জাতীয় ডেস্ক:
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আরও তিনটি মৃত মা কচ্ছপ পাওয়া গেছে। ফলে মঙ্গলবার একদিনে ৫টি মৃত কচ্ছপ ভেসে এসেছে।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকালে হিমছড়ি সৈকতের প্যারাসেলিং পয়েন্টে ২ টি এবং সোনারপাড়া পয়েন্টে ১ টি মৃত কচ্ছপ ভেসে আসে। সকালে সোনাপাড়া সৈকতে আরও ২ টি মৃত মা কচ্ছপ পাওয়া গিয়ে ছিল।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, বিকালে পাওয়া কচ্ছপের পেটেও ডিম রয়েছে। তবে তা পচে যাওয়ায় সংগ্রহ বা সংখ্যা জানা যায়নি। সকালে মৃত ‘মা কচ্ছপ’ ২ টির পেটে মিলেছে ১৮৫টি ডিম পাওয়া গেছে। ৫টি কচ্ছপই অলিভ রিডলি এবং নারী। এ নিয়ে গত ৬ দিনে সমুদ্র উপকূলে ভেসে এসেছে ১১ টি ‘মা কচ্ছপ’। যে কচ্ছপে পাওয়া গেছে ৭ শত ডিম। জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভেসে এসেছে ৩৪ টি মৃত ‘মা কচ্ছপ’।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, সকালের দুটির সামনের ও পিছনের ফ্লিপারগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। বিকালে পাওয়া ৩ টি পচে গেছে। ডিম দিতে উপকূলে আসার সময় জালে বা অন্য কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এদের মৃত্যু হতে পারে।
এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি সৈকতের হিমছড়ি প্যারাসেলিয়ং পয়েন্টে ভেসে এসেছে ৯৫টি ডিম পেটে থাকা একটি মা কচ্ছপ। রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে আবারও ভেসে আসে তিনটি মৃত মা কচ্ছপ। যার পেটে মিলেছে ৩১০টি ডিম। এর আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের হিমছড়ি পয়েন্টে আবার একটি মৃত মা কাছিম ভেসে এসেছে। যা পেটে ছিল ৯০ টি ডিম। এর আগে ৩ দিনে উপকূলে দেখা মিলেছে ৩ টি মৃত ডলফিন, ১ টি মৃত পরপইস ও ১ টি কচ্ছপ।
এর মধ্যে ১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে উখিয়ার সোনারপাড়া সৈকতে একটি এবং ইনানী সৈকতে একটি মৃত ডলফিন ভেসে আসে। এর আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি হিমছড়ি সৈকতে মৃত ভেসে আসে আরও একটি ইরাবতী ডলফিন। ১৪ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ভেসে আসে একটি মৃত পরপইস। ১৫ ফেব্রুয়ারি সৈকতের রেজুনদীর মোহনায় একটি অলিভ রিডলি বা জলপাই রঙের সামুদ্রিক মা কচ্ছপের মৃতদেহ ভেসে এসেছিল।
বোরি’র দেওয়া তথ্য মতে, জানুয়ারি থেকে মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের সোনাদিয়া, হিমছড়ি, সোনারপাড়া, ইনানী ও টেকনাফ সৈকতে অন্তত ৩৪টি মৃত কচ্ছপ পাওয়া গেছে। শুধু মাত্র ৬ দিনে সৈকতে পাওয়া গেছে ৮টি মৃত মা কচ্ছপ। এই সময়ের মধ্যে ৩টি মৃত ডলফিন, ১টি মৃত পরপইস ভেসে এসেছে।
এ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ। তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে ভেসে আসা মৃত সামুদ্রিক প্রাণীগুলোর নমুনা সংগ্রহ করে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এটা কখনও হয়নি।
গত বছর ৩০ মার্চ সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে একটি মরা ইরাবতী ডলফিন ভেসে এসেছিল। এর আগে গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপ সংলগ্ন সৈকতে একই প্রজাতির মরা ডলফিন ভেসে আসে। ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট ও ২০ মার্চ একই সৈকতে মরা ডলফিন ভেসে আসে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতেও টেকনাফ সৈকতে দুটি মরা ডলফিন ভেসে এসেছিল।
এছাড়া গত বছর ১৮ এপ্রিল রাতে কলাতলী সৈকতে একটি মরা তিমি ভেসে আসে। ২০২১ সালের ৯ ও ১০ এপ্রিল পরপর দুইদিনে হিমছড়ি সৈকতে দুটি মরা তিমি ভেসে এসেছিল।