অনলাইন ডেস্ক :
দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের কাজ। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৯৭ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে নির্ধারিত সময়ের আগেই এ রেলপথ চালুর পরিকল্পনা বাংলাদেশ রেলওয়ের।
শুক্রবার (৫ মে) কাজ পরিদর্শন করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক। আর এ রেলপথ চালু হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে আশা ব্যাবসায়ীদের।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি খুলনা-মোংলা রেলপথের কাজ এখন একেবারেই শেষের পথে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই ফুলতলা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত রেল চালুর লক্ষ্যে এখন শেষ মুহূর্তের তোড়জোড় চলছে।
শুক্রবার সরেজমিনে খুলনার আড়ংঘাটা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রেলপথের পাথর সরিয়ে পরিষ্কার করার কাজ করছেন শ্রমিকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন হয়। জমি অধিগ্রহণ, রেল লাইন ও রেল সেতু নির্মাণসহ সমগ্র তখন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল তিন হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এরপর পাঁচবার সময় বাড়িয়ে সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এরই সঙ্গে ব্যয় বেড়ে হয়েছে চার হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
নানা জটিলতা কাটিয়ে এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় এ রেলপথ। এই প্রকল্পের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল রূপসা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ। ৫ দশমিক এক তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রেল সেতুর কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত মোট ৬৪ কিলোমিটার পথ হলেও স্টেশনগুলোর ডাবল লাইন হিসেব করে এই প্রকল্পে মোট রেলপথ বসবে ৯১ কিলোমিটার। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৮১ কিলোমিটার রেলপথ বসানো সম্পন্ন হয়েছে। ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত মোট ৯টি প্লাটফরম রাখা হয়েছে। যার সবগুলোর নির্মাণ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া শেষ হয়েছে ১০৭টি ছোট ব্রিজ ও ৯টি আন্ডারপাস নির্মাণ কাজও। গত জানুয়ারি মাসে প্রকল্পের ফুলতলা এলাকায় পরীক্ষামূলক ভাবে ইঞ্জিনও চালানো হয়েছে।
সব মিলয়ে এখন পর্যন্ত খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৯৭ শতাংশ। শেষ সময়ে এখন বাকি অংশের রেলপথ এবং সিগন্যালিং ও টেলিকিমিউনিকেশনের কাজ চলছে।
এদিকে শুক্রবার (৫ মে) দিনব্যাপী খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান। আগামী সেপ্টেম্বরে নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হওয়ার আশা তার।
সময় সংবাদের সঙ্গে আলাপকালে মহাপরিচালক বলেন, আমাদের নির্ধারিত সময় ছিল সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করা, তবে আমরা চেষ্টা করছি তার আগেই কাজ শেষ করার। এরই মধ্যে আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একাধিক সভা করেছি, সেখানে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছি। তারাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দ্রুত সময়ের সঙ্গে কাজ শেষ করার। আশা করছি সেপ্টেম্বরের আগেই এই রেলপথ দিয়ে রেল চলাচল করবে।
এদিকে দীর্ঘদিনের খুলনার মানুষের এ দাবির অবশেষে বাস্তবায়নে দারুণ খুশী এ অঞ্চলের ব্যবসায়ী নেতারা। তাদের আশা এ রেলপথ চালু হলে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন দ্বার খুলবে। খুলনা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক জেডএ মাহমুদ ডন বলেন, যে কোন অঞ্চলের উন্নয়নের মূল শর্ত হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। আমাদের এ রেলপথ চালু হলে সেই উন্নয়নের পথে আমরা এগিয়ে যাবো। এ রেলপথ চালু হলে ভারত-নেপাল-ভুটান মোংলা বন্দর ব্যবহার করে পণ্য আমদানি-রফতানি করবে। তাতে সরকার রাজস্ব পাবে। তাতে মোংলা বন্দরের গতিশীলতা বাড়বে। এতে করে এই অঞ্চলে আরও বেশী শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। তাতে নতুন নতুন কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে। সব মিলিয়ে খুলনা অঞ্চল দেশের মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে বলে আমার বিশ্বাস।
একই রকম আশার কথা জানান মোংলা কাস্টমস এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুলতান হোসাইন খান। তিনি বলেন, আমরা যারা মোংলা বন্দর কেন্দ্রিক ব্যবসা করি, আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি এই রেলপথের জন্য। এই রেলপথ অল্প দিনেই চালু হবে জানতে পেরে ভালো লাগছে। এই রেলপথ ব্যবহার করে পণ্য আমদানি ও রফতানিতে খরচ অনেক কম হবে ব্যবসায়ীদের। তাতে অন্যান্য দেশের সঙ্গে পণ্য পরিবহন ও খরচের প্রতিযোগিতায় আমরা এগিয়ে থাকবো। সব মিলিয়ে আমরা দারুণ আশাবাদী।
ভারত সরকারের ঋণ সহায়তা চুক্তির আওতায় খুলনা-মোংলা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান লার্সেন অ্যান্ড টার্বো। আর ট্র্যাক লিংকিং করছে আরেক ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ২৬১ কোটি টাকা।