অনলাইন ডেস্ক :
সাত বছর ধরে অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালান মাইনুরুজ্জামান সেন্টু। এখন তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক)। গত রোববার রাতে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তাকে হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১২ নম্বর বেডে রেখে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের আওতায় রাখা হয়েছে। গত দেড় মাসে ব্যক্তিগত খরচে কেনা অক্সিজেন সংকটে পড়ে তিনবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।
৫৫ বছর বয়সী মাইনুরুজ্জামান সেন্টু রাজশাহী নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের হেতমখাঁ কলাবাগান এলাকায় স্ত্রীসহ ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন। তিন সন্তানের এই জনক এখন অসহায় জীবনযাপন করছেন। দুই মেয়ে ও এক ছেলে বিয়ের পর থেকে নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ফলে, ফুসফুসের সমস্যা নিয়ে স্ত্রী ও নিজের যাবতীয় খরচ মেটানোর ব্যবস্থা করতে হয় নিজেকে। আর তাই চালাতে হয় রিকশা।
জানা গেছে, নগরীতে আগে সেন্টুর ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান ছিল। ২০১৫ সালের দিকে তার শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ধরা পড়ে। এরপর খাবার দোকান বন্ধ করে দেন তিনি। ২০১৬ সালে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ৮০ হাজার টাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা কেনেন। সেই রিকশা চালাতে শুরু করেন সেন্টু। শুরুতে সমস্যা না হলেও পরে শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। বেড়ে যায় ওষুধের ব্যয়। ফলে, রিকশা চালানো ছাড়তে পারেন না তিনি। রোজগারের জন্য রিকশায় সিলিন্ডার লাগিয়ে সেখান থেকে নাকে অক্সিজেনের পাইপ টেনে পথে নামতে হয়।
জানা গেছে, চিকিৎসার জন্য সেন্টুকে প্রতিদিন ব্যয় করতে হয় ৬০০ টাকা। তিনি যখন রিকশা চালান, তখন হ্যান্ডেলের সঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার বাঁধা থাকে। সেই সিলিন্ডার থেকে একটি নল চলে গেছে সেন্টুর নাকের কাছে। এভাবেই অক্সিজেন নিয়ে ২০১৬ সাল থেকে রিকশা চালিয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছেন।
সেন্টুর স্ত্রী চম্পা বেগম জানান, তার স্বামীর আগে যক্ষা রোগ ছিল। চিকিৎসা করে সে রোগ সেরে গেলেও ফুসফুসের সমস্যা পুরোপুরি যায়নি। সাত বছর থেকে তার স্বামীর শ্বাসকষ্টের এই রোগ। তিন বছর ধরে বেড়েছে রোগের তীব্রতা। গত পাঁচ মাস ধরে প্রতিদিন তিনটি করে অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগে তার।
চম্পা বেগম আরও জানান, প্রতিদিনের অক্সিজেন কিনতে খুব কষ্ট হয় তাদের। বর্তমানে তাদের দুটি অক্সিজেনের সিলিন্ডার আছে। যার মধ্যে একটি তার মামা শ্বশুর ও অন্যটি এলাকার মানুষজন কিনে দিয়েছে। এতে করে সিলিন্ডার কিনতে হয় না। কিন্তু, প্রতিদিনের অক্সিজেন কিনতে হয়।
রামেক হাসপাতালে কথা হয় চিকিৎসাধীন সেন্টুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অক্সিজেন পাইপ (নল) খুললে খুব সমস্যা হয়। পাইপ খুললে আমি কথাই বলতে পারি না। যতক্ষণ অক্সিজেন চলে, ততক্ষণ ভালো থাকি। প্রতিদিন তিনটি করে অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগে। এই অক্সিজেনের টাকা কীভাবে জোগাড় করি, তা বলার ভাষা নেই।’