হোম বিনোদন সাদি মহম্মদের মৃত্যু: ক্ষোভ ঝাড়লেন লেখক মামুন

সাদি মহম্মদের মৃত্যু: ক্ষোভ ঝাড়লেন লেখক মামুন

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 133 ভিউজ

বিনোদন ডেস্ক:

কদিন আগেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন কিংবদন্তি রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ। বুধবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তার ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায় নিজ বাসার গান করার ঘরে।

কোনোভাবেই এ শিল্পীর মৃত্যুর বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না শোবিজ অঙ্গনের মানুষ। সাদি মহম্মদের মৃত্যুতে এবার মুখ খুললেন চলচ্চিত্রনির্মাতা, লেখক ও সংগঠক বেলায়াত হোসেন মামুন।

শুক্রবার (১৫ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন একজন শিল্পী সবসময় তার প্রাপ্য সম্মান পায় না।

এখানে চলচ্চিত্রনির্মাতা, লেখক ও সংগঠক বেলায়াত হোসেন মামুনের স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

সাদি মহম্মদকে ‘একুশে’র জন্য বিবেচনা করা যেত ২০০০ থেকে ২০১০ এর মধ্যেই, তিনি ওই সময়েই একুশে ডিজার্ভ করতেন। আর ২০১০ থেকে এই চলমান সময়ে ওনাকে ‘স্বাধীনতা’ পদকের জন্য মনোনীত করা উচিত ছিল। কিন্তু এমন কিছু ঘটেনি।

ওনার ছোট ভাই বরেণ্য নৃত্যশিল্পী ও শিক্ষক শিবলী মহম্মদ এ বছর একুশে পেয়েছেন। অথচ ওনারই বড় ভাই কিংবদন্তিতুল্য শিল্পী, শিক্ষক সাদি মহম্মদকে বিবেচনায় নেয়া হয় নি। এসব তো স্বাভাবিক ঘটনা নয়।

ক্ষমতার সিংহদুয়ারে যাদের নিত্য আনাগোনা তারা তো এ সব বিষয়ে অজ্ঞান নন। কেননা, সাদি মহম্মদের সমসাময়িক কেউ কেউ একুশে ছাড়াও স্বাধীনতাও অর্জন করে ফেলেছেন। তাদের কারো কারো চেয়ে সাদি মহম্মদের কাজ ও অবদান যে বড় তা উল্লেখের দরকার পড়ে না।

ভাববার বিষয় হলো যে, লোকটি জীবনের এই পর্বে এসে দেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা ডিজার্ভ করেন, এমন লোকটিকে যখন ‘শিল্পকলা পদক’ এর জন্য বিবেচনা করা হয়, তখন সেই লোকটির কেমন অনুভূতি হয়? হয়ত, এই রকম অনুভূতির জন্যেই ৪/৫ মাস আগে শিল্পকলা পদকের ফরম পাঠানো হলেও তিনি তাতে সই করতে উৎসাহিত হন নি। (শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ তথ্য ফেসবুকে এক পোস্টে উল্লেখ করেছেন)। অনেকবার অনুরোধ করার পর যখন তিনি সেই ফরমে সই করলেন তখন সই করার সাথে সাথে তিনি সেই ফরমের বেশ কয়েকটি ‘ঘরে’ ক্রস চিহ্ন দিয়ে কেটে দিয়েছেন৷ কেন কেটে দিয়েছেন?

ফরমটি গভীরভাবে বিবেচনায় নিয়ে দেখার প্রয়োজন। কারণ, সাদি মহম্মদ যে দিন এই ফরমটি পূরণ করে স্বাক্ষর করেছেন— ঠিক সেই দিনই ছিল ওনার অন্তিম দিন। ১৩ মার্চ। হয়ত, এই ফরমের স্বাক্ষরটিই ওনার শেষ স্বাক্ষর—আর এ কারণেই এ বিষয়টি মনোযোগ দাবি করে।

ফরমের কয়েকটি ঘর উনি যেভাবে ক্রস করে কেটেছেন, তাতে ওনার মনোভাব বোঝা যায়। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ‘অবদানের’ ঘর তিনি ক্রস করেছেন। কেন করেছেন? অবদান নেই—নাকি তা উল্লেখের এই দাপ্তরিক ‘জিজ্ঞাসা’ কে তিনি নাকচ করছেন? একইভাবে কেটেছেন আরও কয়েকটি ঘর। প্রতিটি ঘরের ক্রস আমাকে ভাবিয়েছে। আপাতত এই ভাবনাগুলো এখানে লিখে এই লেখাটিকে দীর্ঘায়িত করতে চাই না। ভাবনাগুলো যে কারো মনে আসতে পারে যদি আপনারা এইদিকে একটু মনোযোগ দিতে আগ্রহী হন। আমি মনে করছি মনোযোগ দেয়া দরকার।

কথা হলো, কেন এই সময়ে এসে ওনাকে ‘শিল্পকলা পদক’ এর জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে? যখন তিনি দেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা ডিজার্ভ করেন। এটা সাদি মহম্মদ সহজভাবে নেননি, তা ওনার ৪/৫ মাস এই ফরম স্বাক্ষর না করে ফেলে রাখা থেকেই অনুভব করা যায়।

কিন্তু শিল্পকলা পদকের জন্য ওনাকে বিবেচনা করার বিষয়টিতে শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের কোনো অপরাধ আমি দেখি না। বরং আমি এতে শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের উত্তম অভিপ্রায়ই দেখতে পাই। শিল্পকলা একাডেমি শিল্পকলা পদকের জন্য গুণীজনদের মধ্যে যাঁরা অন্যান্য ‘জাতীয়’ পুরস্কার বা পদক এখনও পাননি তাদেরকে বিবেচনা করে বা অগ্রাধিকার দেয়। হয়ত, সাদি মহম্মদের নামও অন্যান্য জাতীয় পুরস্কার বা পদক তিনি এখনো পাননি বলেই শিল্পকলা একাডেমি পদকের জন্য চূড়ান্ত হয়েছে। কিন্তু এর অভিঘাত সাদি মহম্মদের জন্য শুভকর হয়নি বলেই মনে হচ্ছে।

শিবলী মহম্মদের বক্তব্যে জানা যায়, সাদি মহম্মদ অত্যন্ত আবেগপ্রবণ এবং অভিমানী ছিলেন। রাষ্ট্র সাদি মহম্মদের সাধনাকে মূল্যায়ন করেনি বা করছে না—এ অভিমান তাঁর ছিল। এ কথা শিবলী মহম্মদ বেশ জোরের সঙ্গেই বলেছেন। এ সব কথা বিবেচনায় নিলে এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, সাদি মহম্মদ মনে মনে মূল্যায়নহীনতার বেদনায় আহত ছিলেন। এছাড়া, স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের পরিবারের সাথে ঘটা ভয়াবহ ঘটনার বেদনা, ট্রমা তো তাঁর ছিলই। সবটা মিলেই তিনি এই রকম অবস্থায় চলে গেছেন যে—জীবনকেই বলেছেন বিদায়।

আর তাঁর বিদায় বলার দিনটিতেই তিনি স্বাক্ষর করেছেন রাষ্ট্রীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সম্মাননা প্রাপ্তিপত্রে। কিন্তু সেই সম্মাননা গ্রহণের জন্য তিনি অপেক্ষা করতে চাইলেন না। যদি এই সম্মাননা তিনি গ্রহণের জন্য ‘অপেক্ষা’ নাই করবেন, তাহলে ঠিক ওই দিন এই ফরমে তিনি স্বাক্ষর কেন করলেন?

জানি না এই প্রশ্নের উত্তর কী হবে। একমাত্র যিনি এই উত্তর দিতে পারতেন তিনি চলে গেছেন আলোচনা-তর্কের সীমানা ছাড়িয়ে।

আপনার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রিয় শিল্পী সাদি মহম্মদ।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন