হোম Uncategorizedবাংলাদেশ আশাশুনিতে জলাবদ্ধতার কবলে ধান চাষীরা

আশাশুনিতে জলাবদ্ধতার কবলে ধান চাষীরা

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 128 ভিউজ

আশাশুনিতে জলাবদ্ধতার কবলে ধান চাষীরা
চন্দন চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধি  : কয়েক বিঘা জমিতে ধান লাগাতেন সাতক্ষীরার বিধবা যমুনা দাসী। বছরে একবার সেই ফসল তুলতেন। পরে তা বিক্রি করে সংসারের খরচ চালাতেন। এভাবেই চলছিলো তার জীবন। কিন্তু কয়েক বছর যাবত তার সেই জমিতে ফসল হয় না। জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে হারিয়েছেন তার প্রধান জীবিকা কৃষি। এখন তিনি দিনমজুর খাটেন, দিনে পান মাত্র ২’শ টাকা। তার দুটি ছেলে রয়েছে। তাদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। এভাবেই তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
শুধু যমুন দাসী নয়, একই এলাকার ললিতা মন্ডল, রিতা রানী মন্ডল, ঝর্না বাছাড়, শেফালী মন্ডল সহ অনেকেই এই পথ বেছে নিয়েছেন। বাধ্য হয়েই তাদের পূর্বপুরুষের পেশা কৃষিকাজকে বিদায় জানাতে হয়েছে। ফলে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন তারা।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ফটিকখালী গ্রামে চেউটিয়া নদীতে বাঁধ দেয়া ও স্লুইসগেট নির্মান না করার ফলে জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার বিঘা কৃষি জমি। এসব জমিতে প্রতিবছর বিপুল পরিমান খাদ্যশস্য উৎপাদন হতো যা দিয়ে সাতক্ষীরা সহ এর পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোর চাহিদা মিটতো। চেউটিয়া নদীটি মাছ চাষের জন্য ইজারা দেওয়ায় সেখানে আড়াআড়িভাবে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ফলে বর্ষাকালে এসব আবাদি জমির পানি এই নদী দিয়ে নিষ্কাশিত হতে পারছে না।
অন্যদিকে নদীতে চিংড়ী চাষের জন্য ইচ্ছামতো লবনাক্ত পানি প্রবেশ করাচ্ছেন ইজারা গ্রহীতারা। সেই লবনাক্ত পানি ফসলি জমির ক্ষতি করছে। স্থানীয়রা বলছেন, নদীটি উন্মুক্ত করে বিলের পানি সরে যেতে দিলেই জলাবদ্ধতা নিরসন হবে।
এই ব্যাপারে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, চেউটিয়া নদীর একপ্রান্তে খোলপেটুয়া নদী ও অপর প্রান্তে কপোতাক্ষ নদ। এদের মধ্যে কপোতাক্ষ নদের অবস্থা খুব খারাপ। পলি জমে ভরাট হয়েছে কপোতাক্ষ। ফলে সেখানেও পানি নিষ্কাশনের সুযোগ নেই।
অন্যদিকে চেউটিয়া নদীর সাথে খোলপেটুয়া নদীর সংযোগস্থলেও সমস্যা রয়েছে। আড়াআড়ি বাঁধের কারনে সেখানে পানিপ্রবাহ নেই। এর ফলে নদী থেকে খালে পরিনত হয়েছে চেউটিয়া !
সরেজমিনে গিয়ে আরও জানা যায়, খাজরা ও বড়দল ইউনিয়নের সীমানায় অবস্থিত কালকি নামক স্লুইসগেটটি বন্ধ থাকায় চেউটিয়া নদীর পানি বের হতে পারছে না। নদীতে আড়াআড়িভাবে বাঁধ ও নেটপাটা দিয়ে চিংড়ী চাষ করার ফলে পলি জমে নদীটি প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। ফলে এর উদ্বৃত্ত লবনাক্ত পানি চলে যাচ্ছে আবাদি জমিতে। নেটপাটা ও বাঁধের কারনে পলি জমে চেউটিয়া নদী হারিয়েছে তার পানিধারন ক্ষমতা।
এ ব্যাপারে স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শিবপদ মন্ডল বলেন, আবাদি এসব জমিতে ধান না হওয়ায় এতে কৃষকরা গরুছাগল চরাচ্ছেন। অনেকেই গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। এতে ফসল না হলে ভূমিদস্যুরা লাভবান হবে কারন অনেক জমির মালিকই তা কম মূল্যে বিক্রয় করে দিচ্ছেন।
ফটিকখালী গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, নদীটি সরকারিভাবে ইজারা দিলেও নদীর মাঝখানে আড়াআড়িভাবে বাঁধ ও নেটপাটা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু স্থানীয় ইজারা গ্রহীতারা বলপূর্বক তা করে চলেছেন। এতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নষ্ট হয়েছে। জলাবদ্ধ হয়ে চলেছে কৃষিজমি।
গত বৃহস্পতিবার স্থানটি পরিদর্শনে এসেছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) কাজী আরিফুর রহমান। তখন তিনি বাঁধ ও নেটপাটা দেওয়ার বিষয়টি সবার সামনে পরিষ্কার করেন। ভুক্তভোগীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইজারা নিলেও নদীর মাঝখানে বাঁধ দেওয়া যাবে না।
খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম বলেন, সেচের মাধ্যমে খাজরা বাজার ও কাটাখালিতে পাইপ স্থাপন করে পানি নিষ্কাশন করা হবে। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম তবুও এভাবে আস্তে আস্তে ভারসাম্য ঠিক করা হবে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. আফম রুহুল হক, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ডিসি সাহেবের সাথে কথা বলে আমরা এই বিকল্প পথ বেছে নিয়েছি। এছাড়া বামুনডাঙা ও কালকি নামক স্থানে স্লুইসগেট বসিয়ে তদারকি করতে হবে। পানি বেশী হয়ে গেলে ছাড়তে হবে। উল্টোদিক থেকে পানি গেলেও একই পদ্ধতিতে কাজ করা হবে। আর এটি সবসময় পর্যবেক্ষন করার জন্য এডিসি কাজী আরিফুর রহমানকে জনবল নিয়োগের অনুরোধ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বামুনডাঙা সহ কয়েকটি স্থানে খাল খননের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। সংসদ সদস্য ডা. আফম রুহুল হক পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে পানি সম্পদ মন্ত্রীর কাছে এ ব্যাপারে ডিও লেটার প্রদান করেছেন। এটি সম্ভব হলে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হওয়া যাবে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) কাজী আরিফুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আমাকে বিষয়টি অবহিত করেছেন। এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। স্থানীয়দের দাবি তারা যেন ফসল ফলাতে পারেন। এটি আসলে সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হওয়ায় আপাতত অস্থায়ীভাবে এটি সমাধান করা হবে। এজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে স্বল্পমেয়াদে ও দীর্ঘমেয়াদে কিভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় তার মাস্টারপ্ল্যান করা হবে। এখানে কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা আছে। যেমন ভৌগলিক কারনে এই এলাকার মাটি উঁচু এবং নিচু। এটাই সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি আরও বলেন, চেউটিয়া নদীর ইজারা বাতিল করলে এখানে যে মাছ উৎপাদন হতো সেটা হবে না। এজন্য কিভাবে একইসাথে মাছও চাষ করা যায় আবার পানিও নিষ্কাশন করা যায় তা আলোচনার মাধ্যমে বের করতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।

 

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন