হোম অন্যান্যসারাদেশ মণিরামপুরে যুবদলের ফরম বিতরণ নিয়ে গ্রুপিং গোলকধাঁধায় পদপ্রত্যাশিরা

মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি :

জাতীয়তাবাদী যুবদলকে শক্তিশালী করতে তৃণমূল পর্যায়ে শুরু হয়েছে তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ কর্মসূচি। ইতিমধ্যে মণিরামপুর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে ৫ পদের বিপরীতে দু’টি গ্রুপে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ফরম বিতরণের কাজ শুরু করেছে। তবে, প্রকাশ্যে দুটি গ্রæপের আলাদা স্থানে তথ্য ফরম বিতরণে কারনে রীতিমত বিপাকে পড়েছেন পদপ্রত্যাশিরা। এ

কটি পক্ষ অন্যপক্ষকে দায়ী করে ইতিপূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ পাল্টাপাল্টি পোস্টও করেছে। যা নিয়ে জেলা কমিটিও বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। সবমিলে যুবদলের রাজনীতিতে হতাশায় ভূগছেন পদপ্রত্যাশিরা। গেলো ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের প্রধান কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে যশোর জেলার অর্ন্তগত ১৬টি ইউনিটে আহবায়ক কমিটির নাম ঘোষনা করা হয়। এরমধ্য মণিরামপুর উপজেলা যুবদলের আহবায়ক হিসেবে মোতাহারুল ইসলাম রিয়াদ, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোক্তার হোসেন, যুগ্ম আহবায়ক : ফরহাদ হোসেন, সদস্য সচিব পদে সাইদুল ইসলামের নাম উল্লেখ করা হয়। একই সাথে পৌর শাখার আহবায়ক আব্বাস আলী এবং সদস্য সচিব পদে বিল্লাল হোসাইনের নাম প্রকাশিত হয়।

পরবর্তী ৬ অক্টোবর মণিরামপুর উপজেলা যুবদলের ৪৪ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি অনুমোদন দেন যশোর জেলা যুবদলের সভাপতি তমাল আহম্মেদ এবং সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক রানা। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আহবায়ক, সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক এবং সদস্য সচিবের সম্মিলিত স্বাক্ষরে ইউনিট কমিটি অনুমোদন দেয়া হবে বলে নোটে উল্লেখ থাকে।চলতি বছরের পহেলা এপ্রিল জেলা বিএনপির কার্যালয়ে তৃণমূল পর্যায়ে দলকে গতিশীল ও সুসংগঠিত করতে যশোরের অন্তভূক্ত বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর শাখার তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপিকা নার্গিস বেগম।

অনুষ্ঠানে যুবদলের সভাপতি-সম্পাদক বক্তৃতাকালে মৌখিকভাবে ইউনিট কমিটি (সুপার ফাইভ) গঠনের জন্য ফরম বিতরণ, জমাদান এবং যাচাই-বাছাই কাজ ঈদের আগে শেষ করতে নির্দেশ দেন। একই সাথে উপজেলা যুবদলের স্থায়ী/অস্থায়ী কার্যালয় থেকে তথ্য ফরম বিতরণ করতে বলা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৩ এপ্রিল মণিরামপুর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মোতাহারুল ইসলাম রিয়াদ ও সদস্য সচিব সাইদুল ইসলাম।

পৌরশহরের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন যুবদলের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে এ কর্মসূচীর যাত্রা শুরু হয়। অবশ্য, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি একই কমিটির অন্যতম সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক মোক্তার হোসনকে। তিনি পরদিন বুধবার বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় থেকে ফরম বিতরণ শুরু করেন। এখান থেকেই বিভক্তি সৃষ্টি হয় বলে জানা যায়। তবে, কমিটি গঠনকল্পে একই যুবদলের কার্যালয় থেকে তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করার কথা থাকলেও দলীয় কোন্দলে ফরম বিতরণ হচ্ছে আলাদা আলাদা স্থানে।

এ কারণে ১৭টি ইউনিয়নের যুবদলের ফরম নিতে বিপাকে পড়ছেন পদপ্রত্যাশিরা। শুধু ইউনিয়ন কমিটি তথ্য ফরম নয়, একই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে জাতীয়তাবাদী যুবদল পৌর শাখার ক্ষেত্রেও। গত বুধবার পৌরসভার তাহেরপুরস্থ কফি হাউজে পৌর শাখার আহবায়ক ও সদস্য সচিব তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণের উদ্বোধন করেন। কিন্তু পরবর্তী আহবায়ক আব্বাস উদ্দীন তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করছেন বিএনপি অস্থায়ী কার্যালয় থেকে এবং সদস্য সচিব বিল্লাল হোসাইন যুবদলের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে বিতরণ কার্য করেছেন। যা চলমান রয়েছে। মজার বিষয় হলো, পদপ্রত্যাশিরা কোথা থেকে ফরম সংগ্রহ করবে বিএনপি কার্যালয় না-কি যুবদলের কার্যালয়?

এনিয়ে রীতিমতো গোলকধাঁধায় পড়েছেন যুবদলের পদপ্রত্যাশিরা। নাম প্রকাশ না করা শর্তে যুবদলের এক নেতা বলেন, জেলা যুবদলের দু’শীর্ষ নেতার ইশারায় মণিরামপুরে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ফরম বিতরণ কার্যক্রম চালাচ্ছে থানা ও পৌর যুবদলের নেতৃবৃন্দ। যার ফলস্বরূপ কমিটি গঠনের শেষে অযোগ্য নেতৃত্ব দেখা মিলবে বলে তিনি দাবী করেন। এ ব্যাপারে উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মোতাহারুল ইসলাম রিয়াদ বলেন, জেলা নেতৃবৃন্দের নির্দেশে যুবদলের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে ফরম বিতরণ করা হচ্ছে।যুবদলের সদস্য সচিব সাইদুল ইসলাম বলেন, আলোচনায় বসে সম্মিলিতভাবে ফরম বিতরণ করতে রাজি হননি সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক মোক্তার হোসেন।

আলাদা ভাবে ফরম বিতরণের বিষয়টি জেলা নেতৃবৃন্দকে জানানো হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক মোক্তার হোসেন বলেন, জেলা নেতৃবৃন্দের পরার্মশে বিএনপি কার্যালয় থেকে ফরম বিতরণ করছি। মণিরামপুর পৌর যুবদলের আহবায়ক আব্বাস উদ্দিন বলেন, পৌরসভার তাহেরপুরস্থ যুবদলের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে ৯ ওয়ার্ডের যুবদলের ফরম বিতরণ করা হচ্ছে। এদিকে পৌর যুবদলের সদস্য সচিব বিল্লাল হোসাইন বলেন, একটি কফি হাউজ কিভাবে পৌর যুবদলের কার্যালয় হলো সেটা আমার বোধগম্য নয়। জেলা যুবদলের সভাপতি তমাল আহম্মেদ বলেন, জেলা থেকে সম্মিলিতভাবে ফরম বিতরণের কাজ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী থানা যুবদলের আহবায়ক, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও সদস্য সচিবের স্বাক্ষরিত ক্ষমতা রয়েছে। যেহেতু মণিরামপুরে যুবদলের তথ্য সংগ্রহ ফরম আলাদা ভাবে বিতরণ চলছে, সেক্ষেত্রে যাচাই-বাচাই শেষে তিনজনের সম্বনয়ে স্বাক্ষর করে নেয়া হবে। তবে মূল কথা হলো, দলকে সুসংগঠিত করতে সকলকে ঐক্যবন্ধভাবে কাজ করতে হবে।

জেলা যুবদলের সাধারন সম্পাদক আনছারুল হক রানা বলেন, চলতি মাসের ৭ এপ্রিল জেলা বিএনপির কার্যালয়ে যুবদলের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতে মণিরামপর থানা ও পৌর যুবদলের আহবায়ক, সদস্য সচিব ও সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আলোচনায় বসা হয়। সেখানে দলীয় সিদ্ধান্তনুযায়ী আহবায়ক ও সদস্য সচিব যৌথ স্বাক্ষরিত মণিরামপুরস্থ যুবদলের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে ফরম বিতরণের নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর মণিরামপুর বিএনপি’র শীর্ষ নেতার সুপারিশতে উক্ত ফরমে সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক মোক্তার হোসেন স্বাক্ষর করার অনুমতি দেয়া হয়। তবে, সেক্ষেত্রে যুবদলের কার্যালয় ফরম বিতরণ করতে বলা হয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন