হোম আন্তর্জাতিক সাংবাদিক হত্যা কি ইসরাইলের নয়া কৌশল?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

ফিলিস্তিনিদের আর্তনাদ আড়াল করতে সাংবাদিক হত্যা ইসরাইলের নতুন কৌশল বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফার তথ্য অনুযায়ী, দুই দশকে অর্ধশতাধিক গণমাধ্যমকর্মীকে হত্যা করেছে ইসরাইলি সেনারা।

ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে আবারও প্রাণ গেল সংবাদকর্মীর। বুধবার (১১ মে) জেনিন শহরে ইসরাইলি সেনাদের অভিযান চলাকালে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার সিনিয়র সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ নিহত হন। শিরিন হত্যার ঘটনায় ক্ষোভে ফুসছে বিশ্ব। নিন্দা জানাচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মী থেকে শুরু করে বিশ্বনেতারাও।

এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে অসংখ্য সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, সংবাদকর্মীরা নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি দমনপীড়নের যে চিত্র তুলে ধরছেন তা বন্ধ করতে গণমাধ্যমকর্মীদের হত্যায় মেতে উঠেছে তেলআবিব।

সম্প্রতি অধিকৃত পশ্চিম তীরে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত এলাকা জেনিনে অভিযান জোরদার করে ইসরাইল। সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে অসংখ্য ফিলিস্তিনিকে হত্যার পাশাপাশি চলছে ব্যাপক ধরপাকড়। বুধবার (১১ মে) এমনই এক অভিযানের সময় সংবাদ সংগ্রহে যান শিরিন আকলেহ। এ সময় ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হন তিনি। আল-জাজিরার দাবি, শিরিন আকলেহকে ঠান্ডা মাথায় খুন করেছে ইসরাইলি বাহিনী।

কে এই শিরিন আকলেহ?

ফিলিস্তিনিদের কাছে এক নির্ভরতার প্রতীক ছিলেন শিরিন আকলেহ। ১৯৭১ সালে জেরুজালেমে জন্মগ্রহণ করেন খ্যাতিমান এই সাংবাদিক। জর্ডানের ইয়ারমুক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষে ফিলিস্তিনে ফিরে এসে কাজ শুরু করেন গণমাধ্যমে। ১৯৯৭ সালে তিনি যোগ দেন আল-জাজিরায়। প্রায় ২৬ বছর অসীম সাহসিকতার সঙ্গে সংবাদমাধ্যমটিতে কাজ করেন শিরিন।

ঠান্ডা মাথায় খুন?

২০০০ সালে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ইন্তিফাদা আন্দোলনের সময় পশ্চিম তীরের প্রধান শহরগুলোতে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বড় আকারের আক্রমণের সংবাদ প্রকাশের জন্য অনেকে আজও স্মরণ করেন শিরিন আকলেহকে। খুব অল্প সময়ে ফিলিস্তিনিদের কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠেন তিনি। তিনি ছিলেন মিডিয়া আইকন বা মডেল। স্থানীয়দের মতে, তিনি প্রত্যেক ফিলিস্তিনির ঘরে ছিলেন। তিনি প্রত্যেক ফিলিস্তিনির কষ্টের কথা জানতেন। তিনি ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের কণ্ঠস্বর। আর সে কারণেই ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে তাকে।

পাল্পাপাল্টি দোষারোপ

ফিলিস্তিনের দাবি, ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতেই নিহত হন শিরিন। অন্যদিকে ইসরাইলের দাবি, আল-জাজিরার ওই সাংবাদিক নিহত হন ফিলিস্তিনিদের ছোড়া গুলিতে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেত বলেন, শিরিন সম্ভবত ফিলিস্তিনিদের এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হয়েছেন। ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। জেনিনে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরাইলি সেনাদের চলছে ব্যাপক সংঘর্ষ। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি ইসরাইলি সেনাবাহিনী জেনিনে অভিযান জোরদার করে।

যৌথ তদন্তের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান

শিরিন হত্যার পেছনে সম্পূর্ণভাবে ইসরাইলকে দায়ী করে ঘটনা তদন্তে ইসরাইলের সঙ্গে যৌথ তদন্তের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট। এই হত্যার বিচার চাইতে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) দ্বারস্থ হবেন বলে জানান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।

সাংবাদিক হত্যায় ইসরাইলি ইতিহাস

ফিলিস্তিনের সংবাদ সংস্থা ওয়াফার তথ্যমতে, ১৯৭২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অসংখ্য সাংবাদিককে হত্যা করেছে ইসরাইল। ২০০০ সালে দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরুর পর এ সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকে বলে দাবি করে ওয়াফা। ২০০২ সালে অধিকৃত পশ্চিমতীরে ইসরাইলি হামলার সময় থেকে ফিলিস্তিনি সাংবাদিকরা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে থাকেন। ২০১৪ সালে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের সময় অন্তত ১৭ ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে ইসরাইল হত্যা করে বলে দাবি করা হয়।

তবে ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের সিন্ডিকেটের তথ্য অনুযায়ী, এ সংখ্যা আরও বেশি। ২০০২ সালে ইন্তিফাদা শুরুর পর থেকে ৪৫ জনের বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন ইসরাইলি নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে। তবে ফিলিস্তিনের সাংবাদিক সমিতি বলছে, এ সংখ্যা আরও বেশি। অন্তত ৫৫ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নিরীহ ফিলিস্তিনিদের আর্তনাদ বিশ্বাবাসীর কাছে যেন না পৌঁছাতে পারে, তা নিশ্চিত করতে সাংবাদিক হত্যার কৌশল বেছে নিয়েছে তেল আবিব প্রশাসন। আন্তর্জাতিক আদালত ও মানবাধিকার সংস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে ইসরাইল। এ অবস্থায় বিশ্বে গণমাধ্যমকর্মীদের সুরক্ষা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গণমাধ্যমের নীতি নির্ধারক ও বিশেষজ্ঞরা।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন