অনলাইন ডেস্ক:
মাগুরা সদরের কছুন্দি ইউনিয়নের বাজারসংলগ্ন এলাকায় কয়েক দিন আগে একটি স্লুইস গেট ভেঙে পড়ে বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ৫ গ্রামের ১০ হাজার মানুষ। এই স্লুইস গেট দিয়ে প্রতিদিন পার হয়ে স্কুলে যায় শিক্ষার্থীসহ গ্রামের মানুষ। কিন্তু তীব্র পানির চাপে ৩৬ বছরের পুরোনো এই স্লুইস গেট ভেঙে বিপাকে পড়েছেন মানুষ।
স্থানীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক শেখ আইয়ুব আলী বলেন, ‘এটি ৩৬ বছরের একটি পুরোনো স্লুইস গেট। স্লুইস গেট পুরোনো হয়ে যাওয়ায় এর নিচে দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের পানির তীব্র স্রোতে কয়েক দিন আগে ভেঙে পড়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন স্কুলগামী শিক্ষার্থীরাসহ ৫ গ্রামের ১০ হাজার মানুষ। এখন গাছের গুঁড়ি ফেলে প্রতিদিন ঝুঁকিতে পার হচ্ছেন মানুষ।’
খর্দ কছুন্দি গ্রামের জাহিদুল হকসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্লুইস গেট ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। স্লুইস গেট দিয়ে প্রতিদিন সাইকেল, মোটরসাইকেল, ভ্যান, রিকশা, ডামট্রাক পারাপার হতো। খালে এবার বৃষ্টির পানি বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানির চাপে ভেঙে পড়ে যায় স্লুইস গেট। হাজারও পরিবারের চলাচলের স্লুইস গেট হঠাৎ পানির চাপে ভেঙে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন মাগুরা সদর উপজেলার কছুন্দি ইউনিয়নের উলিনগর, খর্দ কছুন্দিসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ।
স্থানীয়দের সহায়তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ঝুঁকি নিয়ে মানুষ পারাপার হলেও, পার হতে পারছে না সাইকেল, মোটরসাইকেল, ভ্যান, রিকশা কিংবা গাড়ি। এই এলাকায় স্কুল-মাদ্রাসা ও বাজার থাকায় একদিকে যেমন পণ্য পরিবহনের সমস্যা হচ্ছে অন্যদিকে ছেলেমেয়েদের স্কুল ও মাদ্রাসায় যেতে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। এমন অবস্থায় রাস্তাটি দ্রুত সংস্কারের দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জুয়াদ হোসেন বলেন, কছুন্দি ইউনিয়নের কছুন্দিবাজার এলাকা দিয়ে তৈরি হয়েছে উলিনগর, খর্দ কছুন্দি এলাকাবাসীর যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা। আর এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া যায় পার্শ্ববর্তী আড়পাড়া, বাগবাড়িয়া, পুখুরিয়া গ্রাম হয়ে আলোকদিয়া বাজার। বিশ্ব রোডসংলগ্ন কছুন্দি বাজারে কেনাকাটাসহ যাবতীয় কার্য সম্পাদন করেন উলিনগর ও খর্দ কছুন্দি এলাকার বাসিন্দারা।
স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী সংযোগ সড়কটির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালের ওপর ১৯৮৭-৮৮ সালের দিকে নির্মাণ করা হয় একটি রেগুলেটর ব্রিজ। বছর তিনেক আগে খালটির পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে পুনর্খনন করা হয়। ব্রিজের নিকট থেকে মাটি খননের ফলে এক বছরের মধ্যে ব্রিজ দেবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। এরপর এলাকাবাসী পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ব্রিজটি মেরামতের দাবি জানালেও বরাদ্দ না পাওয়ায় ব্রিজটি পুনর্র্নিমাণ করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড।
ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ দিয়ে দীর্ঘদিন এলাকাবাসীর চলাচল করলেও গত ১৭ আগস্ট হঠাৎ পানির চাপে ব্রিজসংলগ্ন রাস্তাটি একেবারে ভেঙে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রাস্তার ওই প্রান্তে বসবাসকারী উলিনগর ও খর্দ কছুন্দি এলাকার ১ হাজার পরিবারকে। ভাঙা রাস্তার ওই অংশে রয়েছে মাদ্রাসা, মসজিদ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এলাকাবাসীর সহায়তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ঝুঁকি নিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারলেও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সব ধরনের যানবাহন। ফলে এলাকাবাসী দ্রুত স্লুইস গেট ও রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানান।
ব্রিজ নির্মাণ প্রসঙ্গে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সরোয়ার জাহান সুজন বলেন, ‘ব্রিজ ও রেগুলেটরটি পুনরায় নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা আকারে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ না পাওয়ায় পুনর্র্নিমাণ করা সম্ভব হয়নি। তবে ওই জায়গাটিতে এখন আর রেগুলেটর ব্রিজের প্রয়োজন নেই। সড়ক বিভাগ অথবা এলজিইডি যদি এখানে সংযোগ সড়কের সঙ্গে ব্রিজ নির্মাণ করে, সে ক্ষেত্রে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আর তারা যদি সেটা না করে, তাহলে আমরা দ্রুত কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে ব্রিজ নির্মাণ করার মাধ্যমে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা করব।’
সংযোগ রাস্তাটি এলজিইডির হওয়ায় সদর উপজেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল কবির বলেন, ‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে জানতে পেরেছি রাস্তাটি ভেঙে গিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সম্মতিক্রমে ব্রিজটি নির্মাণ ও রাস্তাটি দ্রুত মেরামত করে এলাকাবাসীর ভোগান্তি কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।’