বাণিজ্য ডেস্ক:
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পণ্য পরিবহন, সংরক্ষণ ও গুণগত মান বজায় রেখে স্বল্প সময়ে ও সাশ্রয়ী মূল্যে সেটি ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিতে আধুনিক ও মানসম্মত লজিস্টিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। এছাড়া প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাজারে টিকে থাকতে আমদানি-রফতানি সহজ করার ক্ষেত্রে লজিস্টিক খাতের উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শনিবার (২ মার্চ) ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে এসব কথা বলেন লজিস্টিক খাতের উদ্যোক্তারা।
ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের দক্ষ লজিস্টিকস খাতের উন্নয়ন করতেই হবে। নতুবা আমরা বিশ্ব প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাব। শিল্পনীতির আলোকে ২১ টি উপখাতে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
জাতীয় লজিস্টিকস উন্নয়ন নীতি ২০২৪ এর খসড়ার ওপর আলোচনায় তিনি বলেন, আগামীতে দক্ষ লজিস্টিকস সেবা খাতের উন্নয়নে আকাশ পথ, সড়ক ও রেল যোগাযোগের পাশাপাশি নৌপথে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। ব্যবসার খরচ কমাতে এবং ইজ অব ডুয়িং বিজনেসের জন্য এক জায়গা থেকে সকল ধরনের লাইসেন্স প্রাপ্তি এবং নবায়ন ও অটোমেশন করতে হবে।
এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, লজিস্টিক খাতের উন্নয়নে সরকার কাজ করছে। যথাযথ আইন ও বিধিবিধান মেনে এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।
কমিটির ডিরেক্টর ইনচার্জ সৈয়দ মোহাম্মদ বখতিয়ার বলেন, পণ্যের সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখা এবং পণ্য উৎপাদন থেকে ভোক্তার কাছে যতটা দ্রুত পৌছানো যায়, ব্যবসার খরচ ততটা কমে। পণ্যের দামও কমে। ২০৪১ সালে আমাদের উন্নত দেশ গড়তে হলে পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ কমাতে হবে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সড়ক ও রেল যোগাযোগের বিস্তৃতি, স্থল, নৌ, সমুদ্র ও বিমানবন্দর এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নের ফলে লজিস্টিক খাতের প্রাথমিক অবকাঠামোগত সক্ষমতা অর্জিত হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের ভিশন ২০৪১ এর প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০২১ সালের তুলনায় ২০৪১ সালে বিভিন্ন নির্দেশক যেমন প্যাসেঞ্জার ট্রাফিক ২৯ গুণ, ফ্রেইট ট্রাফিক ১০ গুণ, পোর্ট কন্টেইনার ট্রাফিক ১৩ গুণ, সমুদ্রগামী কার্গো ট্রাফিক ২২ গুন বৃদ্ধি পাবে। তাই লজিস্টিক খাতের উন্নয়নে এখনই সবাইকে প্রস্তুত হতে হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করা স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ও কুরিয়ার সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি হাফিজুর রহমান পুলক বলেন, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, মিরপুরসহ দেশের বেশকিছু স্থানে হাব তৈরি করা গেলে লজিস্টিক খাতের গাড়িগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রাখা যাবে এবং কম সময়ে পণ্য পরিবহনে সহায়ক হবে।
উম্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে উদ্যোক্তারা আরও বলেন, লজিস্টিক খাত সরবরাহ শৃঙ্খলের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার কাছে পৌছে দিয়ে অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে এ খাত। কিন্তু প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ এ খাতে এখনও অনেক পিছিয়ে। এ খাতে সবাইকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
এসময় হাব নির্মাণের জন্য পাট ও রেল মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অব্যবহৃত জমিতে সরকারনির্ধারিত হারে জমি পাওয়া, লজিস্টিক খাতে পরিবহন চালকদের প্রশিক্ষণ, লাইসেন্স সহজীকরণ, ক্রসবর্ডার ই-কমার্স ইত্যাদি সুবিধা চান ব্যবসায়ীরা। এছাড়া শিল্পনীতি ২০২২ এ উল্লেখিত লজিস্টিক খাতের ২১ টি উপখাত যেমন, সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ সেবা, এভিয়েশন সেবা, সমুদ্র বন্দর সেবা, তথ্য ও প্রযুক্তিগত লজিস্টিক সেবা, ফাইনান্সিয়াল লজিস্টিক সেবা, ইকমার্স লজিস্টিক সেবা ইত্যাদির সঠিক বাস্তবায়ন চান তারা।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইর পরিচালক হাফেজ হাজী হারুন অর রশীদ, ইসহাকুল ইসলাম সুইট, মহাসচিব মো. আলমগীর প্রমুখ।