হোম ফিচার সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের বরেয়া মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক আবু সাদ’র বিরুদ্ধে এক শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগ, স্বস্ত্রীক আত্মগোপনে

নিজস্ব প্রতিনিধি :

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বরেয়া মিলনী মাধ্যমিক বিদ্য্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক আবু সাদের বিরুদ্ধে বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছে। ভাড়া বাসায় হেফজোখানা খুলে কোমলমতী শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিন ধরে তিনি বলাৎকার করে আসছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় এক শিক্ষার্থীর বাবা থানায় অভিযোগ দায়ের করায় সস্ত্রীক আত্মগোপন করেছেন ওই শিক্ষক।

শিক্ষক আবু সাদ শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের জাহাজঘাটা এলাকার ফজলুল হকের ছেলে।

বরেয়া গ্রামের এক মৎস্য ঘের মালিক জানান, গত আট মাস আগে তার ছোট ছেলেকে (১১) বরেয়া মিলনী মাধ্যমিক বিদ্য্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক আবু সাদের হেফজখানায় এক হাজার টাকা মাসিক বেতনে পড়াশুনা করার জন্য ভর্তি করান। একই বিদ্য্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আবু মুছার ছেলে ইলিয়াস হোসেন ও সহকারি শিক্ষক হাসানুজ্জামানের ছেলে নাঈমও ওই হেফজখানায় পড়াশুনা করতো। ওই শিক্ষক বর্তমানে জাফরপুর গ্রামের চৌকিদার আব্দুল গফফারের বাড়ির দোতলায় ভাড়াটিয়া হিসেবে সেখানে হেফজোখানা পরিচালনা করে আসছেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, হেফজোখানায় ভর্তি করার কিছুদিন যেতে না যেতেই তার ছেলেকে গভীর রাতে কৌশলে শৌচাগারে ডেকে নিয়ে বলাৎকার করতো শিক্ষক আবু সাদ। বিষয়টি কাউকে জানালে খুন করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হতো। যৌন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বুধবার বলাৎকারের বিষয়টি তাকে ও পরিবারের সদস্যদের অবহিত করে ছেলে। বিষয়টি তিনি বৃহষ্পতিবার তারালী ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন ছোটকে অবহিত করেন। ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ি ইউপি সদস্য এনাম তাকে ও তার ছেলেকে নিয়ে থানায় যান। কালিগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বিস্তারিত জানার পর উপ-পরিদর্শক আবু সাঈদকে জাফরপুর গ্রামে পাঠান।

উপ-পরিদর্শক আবু সাঈদ বৃহষ্পতিবার বেলা ১১টার দিকে জাফরপুর গ্রামের ফিরোজের দোকানে বসে ওই শিক্ষক আবু সাদকে ডেকে আনার জন্য এক যুবককে পাঠিয়ে দেন। অবস্থা বেগতিক বুঝে ওই শিক্ষক কৌশলে পালিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর তার দ্বিতীয় স্ত্রী মমতাজ তার তিন মাসের সন্তানকে নিয়ে বাসা ছেড়ে চলে যান। ওই শিক্ষক বরেয়া মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের আগে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিন বছর চাকুরি করার সুবাদে নারী ঘটিত কেলেঙ্কারীরতে জড়িয়ে পড়েন বলে তিনি আরো জানান। এ ছাড়াও পড়াশুনা করাকাালিন বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েরা স্কুলে এলে ওই শিক্ষক তাদের ডেকে আপত্তিকর প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে থাকেন।

বরেয়া মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আবু মুসা জানান, সহকর্মী আবু সাদ এর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বলাৎকারের ঘটনার অন্যদের কাছ থেকে জানতে পেরে নিজের ছেলেকে কয়েকদিন আগে হেফজখানা থেকে ছাড়িয়ে এনেছেন। বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় প্রথম স্ত্রীকে একমাত্র পুত্র সন্তানসহ তালাক দিয়েছেন ওই শিক্ষক আবু সাদ। তিনি ওই শিক্ষকের দৃষান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

বরেয়া মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার বৈদ্য জানান, বিষয়টি তার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না। তবে কেউ যদি শিক্ষক আবু সাদ এর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ আনেন সেক্ষেত্রে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই ঘটনার সত্যত্যা যাঁচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তারালী ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন ছোট জানান, ঘটনাটি জানা মাত্রই ওসির সঙ্গে কথা বলে ভিকটিম ও তার বাবাকে থানায় পাঠানো হয়।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক আবু সাদ এর সঙ্গে তার ০১৩১৭৮০৯৭৫২ নং মোবাইল ফোনে কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যাওয়ায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফার সরকারী মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলে উপ-পরিদর্শক খবিরউদ্দিন রিসিভ করে জানান, স্যার বাহিরে আছেন। তবে, এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক আবু সাদের বিরুদ্ধে নির্যাতিত শিক্ষার্থীর বাবা শুক্রবার সকালে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে তিনি জানান। তিনি আরো জানান, আসামীকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন