হোম খুলনাযশোর স্বাস্থ্য সেবায় মডেল হতে পারে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

স্বাস্থ্য সেবায় মডেল হতে পারে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 117 ভিউজ

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি:
স্বাস্থ্য সেবায় আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে যশোরের মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এখানকার স্বাস্থ্যসেবার কার্য্যক্রম দেশের মডেল হতে পারে। স্বাস্থ্য সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এবং যুগোপযোগী সেবাকে মাথায় রেখে হাসপাতালে গড়ে তোলা হয়েছে নানা ধরনের সেবা কার্য্যক্রম।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা হলো যশোরের মনিরামপুর। এখানে অন্ততঃ সাড়ে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। মানুষের স্বাস্থ্য সেবাকে মাথায় নিয়ে ১৯৬৪ সালে উপজেলার মোহনপুর মৌজায় মেডিকেল ট্রেনিং সেন্টার হতে প্রতিষ্ঠা করা হয় মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। বর্তমানে এর আয়তন ৪একরেরও বেশি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৭ জন চিকিৎসক ও ২৮ জন নার্স কর্মরত আছেন।সরকারী হাসপাতালটিতে এনসিডি কর্নার, মানসিক রোগীদের জন্য মনের বাড়ি, আইএমআইসি, ইপিআই, স্বাস্থ্য ও শিশুশিক্ষা কর্নার চালু রয়েছে। তাছাড়া ডিজিটাল এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি, প্যাথলজি, ২৪ঘন্টা ইসিজি সেবা চালু আছে। হাসপাতালটিতে মাসে অন্ততঃ ৪০-৪৫ জনের নরমাল ডেলিভারী ও ১৫-২০ জনের মত সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়ে থাকে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, হাসপাতাল থেকে ডায়াবেটিস, অ্যান্টিবায়োটিক, ইনসুলিন, ইনহিলারসহ অন্ততঃ শত প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে রোগীদের দেয়া হয়। ফুলে-ফলে সু-সজ্জিত হাসপাতাল ক্যাম্পাসে গড়ে তোলা হয়েছে মাল্টিপারপাস হলরুম, সৌন্দৰ্য্যমন্ডিত মসজিদ, রোগী ও স্বজনদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে বিশ্রামাগার, গ্যারেজ, স্যানিটেশন ব্যবস্থা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য রাখা হয়েছে কীট। সবমিলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীকে সুস্থ করতে একদিকে যেমন চিকিৎসা সেবায় আধুনিকায়ন করা হয়েছে, তেমনি রোগীর মানসিক অবস্থাকে প্রফুল্ল করতে গড়ে তোলা হয়েছে নান্দনিক পরিবেশ।www উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে এসে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রোগী ও স্বজনরা। সরেজমিনে কথা হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে উপজেলার কাশিপুর গ্রামের সত্তরোর্দ্ধ বয়সী ইনতাজ আলী।তিনি বলেন, ডায়বেটিস ও পিসারের রোগী আমি। হাসপাতাল থেকে বই করে দেছে। ডাক্তার দেহায়ে ঔষধ নিয়ে যায়। আমি খুশি।

আগরহাটি গ্রামের আমেনা খাতুন বলেন, মাইয়েডারে নিয়ে আজ তিনদিন হলো হাসপাতালে আইছি। নার্স আপারা, ডাক্তার স্যারেরা আসে খোঁজ খবর নেয়, ঔষধ দেয়। মাইয়ে ভালো হয়ে গেছে।

বিজয়রামপুর গ্রামের বাবু পাটোয়ারী বলেন, ছাবালের ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। হাসপাতাল পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ যাবতীয় দেখভাল করছে। আমি সেবার মানে সন্তোষ প্রকাশ করছি। হাসপাতালের স্টাফ নার্স হাওয়া বেগম বলেন, রোগীর সেবা করার মানসিকতা নিয়েই এই পেশায় এসেছি। সব রোগীদের আন্তরিকতার সাথে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।
সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট ল্যাব আনিসুজ্জামান বলেন, রোগী আগের থেকে দ্বিগুন হয়ে গেছে। আধুনিক পদ্ধতিতে প্রায় সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হসপিটাল থেকে করা হয়। রোগীরা সন্তুষ্ট। সরকারী খাতেই পূর্বের তুলনায় কয়েকগুণ ইউজার ফি সরকারী কোষাগারে জমা দেওয়া হয়।স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মজিদ বলেন, মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য সেবার মান বেড়েছে। ইতিমধ্যে, সাপে দংশনে এক রোগী যশোর ২৫০ শষ্যা থেকে খুলনায় রেফার করলেও মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবায় ভালো হয়ে যাওয়ায় বিষয়টি ভাইরাল হয়।তাছাড়া হাসপাতালের চিএইচএ ডাঃ ফয়সাল ও আরএমও ডাঃ অনুপের সার্বিক দিক নির্দেশনায় একটি চৌকস চিকিৎসক টিম কাজ করে যাচ্ছে। গাইনীতে ডাঃ ডায়না, মেডিসিন কনসালটেন্ট ডাঃ সুমন কবীর, মেডিকেল অফিসার হিসেবে ডাঃ ফরিদুল, ডাঃ নাহিদ, ডাঃ দেবাশীষ, ডা সাধারণ মানুষের মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছেন।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ অনুপ কুমার বসু বলেন, চিকিৎসা সেবা ভালো পাওয়ায় প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে। আউটডোরে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫-৬শ রোগী দেখা হয়ে থাকে। স্বাস্থ্য সেবাকে হৃদয়ে ধারণ করে রোগীকে সুস্থ করতে একদিকে যেমন চিকিৎসা সেবায় আধুনিকায়ন করা হয়েছে, তেমনি রোগীর মানসিক অবস্থাকে প্রফুল্ল করতে গড়ে তোলা হয়েছে নান্দনিক পরিবেশ।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডাঃ ফাইয়াজ আহমদ ফয়সাল বলেন, মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে সত্যিকারের মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে শূন্য পদে দ্রুত জনবল নিয়োগ, বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টের পদ পূরণ করা অপরিহার্য। পাশাপাশি আধুনিক হাসপাতাল ভবন নির্মাণ এবং প্রয়োজনীয় ডিজিটাল সরঞ্জাম নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বৈকালিক সেবা ও ‘মনের বাড়ি’-এরমতো ইতিবাচক উদ্যোগগুলোকে আরও প্রসারিত করতে পারলে এটি দেশের অন্যান্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য একটি অনুসরণীয় মডেল হতে পারে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন