হোম অন্যান্যসারাদেশ সুন্দরবনে জেলেদের উপর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের হামলা, ইলিশ লুট, হাসপাতালে ভর্তি, ক্ষোভ অসন্তোষ

সুন্দরবনে জেলেদের উপর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের হামলা, ইলিশ লুট, হাসপাতালে ভর্তি, ক্ষোভ অসন্তোষ

কর্তৃক
০ মন্তব্য 86 ভিউজ

বাগেরহাট অফিস :
অবৈধভাবে সুন্দরবনে প্রবেশ করে দফায় দফায় জেলেদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে শরণখোলা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজের বিরুদ্ধে। ভাইস চেয়ারম্যান ও তার লোক জনের হামলায় আহত অবস্থায় জেলে মামুন খান (৩২) শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও মারধরের শিকার আরও দুই জেলে একই হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এদিকে সুন্দরবন ও বঙ্গপসাগরে মাছ আহরণের জন্য যাওয়া জেলে ও তাদের পরিবারের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

আহত মামুন খান শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের আব্দুল হক খানের ছেলে। রবিবার বিকেলে সুন্দরবনের দুধমুখী নদীর বালুর চর এলাকায় মামুন খানের উপর হামলা করে ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজ ও তার লোকজন। পরে সোমবার সকালে মামুন খানকে শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভতি করেন তার পরিবার। এদিকে সোমবার সকালে একই স্থানে জেলে নান্টু ফরাজী ও নুর ইসলাম মল্লিকের উপর অত্যাচার করে ভাইস চেয়ারম্যান ও তার লোক জন।

আহত মামুন খান বলেন, ভাইস চেয়ারম্যান পারভেজ লোক পাঠিয়েছে আমাকে তার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। পরে তার কাছে না যেয়ে ওই সময় সাগরে জাল ফেলে বালির খালে ফিরে আসি। এসময় ভাইস চেয়ারম্যানের সাথে দেখা হলে সে বলে তোর কাছে টাকা চাইছি টাকা দিসনি কেন। তখন আমি বলি আমি গরীব মানুষ কিভাবে টাকা দিব। পরে আমার ট্রলারে থাকা ৪০টি মাছের মধ্যে ৩৮টি মাছ নিয়ে যায় ভাইস চেয়ারম্যান ও তার লোকেরা। আমাকে ধরে তার ট্রলারে নিয়ে পারভেজ ও আলমসহ তিনজনে আমাকে বেধরক মারপিট করে। আমাকে লাথি মারে এবং আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত (পাড়ায়) করে। আমি এর বিচার চাই।

সোনাতলা এলাকার ইউপি সদস্য ডালিম হোসেন বলেন, মামুনসহ জেলেরা দীর্ঘদিন সুন্দরবন ও বঙ্গপসাগরে মাছ ধরে আসছিল। কিন্তু এবছর ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজ ও জাকির ব্যবসায় নেমে জেলেদের উপর বিভিন্ন অত্যাচার শুরু করেছে। সাধারণ জেলেদের মারধর করে বিতারিত করেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। রায়েন্দা ইউনিয়ন মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি এমাদুল শরীফ বলেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজ, সাবেক দস্যু নাছির, আলম ও জাকির সুন্দরবনে যেয়ে আমার জামাই মামুনকে মারধর করেছে। তার কাছে ২৫ হাজার টাকা ও ট্রলার থেকে ৩৮টি মাছ নিয়ে গেছে। আমি এর শাস্তি চাই।

জেলের স্বজনরা জানান, দফায় দফায় মাছ নিয়ে যাবে, টাকা দাবি করবে আর তাদের কথা না শুনলে মারধর করবে এরকম হলে আমরা কিভাবে বাঁচব। আমরা ভাইস চেয়ারম্যান পারভেজসহ অত্যাচারীদের বিচার চাই। শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফরিদা পারভীন বলেন, শরীরে প্রচুর ব্যাথা ও মাথার ডান পাশে কাটা দাগ নিয়ে একজন জেলে আমাদের এখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমরা তার চিকিৎসা প্রদান করছি।

শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসকে আব্দুল্লাহ আল সাইদ বলেন, জেলেদের কাছ থেকে শুনেছি সুন্দরবনের যে জায়গায় এই জেলেরা মাছ ধরছিল, ভাইস চেয়ারম্যানও সেখানে মাছ ধরতে চেয়েছিল। ভাইস চেয়ারম্যান জেলেদেরকে ওখান থেকে চলে যেতে বলে এবং ওই জেলেরা না গেলে ভাইস চেয়ারম্যান ও তার লোকেরা একজনকে মারধর করে। এ ঘটনায় জেলেদের ডেকে আমি সব শুনেছি। জেলেরা লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ^াস দেন তিনি।
পুর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) জয়নাল আবেদিন বলেন, জেলেদের মারধরের ঘটনাটি অবশ্যই অমানবিক।উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজ কিভাবে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে তাও আমরা খতিয়ে দেখছি। তাকে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে পেলে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেন তিনি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন