জাতীয় ডেস্ক :
সেনাবাহিনীর মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় তৃতীয় দিনেও অসমাপ্ত রয়েছে আসামি পক্ষের আইনজীবীর যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন। তবে বুধবারের (১২ জানুয়ারি) মধ্যে শেষ হওয়ার আশা করছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) বিকেল ৫টায় কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলের আদালতে বিচারিক কার্যক্রম শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম।
বিচারিক কার্যক্রমের যুক্তি-তর্ক পর্বের তৃতীয় দিনে প্রধান আসামি লিয়াকত আলীর আইনজীবীর পর ওসি প্রদীপের আইনজীবী আসামির স্বপক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করলেও তা অসমাপ্ত রয়েছে। বুধবার আসামি ওসি প্রদীপের আইনজীবীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে যুক্তি-তর্ক পর্বে চতুর্থ দিনের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে।
মামলার বাদী-বিবাদী উভয়পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের জন্য ৯ থেকে ১২ জানুয়ারী পর্যন্ত বিচারিক কার্যক্রমের দিন ধার্য রয়েছে। এর আগে সকাল সাড়ে নয় টায় প্রিজন ভ্যানে করে মামলার ১৫ আসামীকে কক্সবাজার কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়।
পিপি ফরিদুল বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত আদালতে যুক্তি-তর্ক পর্বে প্রধান আসামি লিয়াকত আলীর আইনজীবী চন্দন দাশের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। দুপুর ১২টার দিকে তার যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এরপর আসামি ওসি প্রদীপ কুমার দাশের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। আদালতের কার্যদিবসের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও ওসি প্রদীপের আইনজীবীর যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষ করা সম্ভব হয়নি। তিনি (রানা দাশগুপ্ত) অপরাপর যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের জন্য আদালতের কাছে আরো সময় প্রার্থনা করেছেন। কাল বুধবার তিনি অসমাপ্ত বক্তব্য উপস্থাপন করবেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, আসামি ওসি প্রদীপের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি খণ্ডন করে বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। আশা করছি, বুধবার বিচারিক কার্যক্রমের শেষ দিনে প্রশ্নোত্তর পর্বের ইতি টানা সম্ভব হবে।
চলতি মাসের শেষের দিকে মামলার রায় ঘোষণা করা সম্ভব হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি।
এর আগে যুক্তি-তর্ক পর্বের প্রথম দিন রোববার ৬ জন আসামীর এবং দ্বিতীয় দিন সোমবার ৭ জন আসামির আইনজীবী নিজেদের স্বপক্ষে আদালতে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। দ্বিতীয় দিনে প্রধান আসামি লিয়াকত আলীর আইনজীবী যুক্তি-তর্ক পর্বে অংশগ্রহণ করলেও বক্তব্য প্রদান অসমাপ্ত ছিল।
মামলার বিচারিক কার্যক্রমে ৮ দফায় গত ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮৩ জন সাক্ষির মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং তাদের জেরা শেষ হয়েছে।
সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা সম্পন্ন হওয়ার পর কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় আসামিদের বক্তব্য গ্রহণ করেছিল আদালত। একই সাথে ৯ জানুয়ারি রবিবার থেকে আগামী ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তি-তর্কের জন্য দিন ধার্য্য করেছিল আদালত।
প্রসঙ্গত, প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। পরে ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব। পরে ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।