হোম জাতীয় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত ৮: চিকিৎসা শেষে ঈদ করতে বাড়িতে ফিরছিলেন তারা

জাতীয় ডেস্ক:

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় অ্যাম্বুলেন্সের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহতদের পরিচয় মিলেছে। নিহত আটজনের মধ্যে সাতজনই একই পরিবারের। ঢাকা চিকিৎসা শেষে ঈদুল আজহায় বাড়ি ফিরছিলেন তারা।

শনিবার (২৪ জুন) বেলা ১১টার দিকে ভাঙ্গা উপজেলার মালিগ্রাম এলাকায় ফ্লাইওভারের ওপর দুর্ঘটনা নিহত হন তারা।

নিহতরা হলেন- বোয়ালমারী উপজেলার ফেলাননগর গ্রামের সৌদি প্রবাসী আজিজার শেখের স্ত্রী তাসলিমা বেগম (৫০), তার বড় মেয়ে ও শেখর ইউনিয়নের মাইটকুমড়া গ্রামের আলমগীর হোসেনের স্ত্রী কমলা পারভীন (৩২), কমলা পারভীনের বড় ছেলে আরিফ (১৩), মেঝ ছেলে হাসিব (৮), কন্যা হাফসা (২) এবং তাসলিমার মেঝ মেয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলা আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়নের কুচিয়াগ্রামের সেনা সদস্য মাহামুদুল হাসান রনির স্ত্রী বিউটি পারভীন (২৭), বিউটি পারভীনের ছেলে মেহেদী (১০)। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্সচালক মৃদুল মালো (২৫)ফরিদপুর শহরের গুহলক্ষ্মীপুর এলাকার তকি মোল্যা সড়কের সুভাষ চন্দ্র মালোর ছেলে।

নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফেলাননগর উত্তরপাড়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী মো. আজিজার শেখের স্ত্রী তাসলিমা বেগম (৫০) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেয়ার পর তাকে ঢাকায় চিকিৎসার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। প্রায় দেড় মাস আগে ঢাকায় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিয়ে মেজ মেয়ে বিউটি বেগমের বাসায় অবস্থান করছিলেন তিনি। তাসলিমা বেগমের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ঢাকার কদমতলী এলাকা থেকে গ্রামের বাড়ি ফেলাননগরের উদ্দেশে দুই কন্যাসহ নাতি-নাতনিদের নিয়ে সকাল ৯টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা থেকে রওনা হন।

বেলা ১১টার দিকে ভাঙ্গার মালিগ্রাম ফ্লাইওভারের অ্যাপ্রোস সড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি ডিভাইডারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ধরে যায়। এ সময় চালককে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হলেও অ্যাম্বুলেন্সে থাকা সাতজন দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। আহত হন অ্যাম্বুলেন্সচালক মৃদুল মালো। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থেকে বিকাল ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৈমুর ইসলাম জানান, মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের সহায়তায় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

নিহত তাসলিমার মেজ ভাসুর নুরু শেখ কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী দেড় মাস আগে ঢাকায় মেয়ের বাসায় থেকে চিকিৎসা শেষে ঈদকে সামনে রেখে দুই মেয়ের পরিবারসহ বাড়ি ফিরছিলেন। বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি পথিমধ্যে ভাঙ্গা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় সবাই মারা গেছেন।’

এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার একটি বার্তার মাধ্যমে জানতে পারি নিহতরা সবাই বোয়ালমারীর বাসিন্দা। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় নিহতের বাড়ি শনাক্ত করি। পুলিশসহ নিহতদের পরিবারের সদস্যদের পাঠিয়ে ফরিদপুর হাসপাতালে মৃতদেহ শনাক্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশারেফ হোসাইন বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার করে টাকা পরবর্তীতে হস্তান্তর করা হবে।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহজাহান বলেন, আহত অ্যাম্বুলেন্সচালক মৃদুল মালো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন থেকে বিকেল ৫টার দিকে মারা যায়। তার মরদেহ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন