মোংলা প্রতিনিধি :
‘নারী নেতৃত্ব হারাম’ বিতর্কিত এ বক্তব্য দেওয়ায় অবশেষে সেই ইউপি চেয়ারম্যান ইকরাম ইজারাদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সোমবার (২২ জানুয়ারী) রাতে মোংলা থানায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন এ মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর- ২৫ / ২২-১-২০২৪। ইকরাম ইজারাদার মোংলা উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়ন পরিষদে ২০২১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়ন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হন।
মামলার বাদী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বাগেরহাট-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে গনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৭৭ এর বিধান এবং সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ১১ (ক) লংঘন করেছেন। এই অবস্থায় নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন প্রেরণ করে। পরবর্তীতে চেয়ারম্যান ইকরাম ইজারাদারের বিরুদ্ধে গনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৭৩ এবং সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ১৮ এর আদেশ এই মামলা দায়ের করেন তিনি।
‘নারী নেতৃত্ব হারাম’ বলে বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) আসনে নৌকার বিপক্ষে ভোট চেয়ে আলোচনায় আসেন ইকরাম ইজারাদার। পরে তাকে তলব করে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান বাগেরহটের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ (১ম আদালত) আদালতের বিচারক ওবায়দা খানম।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচারণ বিধিমালার ১১(ক) ধারা উল্লেখ আছে, নির্বাচনী প্রচারণাকালে ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করিয়া বক্তব্য প্রদান বা কোন ধরণের তিক্ত (উস্কানিমূলক বা মানহানিকর) বক্তব্য, লিঙ্গ, সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মানুভূতিকে আঘাত লাগে এমন কোন বক্তব্য প্রদান করিতে পরিবেন না।
কিন্তু সুন্দরবন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যান ইকরাম ইজারাদার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তাঁর ইউনিয়নে গত ৩০ ডিসেম্বর ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইদ্রিস আলী ইজারদারের নির্বাচনী এক পথসভায় বলেন, ‘আমরা গজবের ভেতর নিমজ্জিত আছি। এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। জনমনে কোনো স্বস্তি নেই, শান্তি নেই; তার কারণ, নারী নেতৃত্ব হারাম। নারী নেতৃত্বের অধীনে আমরা এখানে রয়েছি। আমাদের ভোটটা আমরা বেগম হাবিবুন নাহারকে (আওয়ামী লীগের প্রার্থী) দুইবার (ভোট) দিয়ে আমরা নারী নেতৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত করছি। তাই আমাদের এখানে কোনো সুখ-শান্তি অবস্থান করে না। যেটা সত্য, সেই কথা আমি এখানে আপনাদের কাছে বলে গেলাম। উনি একজন নারী, উনি রাজনীতি আর সমাজনীতির বোঝেন কি? কিছুই বোঝেন না।’
এই বক্তব্যের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পরে সংসদ নির্বাচনের পরে তাকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারণ ও গ্রেফতারের দাবীতে মোংলায় কয়েক দফা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়।
মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে আচরণ বিধি লংঘন করায় ইউপি চেয়ারম্যান ইকরাম ইজারাদারের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের হয়েছে। এখন তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ’।