হোম জাতীয় সাংবাদিকদের হুমকি দেয়ায় বিএনপিকে একহাত নিলেন জয়

জাতীয় ডেস্ক:

সাংবাদিকদের হুমকি দেয়ায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। শনিবার (১৪ অক্টোবর) এক এক্স (টুইটার) বার্তায় দলটির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি এখন নিজেদের দাবি ও আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সংবাদ পরিবেশন না করায় সাংবাদিকদের ভয়াবহ পরিণতির হুমকি দিতে শুরু করেছে।’

তিনি বলেন, বিএনপিবিডিমেডিকেলসেল নামে একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এই হুমকি এসেছে। জয় বলেন, ‘গণতন্ত্রে মুক্ত গণমাধ্যম সরকার ও বিরোধী দল উভয়েরই জবাবদিহি নিশ্চিত করে। কিন্তু বিএনপি গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করা থেকে বিরত রাখতে চাইছে। এমনকি ভয়ভীতিও প্রদর্শন করছে।’

প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘গণতন্ত্রে গণমাধ্যমের শক্তি এই ধারণার মধ্যে নিহিত যে, সাংবাদিকদের কাউকেই ছাড় দেয়া উচিত নয়— না ক্ষমতাসীন দল, না বিরোধীদের। কিন্তু সাংবাদিকদের উদ্দেশে বিএনপির মিডিয়া সেলের এমন হুমকি দলটির চরম অসহিষ্ণু চেহারাই প্রকাশ করছে। সেইসঙ্গে এটাও স্পষ্ট যে, ক্ষমতায় এলে বিএনপি গণমাধ্যমের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে, যেমনটা তারা ২০০১-০৬ সালে করেছিল।’

গত বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজ থেকে একটি পোস্ট করা হয়। তাতে হুমকি দিয়ে বলা হয়, ‘আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি কোন মিডিয়া গণতন্ত্রের পক্ষে আর কোনটি ‘স্বৈরাচারের পক্ষে’।

হুমকিমূলক বার্তার পাশাপাশি ওই পোস্টে ‘#টেকব্যাংকবাংলাদেশ, #স্টেপডাউনহাসিনা, #রেস্টোরকেয়ারটেকারগভ’ প্রভৃতি স্লোগান ব্যবহার করা হয়। পোস্টটি প্রকাশ হওয়ার পরই নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন দেশের গণমাধ্যমকর্মীরা। তারা বলছেন, বিএনপির হাতে দেশের গণমাধ্যম এবং এর কর্মীরা নিরাপদ নয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় তারা বিশ্বাসী না।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০২ সালের ২৯ আগস্ট ‘একুশে টিভি’ বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ উঠে, আইনি মারপ্যাঁচ ও রাজনৈতিক কূটচালে বন্ধ করে দেয়া হয় দেশের প্রথম বেসরকারি টেরিস্ট্রিয়াল চ্যানেলটি। যদিও ২০০৫ সালে আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়ে ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ আবারও সম্প্রচারে আসে চ্যানেলটি।

কিন্তু গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের সেই ধারা থেকে আর বের হয়ে আসতে পারেনি বিএনপি। সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমের প্রতি বিএনপির বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব আবারও সেই কালো অধ্যায়ের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।

বিএনপির ‘গণমাধ্যম বয়কট’

সম্প্রতি বিএনপি ‘সময়’ ও ‘একাত্তর’ টেলিভিশন বয়কটের ঘোষণা দেয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে, সময় ও একাত্তর টিভির টকশোতে অংশগ্রহণ করা থেকে বিএনপি নেতাদের বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়।

বলা হয়, ‘কয়েকটি টিভি চ্যানেলের মালিক পক্ষ সরকারি দলকে খুশি করতে আমাদের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক প্রতিবেদন করে আসছে। কখনও কখনও টকশো মঞ্চটাই পরিকল্পিতভাবে সাজানো হয় আমাদের দলকে হেয় করতে।’

এর আগে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে জোটভুক্ত দলের কর্মসূচিতেও একাত্তর টিভি ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির সংবাদকর্মীদের স্বাগত জানানো হবে না বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি।

গণমাধ্যমকে হুমকি

এদিকে, গণমাধ্যমও যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতে যুক্ত হতে পারে- ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের এমন মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। যদিও এমন মন্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাকে চিঠি দিয়েছে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ।

এরপর সবশেষ বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজ থেকে দেয়া ‘আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি কোন মিডিয়া গণতন্ত্রের পক্ষে আর কোনটি স্বৈরাচারের পক্ষে’- এই পোস্টের পর দেশের গণমাধ্যমকর্মীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন