সংকল্প ডেস্ক:
সাতক্ষীরায় দুই হাত ও পা বেঁধে ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সেই অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক অরবিন্দু মণ্ডল (৭৩) মারা গেছেন। রবিবার (১০ নভেম্বর) বিকাল ৪টার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি মারা যান। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
মৃত অরবিন্দু মণ্ডল সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বাঁশতলা রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক ছিলেন।
এদিকে, অরবিন্দ মণ্ডলের মৃত্যুর খবর এলাকায় পৌঁছালে দুই সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যান তার ছেলে বিশ্বজিৎ মণ্ডল ও তার স্ত্রী কবিতা মণ্ডল। তবে বাবার মৃত্যুর জন্য দাদা ও বউদি ছাড়াও স্থানীয় ইউপি সদস্য সন্তোষ কুমার মণ্ডল, একই গ্রামের কলেজশিক্ষক গণেশ চন্দ্র গাইনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন প্রয়াত অরবিন্দু মণ্ডলের মেয়ে অঞ্জনা মণ্ডল।
তিনি জানান, তার বাবা অরবিন্দু মণ্ডল বাঁশতলা রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২০১০ সালের ৯ জুন অবসরে যান। ক্রমশ তার শ্রবণশক্তি হারিয়ে যায়। বড় দিদি বনলতা সরকার ভারত থেকে বাবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। অবসরে যাওয়ার পর থেকে দাদা বিশ্বনাথ ও বউদি কবিতা বাবাকে ভালো চোখে দেখতেন না। তাকে কারণে-অকারণে নির্যাতন করতেন।
বিষয়টি তার বড় দিদি ভারতের নৈহাটীর বাসিন্দা বনলতা সরকার জানতে পেরে স্থানীয় বাবুরাম কাকার ছেলে নকুলকে দিয়ে দাদা-বউদির নির্যাতনের ছবি-ভিডিও করে তাকে পাঠাতে বলে। গত বছর মা চপলা মণ্ডল মারা যাওয়ার পর থেকে নিজেই রান্না করে খেতেন বাবা। ছোট কাকা সুভাষ মণ্ডল, আত্মীয়স্বজন বা প্রতিবেশীরা তাকে খেতে দিতে চাইলেও ছেলে ও পুত্রবধূর গালাগালির কারণে কেউ খাবার দিতে সাহস পেতো না। সে কারণে বাবা নিজেই রান্না করে খেতেন। গত ২ নভেম্বর সকালে বাবাকে বাড়ির উঠানে ফেলে মশারির নেট দিয়ে হাতে ও পায়ে বেঁধে গালিগালাজের পাশাপাশি মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে। এ ঘটনার পর থেকে বৃদ্ধ বাবা খুবই ভেঙে পড়েন।
তিনি আরও বলেন, ‘রবিবার দুপুরে দিকে হঠাৎ করে বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিলে হয়তো ভালো চিকিৎসা পেতেন। দাদা-বউদির অবহেলার কারণে অনেক দেরিতে তাকে হাসপাতালে নেওয়ায় চিকিৎসা না পেয়ে পথেই বাবা মারা যায়। বাবা মারা যাওয়ার পরপরই দুই সন্তানকে নিয়ে দাদা ও বউদি বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছেন। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
এর আগে, গত ৪ নভেম্বর অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক অরবিন্দু মণ্ডলকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওটি নজরে আসে স্থানীয় থানা-পুলিশের। পরদিন ৫ নভেম্বর পুলিশ সেই শিক্ষকের বাড়ি গেলেও তিনি ছেলে-পুত্রবধূর নামে কোনও অভিযোগ করেননি। বরং নাতি-নাতনিদের মুখপানে চেয়ে তাদের ক্ষমা করে দেন।
সে সময় সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার (এসপি) মনিরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি আমার নজরে আসার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়েছিল। বর্তমানে বিশ্বনাথ ও তার স্ত্রী পলাতক। তবে এ ঘটনায় অরবিন্দু মণ্ডল থানায় কোনও অভিযোগ করতে চান না। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’