নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে বারান্দার গ্রীলের তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে পরিবারের তিন সদস্যকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখমের পর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নয় ভরি সোনার গহনা ও ২২ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে একদল ডাকাত। শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের রামনগর গ্রমে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। জখম হওয়া পরিবারের সদস্যদের শনিবার সকালে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
কালিগঞ্জ উপজেলার রামনগর গ্রামের সীতানাথ কর্মকারের ছেলে মধুসুধন কর্মকার জানান, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে খাওয়া দাওয়া শেষে তিনি ও তার স্ত্রী স্বরস্বতী রানী কর্মকার ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ১টার দিকে বারান্দায় গ্রীলের শব্দ শুনে তিনি ঘরের দরজা খুলে দেখেন বারান্দার কোলাবসিগ্যাল গেটের তালা ভেঙে ৫ থেকে ৬ জনের মুখোশ পরিহিত একদল ডাকাত (বয়স ৩০ থেকে ৩৫ এর মধ্যে) ঘরে ঢুকে পড়ে। এদের মধ্যে একজন তার পরিহিত লুঙ্গি খুলে দেয়। তিনি চিৎকার করলে ডাকাত দলের সদস্যরা তার বাম হাতের দুটি স্থানে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করা হয়। স্ত্রী সরস্বতী তাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে তার বাম হাতে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে হাড় ভেঙে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে ডাকাত দলের সদস্যরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শোকেস এর তালা ভেঙে কাপড়ের মধ্যে লুকিয়ে রাখা মেয়ে তাপসী ও স্ত্রী সরস্বতীর নয় ভরি ওজনের সোনার গহনা ও নগদ ২২ হাজার টাকা নিয়ে ডাকাত দলের সদস্যরা চলে যায়। এরপর রাত আড়াইটার দিকে কালিগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক হারুণ অর রশিদসহ একদল পুলিশ আসে। পুলিশ ডাকাত দলের ফেলে যাওয়া একটি মানি ব্যাগ ও এক জোড়া চটি জুতা উদ্ধার করে। মানি ব্যাগের মধ্যে একটি মোবাইল সিম ও আশাশুনির বদরতলা মাছের সেটের মাছ বিক্রির কয়েকটি ক্লিপ ছিল।
মধুসুধন কর্মকারের ভাই ও বন্দকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মহাদেব কর্মকার জানান, ভাইয়ের বাড়ির চিৎকার শুনে রাত একটার পরপরই তার ঘুম ভেঙে যায়। দরজা খুলে বারান্দায় আসতেই ৫/৬ জনের একদল সশস্ত্র মুখোশ পরিহিত ডাকাত তাকে ঘিরে ফেলে। ঘরে ঢুকতে বাধা দেওয়ায় তার বাম হাতে, বাম কানে, গলা ও কপালে ছুরি দিয়ে খুচিয়ে জখম করে। এ সময় গ্রামবাসী চলে আসছে বুঝতে পেরে ডাকাত দলের সদস্যরা পালিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী রামনগর গ্রামের উদয় কর্মকার জানান, একটি বাড়িতে দাওয়াত খাওয়া শেষে বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে তার বাড়িতে রেখে শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি বাড়িতে আসেন। সে সময় মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। রাত ১টার দিকে ঘুমোতে যাওয়ার আগে তিনি পিছনের বাড়ি মধুসুধন কর্মকার ও মহাদেব কর্মকারের বাড়ি থেকে চিৎকার শুনতে পান। কৌশলে মধুসুধন কর্মকারের বাড়ির পিছনের জানালা খুলতেই মধুসুধন ও তার স্ত্রী স্বরস্বতীকে অস্ত্রধারী কয়েকজন গলায় অস্ত্র ধরে রাখা অবস্থায় দেখতে পান।
সেখান থেকে বেরিয়ে এসে মোবাইল ফোনে বিষয়টি প্রতিবেশীদের অবহিত করেন। গ্রামবাসি ছুটে এলে ডাকাত দলের সদস্যরা মহাদেব কর্মকারের বাড়ি থেকে বের হয়ে তাদের বাড়ির প্রাচীরের পাশে সরু গলি দিয়ে বিলের দিকে চলে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করে গ্রাম ডাক্তার আব্দুল কাদেরকে দিয়ে জখমীদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে শনিবার সকালে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান জানান, তিনি ছুটিতে রয়েছেন। তবে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছে। ডাকাতি না চুরি সে সম্পর্কে কোন মন্তব্য না করেই তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।