হোম জাতীয় স্বাধীনতা অর্জনের মরণপণ সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ বাঙালি

স্বাধীনতা অর্জনের মরণপণ সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ বাঙালি

কর্তৃক
০ মন্তব্য 614 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক :

অগ্নিঝরা মার্চের ২২তম দিন আজ। ১৯৭১ সালের এ দিনে স্বাধীনতার দাবিতে বিক্ষুব্ধ বাঙালি সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও গগনবিদারী স্লোগানে রাজধানীর আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়। বাংলার মানুষ মরণপণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে।

একাত্তরের এদিন সকালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য ২৫ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানের উভয় অংশের নেতাদের মধ্যে আলোচনাক্রমে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পরিবেশ সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য ২৫ মার্চের অধিবেশন স্থগিত রাখা হল।

রমনার প্রেসিডেন্ট ভবনে এদিন সকালে ইয়াহিয়া খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো আলোচনার জন্য বৈঠকে মিলিত হন। এটি ছিল প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ষষ্ঠ বৈঠক। এ বৈঠক প্রায় সোয়া ঘণ্টা স্থায়ী হয়। বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে নিজ বাসভবনে ফিরে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আন্দোলনে আছি এবং লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

দুপুরে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে কড়া সামরিক প্রহরায় হোটেলে ফিরে ভুট্টো তার উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে ভুট্টোর নেতৃত্বে পিপলস পার্টির নেতারা সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। রাতে সেখান থেকে ফিরে ভুট্টো হোটেল লাউঞ্জে এক অনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রেসিডেন্ট ও আওয়ামী লীগ প্রধান বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য একটি সাধারণ ঐকমত্যে পৌঁছেছেন।

তবে ওই ঐকমত্য অবশ্যই পিপলস পার্টির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। পিপলস পার্টির অনুমোদন ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত পশ্চিম পাকিস্তানিরা মেনে নিতে পারে না।

এদিকে জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত হাজার হাজার মানুষ বঙ্গবন্ধু বাসভবনের দিকে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে আসে। বাসভবনে সমবেত জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু এদিন বেশ কয়েকবার বক্তৃতা দেন। সংগ্রামী জনতার গগণবিদারী ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান ও করতালির মধ্যে জনগণের নেতা ঘোষণা করেন- বন্দুক, কামান, মেশিনগান কিছুই জনগণের স্বাধীনতা রোধ করতে পারবে না।

১৯৭১ সালের এই দিনে বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণে শিশু-কিশোরদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে শিশু-কিশোররা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। পল্টন ময়দানে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকরা এ সমাবেশ ও কুচকাওয়াজের আয়োজন করে।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে অভূতপূর্ব ঐক্য গড়ে উঠেছে তাতে সাবেক সৈনিকরা আর সাবেক হিসেবে বসে থাকতে পারে না। আমাদের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের মূল্যবান সম্পদ। আমরা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পালনে প্রস্তুত।

পত্রিকায় পাঠানো এক বিশেষ বাণীতে বঙ্গবন্ধু বলেন, আমাদের আন্দোলনের বৈধতার কারণে বিজয় এখন থেকে আমাদেরই। বাংলাদেশের সব দৈনিক পত্রিকার জন্য পাঠানো এ বাণীটির শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশের মুক্তি।’ বাণীতে সাত কোটি বাঙালির সামগ্রিক মুক্তির জন্য চলমান আন্দোলনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু বলেন, চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত এ সংগ্রাম চলবে।

বুলেট, বেয়োনেট ও বন্দুক দ্বারা বাংলাদেশের মানুষকে স্তব্ধ করা যাবে না, কারণ তারা আজ ঐক্যবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য অর্জনে যে কোনো প্রকার আত্মত্যাগে আমরা প্রস্তুত। যে কোনো আক্রমণ প্রতিহত করতে বাংলাদেশের প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে।

এদিকে একাত্তরের ২২ মার্চ রাতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ‘পাকিস্তান দিবস’ (২৩ মার্চ) উপলক্ষে প্রদত্ত এক বাণীতে বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মিলেমিশে একসঙ্গে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তান এখন এক ক্রান্তিলগ্নে উপনীত। গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনের পথে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। তবে আমরা যদি আমাদের লক্ষ্যে অবিচল থাকি তাহলে কোনো কিছুই আমরা হারাব না।

সূত্র-যুগান্তর

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন