হোম জাতীয় অর্থ আত্মসাৎ: গ্রেফতারের পরদিনই জামিন পেলেন ট্রান্সকমের ৫ কর্মকর্তা

অর্থ আত্মসাৎ: গ্রেফতারের পরদিনই জামিন পেলেন ট্রান্সকমের ৫ কর্মকর্তা

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 73 ভিউজ

জাতীয় ডেস্ক:

শেয়ার জালিয়াতি ও স্থায়ী আমানতের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় গ্রেফতারের একদিন পরই ৩ হাজার টাকা বন্ডে জামিন পেয়েছেন ট্রান্সকম গ্রুপের পাঁচ কর্মকর্তা।

শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের বিচারক শান্তা আক্তার তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

এর আগে আসামি পক্ষের আইনজীবী পাঁচজনের জামিন আবেদন করেন। বিপরীতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) একজনের পাঁচদিন ও বাকি চারজনের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। তবে আদালত শুনানি শেষে পাঁচজনেরই জামিন মঞ্জুর করেন।

জানা যায়, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানের শেয়ার জালিয়াতির পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংকে তার রেখে যাওয়া স্থায়ী আমানতের অর্থ আত্মসাৎ এবং জাল দলির সৃজন করার অভিযোগ তোলেন মেজ মেয়ে শাযরেহ হক। এ ঘটনায় তিনি ট্রান্সকমের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের স্ত্রী শাহনাজ রহমান, সিইও সিমিন হোসেনসহ প্রতিষ্ঠানটির ১৫ জনকে আসামি করে তিনটি মামলা করেন।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান থানায় মামলা তিনটি নথিভুক্ত হয়। এতে ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের পাশাপাশি হস্তান্তর দলিল সৃজন করে ট্রান্সকমের শেয়ার জালিয়াতির অভিযোগ তোলা হয়। এসব অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির দুই পরিচালকসহ পাঁচজন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

তারা হলেন- প্রতিষ্ঠানের আইন উপদেষ্টা ফখরুজ্জামান ভূঁইয়া, পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) কামরুল হাসান, পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) আব্দুল্লাহ আল মামুন, ম্যানেজার আবু ইউসুফ মো. সিদ্দিক এবং সহ কোম্পানি সেক্রেটারি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক।

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলে শাযরেহ হক মামলায় এক নম্বর আসামি করেছেন ট্রান্সকম লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহনাজ রহমানকে। দুই নম্বর আসামি করেছেন লতিফুর রহমানের বড় মেয়ে এবং ট্রান্সকম গ্রুপের সিইও সিমিন রহমানকে। পরিবারের এই দুই সদস্যের বাইরে ট্রান্সকমের করপোরেট অ্যাফেয়ারস (আইন) বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মো ফখরুজ্জামান ভুঁইয়া, পরিচালক (কোম্পানির সাবেক সেক্রেটারি) মো. কামরুল হাসান এবং পরিচালক (কর্পোরেট ফাইন্যান্স) আবদুল্লাহ আল মামুন।

শেয়ার জালিয়াতির অভিযোগে করা মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে লতিফুর রহমানের বড় মেয়ে সিমিন রহমানকে। এরপর যথাক্রমে ট্রান্সকমের করপোরেট অ্যাফেয়ারস (আইন) বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মো ফখরুজ্জামান ভুঁইয়া, অ্যাসিসট্যান্ট কোম্পানি সেক্রেটারি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক এবং কোম্পানি সেক্রেটারি অফিসের ম্যানেজার আবু ইউসুফ মো. সিদ্দিক। আর জাল ডিড অব সেটেলম্যান্ট তৈরির অভিযোগে করা মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানের সিইও সিমিন রহমানকে। দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে ট্রান্সকমের চেয়ারম্যান শাহনাজ রহমানকে। এছাড়া এই মামলায় মো ফখরুজ্জামান ভূঁইয়া, মো. কামরুল হাসান এবং সিমিন রহমানের সন্তান যারাইফ আয়াত হোসেনকেও আসামি করা হয়েছে।

লতিফুর রহমানের মেজ মেয়ে অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকা অবস্থায় ২০২০ সালের ১ জুলাই কুমিল্লায় মারা যান তার বাবা। জীবিত থাকা অবস্থায় প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন ঢাকা, এইচএসবিসি ঢাকা, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকে প্রায় একশ কোটি টাকা রেখে মারা যান লতিফুর রহমান। শাযরেহসহ অন্য ওয়ারিশরা তাদের বাবার রেখে যাওয়া একশ কোটি টাকার মুসলিম শরিয়া আইন অনুযায়ী হকদার। কিন্তু লতিফুর রহমানের স্ত্রী এবং বড় মেয়ে নিজেদের মধ্যে আত্মসাৎ করা অর্থ ভাগাভাগি করে নেন।

জালিয়াতির মামলা শাযরেহ হক বলেছেন, ‘আমার বাবা লতিফুর রহমান তার জীবদ্দশায় ট্রান্সকম লিমিটেডের ২৩ হাজার ৬০০টি শেয়ারের মালিক থাকা অবস্থায় মারা যান। তার ২৩ হাজার ৬০০টি শেয়ার থেকে আমাকে এবং আমার ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে বঞ্চিত করার জন্য অবৈধভাবে নিজের নামে বেশি শেয়ার ট্রান্সফার করে হস্তগত করার হীন অসৎ উদ্দেশ্য গ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে সিমিন রহমান ট্রান্সকম লিমিটেডের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স নির্বাহী পরিচালক মো. ফখরুজ্জামান ভুঁইয়া, ট্রান্সকম লিমিটেডের করপোরেট ফাইন্যান্স পরিচালক (কোম্পানির সাবেক সচিব) মো. কামরুল হাসান, ট্রান্সকম লিমিটেডের বর্তমান অ্যাসিসট্যান্ট কোম্পানি সেক্রেটারি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক, ট্রান্সকম লিমিটেডের বর্তমান সাং-ম্যানেজার, কোম্পানি সেক্রেটারি অফিস আবু ইউসুফ মো. সিদ্দিকের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা নেন।’

মামলার নথিতে বলা হয়, ‘এভাবে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল হস্তান্তরসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ শেয়ার ট্রান্সফারের বিভিন্ন কাগজপত্র আমার এবং আমার ভাইয়ের অজ্ঞাতসারে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে সৃজন করেন। আমার বাবার মৃত্যুর পর নিজের অ্যাকাউন্টে টাকাগুলো সরিয়ে ফেলেন।’

সই জাল করে দলিল সৃজন করার অভিযোগ তুলে মামলার এজাহারে শাযরেহ হক অভিযোগ করেন, ‘বাবার মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং চেয়ারম্যান ট্র্যান্সকম গ্রুপের শেয়ার এবং পজিশন নিজেদের অনুকূলে হস্তগত করার উদ্দেশ্যে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে একটি ডিড অব সেটেলমেন্ট তৈরি করেন। যেখানে বাবা ও ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানের স্বাক্ষর জাল করে আসামিরা নিজেরাই স্বাক্ষর করেন। তারা আমার দুই ছেলে যোহেব আসরার হক এবং মিকাইল ইমান হকের স্বাক্ষরও জাল করে নিজেরাই ডিড অব সেটেলমেন্টে সই করেন।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন