অনলাইন ডেস্ক:
প্রতিপক্ষের হামলায় আহত বন্ধুকে ঢাকা থেকে দেখতে গিয়ে খুন হয়েছেন সোহাগ আলী নামে (২৪) এক যুবক। শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাতে উপজেলার ঝিকড়া ইউনিয়নে মরুগ্রাম ডাঙ্গাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সোহাগ আলীর বাড়ি যশোরের মনিরামপুর উপজেলায়। তিনি আহত বন্ধু মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন।
স্থানীয়রা জানান, বাগমারার ঝিকড়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা কৃষক লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলামের সঙ্গে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছিল। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নজরুল স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং আসাদুল দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়। এরই মধ্যে সপ্তাহখানেক আগে ছুটিতে ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরেন নজরুল ইসলামের ভাতিজা মনোয়ার হোসেন। মনোয়ার শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে নজরুলের লিজ নেওয়া পুকুর পাড়ে নিজেদের সরিষা ক্ষেতে যান।
এ সময় প্রতিপক্ষ আসাদুল ইসলামের লোকজন মনোয়ারের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তারা মনোয়ারকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেয়। এ সময় মারামারিতে আসাদুলের পক্ষের মুসলেম নামে এক ব্যক্তিও আহত হয়। পরে মনোয়ারকে উদ্ধার করে নওগাঁর আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে পরিবারের লোকজন। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে দিনভর উত্তেজনা চলছিল।
এদিকে, মনোয়ারের ওপর হামলা ও আহত হওয়ার খবর পেয়ে তাকে দেখতে ঢাকা থেকে আসেন তার চাচাতো ভাই ইমরান এবং সহকর্মী সোহাগ ও রনি। তারা ঢাকা থেকে এসে প্রথমে সন্ধ্যায় আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মনোয়ারকে দেখতে যান। এরপর রাত ৯টার দিকে আত্রাই থেকে একটি সিএনজি নিয়ে ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে মনোয়ারের বাড়িতে যান। তারা এলাকায় গেলে গ্রামে বহিরাগত সন্ত্রাসী ভাড়া করে নিয়ে আনা হয়েছে বলে প্রচার চালায় আসাদুল ইসলামের লোকজন। এ নিয়ে গ্রামে আবারও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। আসাদুলের লোকজন ডাঙ্গাপাড়া মোড়ে তাদের ওপর হামলা করে। এ সময় তারা সিএনজি চালকসহ তিনজনকে ঘিরে রাখে। তবে সেখান থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে সোহাগকে মাঠের মধ্যে ধরে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম বলেন, ভোটের দিন বিকেলে আমার ছোট ভাই সুজনকে মারদর করে আসাদুল ইসলামের লোকজন। আমি ইজারা নিয়ে দুটি খাস পুকুরে মাছ চাষ করি। ভোটের পরের দিন আসাদুল নিজে আমাকে ওই দুই পুকুরে যেতে নিষেধ করে দিয়েছে এবং মাছ মেরে বিক্রি করে দেয়। গত ২৬ জানুয়ারি আমার আরেক ভাই নুরুল ইসলামের সেচ মেশিন বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে ওই দিন থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এরপরই আমার ভাতিজার বন্ধুকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হলো।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও আসাদুলকে পাওয়া যায়নি। একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও বাগমারা থানার ওসি অরবিন্দ সরকারও ফোন ধরেননি।
রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) রফিকুল আলম বলেন, খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পুলিশ যায় এবং স্থানীয় লোকজনের রোষানল থেকে এক সিএনজি চালকসহ তিনজনকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নেয়। তবে এর আগেই মাঠের মধ্যে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। নিহত সোহাগসহ তারা রাতে কেন গ্রামে এলো এবং সেখানে কী ঘটেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলার প্রক্রিয়া চলছে।