলে মরিয়া হয়ে ওঠে মনোরঞ্জন সরকার ও তার দুই ভাই নিমাই সরকার এবং নিরঞ্জন সরকার। দীর্ঘদিন ধরে ওই সম্পত্তি জবরদখলে নিতে আমাদেরকে উচ্ছেদের হুমকিসহ ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং হয়রানি করে আসছিল প্রভাবশালী তিনভাই মনোরঞ্জন, নিরঞ্জন ও নিমাই।

তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আমরা কুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে লিখিত অভিযোগ করলে মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারী) উভয়পক্ষকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে শালিসে বসেন ইউপি চেয়ারম্যান আছাদুল হক সহ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে জনপ্রতিনিধি ও মামলায় আসামী হওয়া স্কুল শিক্ষিকা সুষামা সরকার, রফিকুল সানাসহ এলাকার অন্যান্য গন্যমান্য ব্যাক্তিরা। শালিস বৈঠক চলাকালে প্রতিপক্ষ নিরঞ্জন সরকারের মেয়ে দিপা রানী উপস্থিত গন্যমান্য ব্যাক্তিদের সম্পর্কে কুটুক্তি করলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

একপর্যায়ে শালিস স্থগিত করে উভয়পক্ষকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে বাড়িতে ফিরে যেতে বলেন চেয়ারম্যান আছাদুল হক। কিন্তু শালিসের উত্তেজনাকর পরিস্থিতিকে রঙচঙ মাখিয়ে পরদিন বুধবার দেবহাটা থানায় আমাদের বিরুদ্ধে একটি হয়রানী মুলোক মামলা (নং-০৯) দায়ের করে প্রতিপক্ষ নিমাই সরকার। শালিস থেকে বাড়ি ফিরে দিব্যি ঘুরে বেড়ানো নিমাই সরকার আমাদেরকে ফাঁসাতে মামলার এজাহারে তাকে মারপিটের মিথ্যা অভিযোগ উপস্থাপন করেছেন। তুচ্ছ ঘটনায় একেতো মামলা, তার ওপর সেই রাতেই পুলিশ আমার ভাইপো সুজিত মিস্ত্রী ও প্রতিবেশি নির্মল সরকারকে আটক করে।

তাছাড়া ওই মামলায় আসামী হয়ে বর্তমানে আমিসহ স্থানীয় স্কুল শিক্ষিকা সুষামা সরকার ও আমার অপর প্রতিবেশি রফিকুল সানা বর্তমানে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। নির্মল মিস্ত্রী আরও অভিযোগ করে বলেন, মিথ্যা মামলায় যখন আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি, তখনই রাতের আঁধারে আমার ছেলে সুনীলের বসতঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে প্রতিপক্ষরা। বর্তমানে বন্দোবস্তকৃত জমিসহ বসতভিটা বাঁচাতে এবং হয়রানী মুলোক মামলা থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন