অনলাইন ডেস্ক :
এই দু’ দিনে একটি কাঁচা লাউ সবাই ভাগ করে খান। ১৯ জনের মধ্যে দু’ জনের মৃত্যুও হয়।
উত্তাল সমুদ্রের মধ্যে ভেলায় ভেসে থেকে কোনওরকমে প্রাণ বেঁচেছিল৷ কিন্তু তার মধ্যেই হারাতে হয়েছে দুই সঙ্গীকে৷ তার পর সমুদ্রের বুকে চরার খোঁজ মিললেও সেখানে বাঘের ভয়৷ তাই গাছের উপরেই কাটাতে হয়েছে রাত৷ সুন্দরবনে উদ্ধার হওয়া ১৭ জন বাংলাদেশী মৎস্যবীর অভিজ্ঞতা ছিল এমনই ভয়াবহ৷
গত ১৫ অগাস্ট বাংলাদেশের পাথরঘাটা থেকে মোট ১৯ জন মৎস্যজীবী এফবি ভাই ভাই নামে একটি ট্রলারে চেপে মাছ ধরতে গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেন৷ ১৬ তারিখ মাছ ধরছেন তাঁরা৷ কিন্তু গভীর নিম্নচাপের জেরে ১৭ তারিখ থেকে আবহাওয়া খারাপ হতে থাকে৷ প্রবল জলোচ্ছ্বাসে নীচের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ট্রলারে জল ঢুকতে থাকে৷ শেষ পর্যন্ত জীবন বাঁচাতে লাইফ জ্যাকেট ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে নিজেদের বাঁচার তাগিতে ভেলা তৈরি করেন বাংলাদেশী মৎস্যজীবীরা। ভেলা সম্বল করে দুদিন দু’ রাত কেটে উত্তাল সমুদ্রে।
এই দু’ দিনে একটি কাঁচা লাউ সবাই ভাগ করে খান। ১৯ জনের মধ্যে দু’ জনের মৃত্যুও হয়৷ শেষ পর্যন্ত ওই দু’ জনকে মাঝ সমুদ্রে উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যেই ফেলে আসতে বাধ্য হন মৎস্যজীবীরা৷
শেষ পর্যন্ত ভেলায় ভাসতে ভাসতেই সুন্দরবনের কালি বাড়ি দ্বীপে তারা আশ্রয় নেয়। সেখানে বাঘের ভয়। রাত কাটে জঙ্গলের গাছের উপর। গতকাল বেলা ১২ টা নাগাদ একটি কাঁকড়া ধরার নৌকো দেখে সাহায্যের আবেদন জানান ওই বাংলাদেশি মৎস্যজীবীরা। নৌকা করে ১৭ জন বাংলাদেশীকে নিয়ে আসা হয় মৈপীঠ কোস্টাল থানায়।
সেখানে বেশ কয়েকজনের শারীরিক অসুস্থতা লক্ষ্য করেন পুলিশ আধিকারিক মধুসূদন পাল। রাতেই তাঁদের পাঠানো হয় জয়নগর কুলতলি গ্রামীণ হাসপাতালে। প্রত্যেকের থাকার জন্য ত্রাণ শিবিরের ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের আক্ষেপ, দুই সঙ্গীকে তাঁরা বাঁচাতে পারলেন না। এখনও ছেড়ে আশা দুই সঙ্গীর কথা বলতে গিয়ে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসছে ওই মৎস্যজীবীদের। নিজেরাও যে বেঁচে আছেন, তাও তাঁরা ভাবতে পারছেন না৷ গত ৩৬ ঘণ্টায় গভীর সমুদ্রে মৎস্যজীবীর ট্রলার ছোট নৌকো ও ভারতীয় নৌসেনা মোট ১০৪ জন বাংলাদেশী মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করেছে।