শিপলু জামান, ঝিনাইদহ :
ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ মেন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ফাতেমা প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের কয়েক দিনের মাথায় মৃত্যু হলো মায়ের।
সরজমিনে ভুক্তভোগীর বাড়ি গিয়ে দেখা যায় , উঠান ভরা মানুষের ভিড়। একপাশে খাটিয়ায় কাফনে পেচানো মায়ের মরদেহ দেহ। যার কোলে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে ১৮ দিন আগে মৃত পাপিয়া খাতুন এর গর্ভে জন্ম নেওয়া ফুটফুটে কন্যা সন্তান আরিফা খাতুন।হতভাগা এই নবজাতক জানেনা চিরদিনের জন্য মমতাময়ী মাকে সে হারিয়ে ফেলেছে। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের আর্তনাদে এ বাড়ির বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ঘিঘাটি গ্রামের মহিদুল ইসলামের মেয়ের সাথে। দিনমজুর বাবা বছর দেড়েক আগে উপজেলার ভাটাডাঙ্গা গ্রামের আরাফাত ইসলামের সাথে তার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন ।বিয়ের কয়েকমাস পরেই সংবাদ আসে পাপিয়া মা হবেন।অনাগত সন্তানকে জন্ম দিতে পাপিয়া খাতুনকে নেওয়া হয় ফাতেমা ক্লিনিকে। ওই ক্লিনিকের আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা ডাক্তার শারমিন আক্তারের অস্ত্র পাচারের মাধ্যমে জন্ম হয় ফুটফুটে কন্যা সন্তানের।অপারেশনের পর থেকেই পাপিয়া খাতুনের পেট ফুলতে থাকে। দিন যতই যায় ততই যেন আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে পাপিপা।অসুস্থতার মাত্রা বেড়ে গেলে প্রথমে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পিলেক্সে এবং পরবর্তীতে সেখান থেকে রেফার্ড করে খুলনা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। খুলনা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ অক্টোবর রাতে পাপিয়া খাতুনের মৃত্যু হয়। ২৩ অক্টোবর দুপুরে বাবার বাড়িতে পাপিয়া খাতুনের নামাজের জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয় ।
পাপিয়া খাতুনের স্বামী আরাফাত ইসলাম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ফাতেমা ক্লিনিকে সিজার করার পর থেকে আমার বউ সুস্থ হয়নি। দুইদিন পর থেকেই আমার বউয়ের পেট ফুলতে থাকে। এসময় ক্লিনিকে যোগাযোগ করা হলে, তারা জানায় রোগীর পেটে গ্যাসের কারণে এরকম হচ্ছে। গ্যাসের জন্য চিকিৎসা করলেও অবস্থার কোন উন্নতি না হলে আমরা খুলনা পর্যন্ত নিয়ে যায় রোগী । খুলনার বড় ডাক্তাররা বলেছে, সিজারের সময় নাড়ি কাটা এবং পেটের মধ্যে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে নাকি রোগীর এই অবস্থা হয়েছে ।
কালিগঞ্জ ফাতেমা প্রাইভেট হাসপাতালের ডাক্তার শারমিন আক্তার পাপিয়া খাতুনের সিজারের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি যখন সিজার করেছি তখন রোগী ভালো ছিল, সব রিপোর্টও ভালো ছিল। পরবর্তীতে রোগীর কি হয়েছে তা আমি বলতে পারবো না ।
কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আলমগীর হোসেন বলেন, ব্যাপারটি আমার জানা ছিল না, খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো ।