হোম খুলনাসাতক্ষীরা কালিগঞ্জে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে কৃষি জমি, জনবসতি এলাকায় চলছে ব্রাদারস ব্রিকস ওরফে সায়েম ইট ভাটার কার্যক্রম ?

কালিগঞ্জে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে কৃষি জমি, জনবসতি এলাকায় চলছে ব্রাদারস ব্রিকস ওরফে সায়েম ইট ভাটার কার্যক্রম ?

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 95 ভিউজ

হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা):

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ কে অমান্য করে জেলা, উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে আইনের গোলক ধাঁধায় ফেলে বহাল তবিয়াদে একাধিক সহিংস মামলার আসামি জামায়াত নেতা আব্দুল ওয়াদুদের ব্রাদার্স ব্রিকস ওরফে সায়েম ইট ভাটার কার্যক্রম কৃষি জমি, জনবসতি এলাকায় চালিয়ে গেলেও দেখার কেউ নাই। সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়াই একেবারে জনবসতি গ্রামের মধ্যে ফসলি, কৃষি জমিতে গড়ে উঠেছে ব্রাদারস ব্রিকস ওরফে সৌদি প্রবাসী আব্দুস সবুরের লিজ নেওয়া সায়েম ইট ভাটা।

ইতোপূর্বে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে একাধিকবার জেল, জরিমানা, ভেঙে গুঁড়িয়ে সিল গালা করে দিলেও পুনরায় আবার বহাল তবিয়াদে কাজ চালিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী। শীতলপুর, বসন্তপুর, ছনকা, গণপতি গ্রামে বসবাসকারী এই অবৈধ ইটভাটায় পোড়ানো টায়ারের বিষাক্ত ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে শিশু, বৃদ্ধ প্রায় সবাই ভুগছে শ্বাসকষ্টে।

একদিকে ধোয়ায় অতিষ্ট গ্রামবাসী, অন্যদিকে কৃষি জমিতে ধান এবং ফলজ গাছের ব্যাপক ভাবে গ্রামের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ইট ভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে পরিবেশ নিষিদ্ধ টায়ারের গুড়া। কয়লার দাম বেশি হওয়ায় রাতের আঁধারে ট্রাক বোঝাই করে জ্বালানি হিসাবে কাঠ ও টায়ারের গুড়া ব্যবহার করা হচ্ছে। যে কারণে গ্রামবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়।

এর কিছু দিন যেতে না যেতেই আবারো কাজ শুরু করায় ২০২৩ সালে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ২ ও ৩ জানুয়ারি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) আজহার আলির নেতৃত্বে সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক শরিফুল ইসলাম ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও মুচলেকা নিয়ে বন্ধ ঘোষণা করে। ওই সময় কালিগঞ্জ উপজেলার শীতলপুর গ্রামের মৃত এলাহী বক্স এর পুত্র জামায়াত নেতা একাধিক সহিংস মামলার আসামি আব্দুল ওয়াদুদ তার ভাই আব্দুস সেলিম ও সামছুল আলম কায়েস উপজেলার শত শত লোকের নিকট থেকে ইট দেওয়ার নাম করে অগ্রিম কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

সময় মত ইট না দিতে পারায় পাওনাদারদের টাকা ফেরত না দিতে পেরে ২০২৩ সালে ছনকা গ্রামের সৌদি প্রবাসী আব্দুস সবুরের নিকট ২ বছরের জন্য অগ্রিম ৫০ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে লিজ দেয়। লিজ নিয়ে কোন প্রকার নিয়ম-নীতি অনুমোদনকে তোয়াক্কা না করে আব্দুস সবুর তার স্ত্রী রিনা পারভিনকে দিয়ে তার পুত্র সায়েমের নামে ইট ভাটার কার্যক্রম শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে গ্রামবাসী আবারো জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।

উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২০২৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আনুমানিক বেলা ১১ টার সময় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজাহার আলীর নেতৃত্বে সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শরিফুল ইসলাম ও থানা পুলিশ সাথে নিয়ে বুল ডোজার দিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে সিলগালা করে বন্ধ করে দেয়। এর প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্টে জনস্বার্থে এলাকাবাসীর পক্ষে জনৈক নুর ইসলামের দায়ের করা রিট পিটিশনের বাঁদিকে মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করে বিজ্ঞ মহামান্য হাইকোর্টের আদালতে হাজির না থাকায় তিন সপ্তাহের জন্য স্থিতি অবস্থা রাখার জন্য এক তরফা ভাবে ২০২৪ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত আদেশ দেন।

বিজ্ঞ মহামান্য হাইকোর্টের দেওয়া উক্ত আদেশ অতিক্রান্ত হওয়ার পরে আর কোন নির্দেশনা না থাকায় কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়া পুনরায় চালু করায় সৌদি প্রবাসীর লিজ নেওয়া সায়েম ইট ভাটার কালো ধোঁয়ায় এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হলেও খোঁজ নেওয়ার কেউ নাই। অবৈধ ব্রাদার্স ব্রিকস ওরফে সায়েম ব্রিক্স নষ্ট করছে গ্রামীন পরিবেশ, কেটে নিচ্ছে কৃষি জমির উপর সয়েল। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। আর ইট ভাটাটি গড়ে উঠেছে উপজেলা প্রশাসনের একেবারে নাকের ডগায়। কালিগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী অতি প্রাচীন পাইকারি বাজার ও হাট নাজিমগঞ্জ হাট নামে পরিচিত। এই ইট ভাটায় মাটিকাটা, ইট বহন, মাটি বহন, কাঠ কয়লা বহনের জন্য ব্যবহৃত হয় অবৈধ ট্রাক্টর, মালবাহী ট্রাক, ড্রাম্পার, ট্রলি। এতে পিস্ট হয়ে পাকা রাস্তাগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

সরকারের কোটি টাকার উন্নয়ন কাজে কোন সুফল বয়ে আনছে না। জনগণের জন্য গ্রামের মধ্যে গড়ে ওঠা এই ইটভাটাটি বন্ধের জন্য গ্রামবাসীর দাবির মুখে প্রতিবছর অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দিলে ও সু চতুর ভাটা মালিক পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকায় এবং লোকালয়ে জনবসতি এলাকায় প্রতিস্থাপনের জন্য লিখিত অঙ্গীকার নামার স্বাক্ষর করে পুনরায় মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিটের বদৌলতে এই ভাবে বছরের পর বছর আবার অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে আসছে। তবে এ প্রসঙ্গে ব্রাদারস ব্রিকস এর মালিক আব্দুল ওয়াদুদ ওরফে বাবলুর এর মুঠোফোনে বার বার ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

তবে তার ভাই আব্দুস সেলিমের মোবাইলে কথা বললে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ভাটার কাগজ পত্রের ব্যাপারে লিজ গ্রহীতা সৌদি প্রবাসী আব্দুস সবুর বলতে পারবেন আমার কিছু জানা নাই। লীজ গ্রহীতা বর্তমান সায়েম ব্রিক্স এর মালিক সৌদি প্রবাসী আব্দুল সবুরের স্ত্রী রিনা খাতুন এর নিকট জানতে চাইলে তিনি তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

সাতক্ষীরা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শরিফুল ইসলামের নিকট মহামান্য হাইকোর্টের ৩ মাসের স্থিতি অবস্থার আদেশের পরে আর কোন নতুন আদেশ আছে কিনা জানতে চাইলে গত ৩ দিন ধরে তিনি তার কোন সঠিক জবাব দিতে পারে নাই। তবে তার বৈধ কোন কাগজ পত্র নাই বলে সাংবাদিকদের জানান।

এ ব্যাপারে আরো সত্যতা জানার জন্য উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনের (ভূমি) আজাহার আলীর নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, হাইকোর্টের দেওয়া ৩ মাসের স্থিতি অবস্থার আদেশের পর আর কোন কাগজ পত্র আমার কাছে নাই। অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট কথা বলেন। আমি নির্দেশ পেলে অভিযান পরিচালনা করবো।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর দাসের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি নতুন এসেছি এই ভাটা সম্পর্কে আবার কিছু জানা নাই যদি আপনাদের কাছে এই ধরনের কোন কাগজ পত্র থাকে তাহলে আমার অফিসে দেখান আমি বিষয়টির ব্যবস্থা নেবো।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন