হোম ঢাকা ৩২ নম্বরের বাড়ির বেশির ভাগ অংশই ভাঙা শেষ

৩২ নম্বরের বাড়ির বেশির ভাগ অংশই ভাঙা শেষ

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 13 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক:
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির বড় একটি অংশ ইতোমধ্যে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টায় ক্রেন ও এক্সক্যাভেটর দিয়ে এই ভাঙার কাজ শুরু হয়, যা এখনো চলছে।

জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দেশ থেকে পলায়নের ছয়মাস পূর্ণ হয়েছে বুধবার। আওয়ামী লীগ ঘোষণা দেয়, এদিন রাতে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন হাসিনা। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ছাত্র-জনতা।

প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, হাসিনাকে বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেওয়াকে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ-বিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখি।

পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফেসবুকে আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।

সেই ধারাবাহিকতায় রাত ৮টার পর থেকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে ছাত্র-জনতা জড়ো হতে শুরু করেন। রাত সাড়ে ১০টায় বাড়িটির সামনে একটি ক্রেন নিয়ে আসা হয়, পরে আসে একটি এক্সক্যাভেটর। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল পর্যন্ত বাড়িটির অর্ধেকেরও বেশি ভাঙা হয়েছে।

এর আগে বুধবার রাত ৯টার দিকে ভবনটির তৃতীয় তলায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। দুপুর রাত পর্যন্ত সেই আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। আশপাশের কিছু গাছপালাও পুড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার বিকালে এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও এই ধ্বংসযজ্ঞ চলছে।

ঘটনাস্থলে থাকা গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, একদিকে ভাঙচুর করা হচ্ছে। অন্যদিকে উৎসুক জনতা সেখানে ভিড় করছেন। এই ভাঙার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে না। এতে যে কোনো দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ৩২ নম্বর বাড়ির ডান পাশের ভবনের এক তৃতীয়াংশ ভাঙা হয়েছে। ছাদগুলো অক্ষত আছে। বাড়িটিজুড়ে ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে। শিক্ষার্থীরা হাতুড়ি-শাবল দিয়ে এলোপাতাড়ি পিলার ও দেয়াল ভাঙছেন। তাদের চোখে-মুখে ক্ষোভ ফুটে উঠছে।

বাড়িটির ভবনগুলো এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে, যেকোনো সময় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে পারে। আশপাশে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখা যাচ্ছে না।

বাড়িটি পুরোপুরি গুঁড়িয়ে না দেওয়া পর্যন্ত ওখান থেকে যাবেন না বলে জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ক্ষণে ক্ষণে স্লোগান দিচ্ছেন তারা। শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করারও দাবি জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘ফ্যাসিবাদের’ পিতা বলে আখ্যায়িত করছেন শিক্ষার্থীরা। শফিক হাসান নামের ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বাড়িটি পুরোপুরি ভাঙতে হবে। নাহলে ফ্যাসিবাদকে জিইয়ে রাখা হবে। এটি ভাঙার মাধ্যমে আমরা সবাইকে ফ্যাসিবাদের পরিণতি উপলব্ধি করাতে পারব। আমাদের বিপ্লব যাতে বিঘ্নিত না হয়, যারা শহীদ হয়েছে—তাদের রক্ত যাতে বৃথা না হয়। সেজন্য এই বাড়িটি ভাঙা জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘দেশ, জাতি ও ধর্মের বিরুদ্ধে যারা কাজ করেন, তাদের পরিণতি কী, এই বাড়িটি দেখেই সবাই বুঝতে পারবে। এ থেকে সবাই শিক্ষা নেবে, ভবিষ্যতে দেশ এবং ধর্মের বিরুদ্ধে কেউ কাজ করলে তার সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে—এখান থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।’

শফিক বলেন, ‘আমরা এখানে স্বৈরাচারের চিহ্ন মুছে দিতে এসেছি। তাদের কোনো চিহ্ন রাখা যাবে না।’

বৃহস্পতিবার ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় এক মধ্যবয়সী নারীসহ দুজনকে মরধর করেছেন ছাত্র-জনতা। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে শোরগোল চললেও আশপাশের এলাকা নীরব দেখা গেছে। বাসিন্দারা অন্যত্র চলে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাড়িটি সুরক্ষায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হলেও ঘটনাস্থলে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি স্থানীয় লোকজনও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করছেন।

হাসিনা সরকারের পতনের পর সুসজ্জিত ও সুরক্ষিত বাড়িটিতে গেল ৫ আগস্ট অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বুধবার ব্যাপক ভাঙচুরের পর ভেতরে পোড়ার মত যা কিছু আছে, তাতে ফের আগুন দেওয়া হয়।

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের এই তিনতলা বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টে এই বাড়িতেই সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে তাকে হত্যা করা হয়।

শেখ হাসিনা বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরের জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করেন। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে এবং নাম দেয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন