হোম স্বাস্থ্য ডেস্ক স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা জরুরি: বিশেষজ্ঞদের দাবি

স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা জরুরি: বিশেষজ্ঞদের দাবি

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 41 ভিউজ

নিউজ ডেস্ক:
স্বাস্থ্যখাতের দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের লক্ষ্যে অবিলম্বে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের মূল সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন এবং ২০২৫ সালের জুলাই সনদে তা অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন কমিশনের সদস্যসহ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

শুক্রবার (১ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে খোলা চিঠিতে তারা বলেন, স্বাস্থ্যখাতকে জাতীয় উন্নয়নের মৌলিক স্তম্ভ হিসেবে ধরে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।

তবে চিঠিতে তারা সতর্ক করে বলেন, কাঠামোগত দুর্বলতা, প্রশাসনিক ফাঁকফোকর এবং যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অভাব এই অর্জনগুলোকে ব্যাহত করছে।

চিঠিতে বলা হয়, স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো স্বাস্থ্যখাতের শাসন ব্যবস্থায় কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্য একটি কৌশলগত ও সময়োপযোগী রূপরেখা প্রদান করেছে।

এগুলো শুধু সেবা সম্প্রসারণ বা মানোন্নয়নের সুপারিশ নয়, বরং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও পদ্ধতিগত রূপান্তরের বিস্তৃত কাঠামো উপস্থাপন করেছে বলেও উল্লেখ করেন তারা।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা বলেন, সময়োপযোগী ও কৌশলগত বাস্তবায়ন না হলে গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সুপারিশগুলো শুধু কাগজেই রয়ে যাবে, বাস্তবে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তাই তারা জাতীয় অগ্রাধিকারে অন্তর্ভুক্ত একটি সময়পোযোগী রোডম্যাপ তৈরির ওপর জোর দেন এবং বলেন, এসব সংস্কার জুলাই সনদ ২০২৫-এ অন্তর্ভুক্ত করলে কাঠামোগত রূপান্তরের প্রতি সরকারের আন্তরিক ও ভবিষ্যতমুখী প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকালীন সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, কিছু কার্যক্রম সরকারের প্রশাসনিক ক্ষমতার মধ্যেই পড়ে, যা এখনই শুরু করা সম্ভব।

প্রথম ধাপে তারা যেসব পদক্ষেপের প্রস্তাব দেন:

১. একটি স্থায়ী স্বাস্থ্য কমিশন গঠনের জন্য অবিলম্বে প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, যা স্বাধীন, জবাবদিহিমূলক এবং স্বাস্থ্যখাত সংস্কারে কৌশলগত দিকনির্দেশনা দেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন হবে।

২. মানসম্মত সরকারি স্বাস্থ্য অবকাঠামো গঠনের উদ্যোগ নেওয়া এবং শহর ও গ্রামীণ, উভয় এলাকায় একটি বাধ্যতামূলক রেফারেল ব্যবস্থাসহ সর্বজনীন বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা চালুর প্রক্রিয়া শুরু করা।

৩. বাস্তবায়ন তদারকির জন্য সরাসরি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অধীনে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার স্টিয়ারিং কমিটি গঠন।

তাদের মত, এই উদ্যোগগুলো যদি ২০২৫ সালের আগস্টের মধ্যেই শুরু করা যায়, তবে ডিসেম্বরের মধ্যে সরকার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও অধ্যাদেশ জারি করতে পারবে এবং ২০২৬ সালের প্রথম প্রান্তিকেই দৃশ্যমান অগ্রগতি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

এই প্রস্তাবকে শুধুই প্রশাসনিক উদ্যোগ না বলে এর পেছনে জাতির প্রতি একটি নৈতিক দায়বদ্ধতা রয়েছে বলেও মত দেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলেন, আগস্টে সংস্কার উদ্যোগ শুরু হলে তা গণঅভ্যুত্থানের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং জাতির ভবিষ্যতের পথে এক সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে পরিগণিত হবে।

চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন, কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ সাপোর্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন, পথিকৃত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী, ক্লিনিক্যাল নিউরোসায়েন্স সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক নায়লা জামান খান, আইসিডিডিআরবির সাবেক প্রধান চিকিৎসক ডা. আযহারুল ইসলাম খান, এবং অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্মস বাংলাদেশ-এর আহ্বায়ক ও হেলথ ইকোনমিকস ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল হামিদ।

তারা আশা প্রকাশ করেন, প্রধান উপদেষ্টা সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়ে দেশের স্বাস্থ্যখাতের গঠনমূলক পরিবর্তনের ভিত গড়ে তুলবেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন