হোম অন্যান্য সাতক্ষীরার উপকুলীয় উপজেলা আশাশুনি ও শ্যামনগরের খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদের প্রবল জায়ারের পানিতে বেঁড়িবাঁধ ভেঙে ভেসে গেছে অর্ধশতাধিক গ্রাম

সাতক্ষীরার উপকুলীয় উপজেলা আশাশুনি ও শ্যামনগরের খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদের প্রবল জায়ারের পানিতে বেঁড়িবাঁধ ভেঙে ভেসে গেছে অর্ধশতাধিক গ্রাম

কর্তৃক
০ মন্তব্য 621 ভিউজ

নিজস্ব প্রতিনিধি:

ঘূর্ণঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরার উপকুলীয় উপজেলা আশাশুনি ও শ্যামনগরের খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদের প্রবল জোয়ারের পানিতে জরাজীর্ণ বেঁড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে অর্ধশতাধিক গ্রাম। ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি। পানিতে ভেসে গেছে গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি। ধ্বসে পড়েছে শতাধিক কাঁচাঘরবাড়ি।

আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা ও আশাশুনি সদর এবং শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ও কাশিমাড়ি ইউনিয়নে যাতায়াতের প্রধান সড়কের (পাকা রাস্তার) উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানির স্রোতে। এর ফলে নষ্ট হয়ে গেছে এ সব এলাকার যাতায়াতের প্রধান প্রধান সড়ক গুলো। বিশেষ করে প্রতাপনগর ইউনিয়নের অবস্থা বেশী ভয়াবহ সেখানে কেউ মারা গেলে মাটি দেয়ার জায়গা টুকু পর্যন্ত নাই। এদিকে, প্রবল জোয়ারে চাপে বেঁড়িবাধ ভেঙে ও গত ২/৩ দিনের টানা বর্ষনে পানি বন্দী হয়ে পড়েছে জেলার লক্ষাধিক মানুষ। গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে সাতক্ষীরার উপকুলীয় এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৩০টি পয়েন্টে সাড়ে ৫৭ কিলোমিটার বেঁড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।

পানিতে ভেসে গেছে গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি ছবি: প্রতিনিধি

 

সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায়। ওই সময় বেশকিছু স্থানে রিং বাধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করা হলেও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের বড় একটি অংশের লোকালয়ে গত তিন মাস ধরে চলে জোয়ার-ভাটা। প্রতাপনগর ইউনিয়নের চাকলা ও কুড়িকাউনিয়া এবং শ্রীউলা ইউনয়নের হাজরাখালী পয়েন্টে বেঁড়িবাধ ভেঙে এতই গভীর হয়ে যায় যা সংস্কার করা এতদিন সম্ভব হয়নি। তার উপর বর্তমান অমাবশ্যার গোনে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩/৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত দুই দিনের জোয়ারে ও প্রবল বর্ষনে যে সমস্ত এলাকায় রিংবাধ দিয়ে পানি বন্ধ করা হয়েছিল সেগুলো আবারো ছুটে যায়। এরফলে জোয়ার-ভাটা বইছে লোকালয়ে ও বাড়ির উঠানে। মানবেতর জীবন যাপন করছে মানুষ। প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। দূর্গত এলাকায় ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। এতে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে বিশাল জনগোষ্ঠী। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির অভাব। অনেকেই এখন বাড়িঘর ছেড়ে শহরের দিকে ছুটছেন।

অনেকেই এখন বাড়িঘর ছেড়ে শহরের দিকে ছুটছেন। ছবি:প্রতিনিধি

 

জানা গেছে, আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের চাকলা, দিঘলারাটি, সুভদ্রকাটি, কুড়িকাউনিয়া, নয়াশ্রীপুর, হরিশখালি, হরিখালী, হিজলিয়া, কোলা, আশাশুনি সদর ইউনিয়নের বলাবাড়িয়া, দয়ারঘাট, গাইয়াখালী, ঠাকুরাবাদ, দাশেরাটি, কমলাপুর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালি, কোলা, শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের লেবুবুনিয়া, গাবুরা ও খলসিখালী এবং কাশিমাড়ি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামসহ দুই উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত। পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় চরম বিপাকে দিন কাটাচ্ছে জেলার লক্ষাধিক মানুষ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড বেড়িবাঁধ গুলো ঠিক রাখতে পারলে তাদের আজ পানিতে ডুবে মরতে হতোনা। তাদের অভিযোগ সরকারি ত্রাণ যা আসে তা তাদের অনেকেই পাননা। তাই, তাদের দাবী, তারা ত্রান চাননা, চান টেকসই বেড়িবাঁধ।

তাদের দাবী, তারা ত্রান চাননা, চান টেকসই বেড়িবাঁধ। ছবি:প্রতিনিধি

 

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করে জানান, আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বেঁড়িবাধ গুলোর কয়েকটি স্থানে প্রবল বর্ষন ও জোয়ারের চাপে আবারও ভেঙে গিয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। বিশেষ করে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আনুলিয়া ও শ্যমানগর উপজেলার গাবুরা ও কাশিমাড়ি ইউনিয়নের বেড়িবাধের কয়েকটি পয়েন্টে ভেঙে গিয়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই দুই উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। দূর্গত এলাকার মানুষ অবর্ণণীয় কষ্টের মধ্যে রয়েছে। ইতিমধ্যে সরকারের ত্রান ও দূর্যোগ মন্ত্রনালয় থেকে দুটি উপজেলার দূর্গতদের মাঝে ৯০ মেট্রিকটন চাউল ও নগদ ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে দ্রæতই সেখানে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন