হোম জাতীয় সংসদ এলাকায় আপাতত হচ্ছে না প্রধানমন্ত্রীর নতুন বাসভবন

সংসদ এলাকায় আপাতত হচ্ছে না প্রধানমন্ত্রীর নতুন বাসভবন

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 120 ভিউজ

নিউজ ডেস্ক:
জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার ভেতরে দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন নির্মাণের উদ্যোগ থেকে কিছুটা সরে এসেছে সরকার। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের জন্য বিদ্যমান পাশাপাশি দুটি ভবনকে একীভূত করে সেখানে দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন স্থাপনের বিষয় বিবেচনায় ছিল। কিন্তু নানামুখী জটিলতায় এখন এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছুটা ধীরগতিতে এগোনোর কৌশল নেওয়া হয়েছে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংসদ সচিবালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের ভবন দুটির মধ্যে যাতায়াতের সুবিধার জন্য দুই স্তরবিশিষ্ট একটি করিডোর নির্মাণ করলেই সেটি হবে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন– এমন পরিকল্পনা থেকেই গৃহায়ন ও গণপূর্তসচিব নজরুল ইসলাম, সংসদ সচিবালয়ের সচিব কানিজ মওলা, প্রধান উপদেষ্টার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল ফেরদৌস হাসান ও এসএসএফ মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুব উস সামাদসহ একটি প্রতিনিধি দল ভবন দুটিসহ পরিদর্শন করেন। এছাড়া একাধিকবার পুরো এলাকা পরিদর্শন করেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও। কিন্তু নানা জটিলতায় আপাতত এ উদ্যোগ থেকে সরে আসার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, সরকারের এমন উদ্যোগের বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশিত হওয়ার পর জনমনে প্রশ্ন উঠেছে– স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাড়ি দুটিকে প্রধানমন্ত্রীর জন্য বাসভবন বানানো হলে নতুন সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার কোথায় থাকবেন? এ বিষয়ে সরকার কোনও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা? শুধু তাই নয়, নতুন বাড়িতে প্রধানমন্ত্রী থাকলেই তো হবে না, তার দফতর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও নিরাপত্তাকর্মীরা কোথায় থাকবেন? তাদের জন্য নতুন করে বাড়ি বানাতে হবে। সেই জায়গা কোথায়? সংসদ ভবন এলাকায় বানানো হলে লুই আই কানের নকশার কী পরিণতি হবে?

ইতোমধ্যেই অভিযোগ উঠেছে, লুই আই কানের নকশা ভেঙেই তৈরি করা হয়েছে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবন। এছাড়া একইভাবে ১০ একর জমির ওপর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।

অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর জন্য বাসভবন নির্মাণ করতে হলে এ সংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহণ করতে হয়। এই প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বা জাতীয় সংসদ সচিবালয়কে। প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ থাকতে হবে। বরাদ্দ নিশ্চিত করবে অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য সরকারের নেওয়া মূল এডিপিতে (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) এ ধরণের কোনও প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।

অপরদিকে, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরেরর জন্য নেওয়া এডিপিতেও এ ধরনের কোনও প্রকল্প পাওয়া যায়নি। আবার জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে নেওয়া ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপিতেও এ সংক্রান্ত কোনও প্রকল্প নেই বলে জানা গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানিয়েছে, এ ধরনের কোনও প্রকল্প বা সরকারের কর্মসূচি বাবদ কোনও অর্থ বরাদ্দ এখনও পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।

একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন কোথায় হবে সেটি ঠিক করবে আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে আসা নতুন সরকার। এটি ঠিক করার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের নয়। একইভাবে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত হবে সেটিও নতুন সরকার ঠিক করবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে গণপূর্ত সচিব নজরুল ইসলাম ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব কানিজ মাওলার সঙ্গে একাধিকবার ফোনে ও সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পায়নি বাংলা ট্রিবিউন।

জানতে চাইলে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একাধিক অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা দেখভাল করছেন। এর সঙ্গে আমাদের কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই।’ একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে গণভবন নির্মাণ করা হয়। তবে তিনি গণভবনে বসবাস করেননি। এইচএম এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৫ সালে গণভবনকে সংস্কার করে ‘করতোয়া’ নাম দিয়ে এটিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তখন তিনি গণভবন নাম পুনর্বহাল করে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে সেখানে বসবাস করেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গণভবনে থাকেননি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর গণভবন সংস্কার করা হয়। ২০১০ সালের মার্চে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবার গণভবনে ওঠেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত তিনি এই ভবনেই ছিলেন। তবে ৫ আগস্ট বিক্ষুব্ধ জনতা গণভবনে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। তখন থেকে সেটি অকার্যকর হয়ে যায়। পরে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর মধ্য দিয়েই প্রশ্ন ওঠে নতুন প্রধানমন্ত্রী তাহলে কোথায় বসবাস করবেন?

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন