রাজনীতি ডেস্ক:
সরকারের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে শয়তানের সঙ্গে আঁতাত করতেও আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ মিলনায়তনে ‘সংবিধান ও গণতন্ত্র: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে গণঅধিকার পরিষদ।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘শয়তান যেন আমাকে নিয়ন্ত্রণ না করে আমি যেন শয়তানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি সেই দিকটা খেয়াল রাখতে হবে। তবে শেখ হাসিনার অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে আমার শয়তানের সঙ্গে আঁতাত করতেও আপত্তি নেই।’
বিচার বিভাগ স্বাধীন না হলে আইনের শাসন সম্ভব নয় মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলন, বিচার বিভাগ যদি স্বাধীন না থাকে তাহলে আইনের সুশাসন হয় না। বর্তমান সরকারের আমলে বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়। আজকের সময়ে আইনের খুঁটিনাটি বিষয় কিন্তু সাধারণ মানুষও বুঝে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সংবিধান হলো রাষ্ট্রর নিয়ম ব্যবস্থা। একটি রাষ্ট্র কিভাবে চলবে তা সংবিধানে লিখা থাকে। গণতন্ত্র হলো মানুষের অধিকার, যার মাধ্যমে মানুষ তার নিজের অধিকারের কথা বলে।
তিনি বলেন, কেউ ভিন্ন মত প্রকাশ করলে তাকে চাকরিচ্যুত করার কথা কি সংবিধানে লিখা আছে? ভোট চুরির কথা কি সংবিধানে লিখা আছে? মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করে মামলা দেয়ার কথা কি সংবিধানে লিখা আছে? নেই। কিন্তু এই সরকার এসবই করছে। যদিও তারা সংবিধানের বাহিরে গিয়ে দেশ চালাতে পারে না।
আদালত অবমাননায় সুনির্দিষ্ট কোনো সাজা নেই মন্তব্য করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আদালত অবমাননায় সুনির্দিষ্ট কোনো সাজা নেই। এমনকি কতটুকু অবমাননা হলে ততটুকু সাজা হবে তাও নেই। তাহলে আদালত অবমাননার বিষয়টি কিভাবে আইনের আওতায় আসবে?
তিনি আরও বলেন, বিচারিক আদালতে গেলে সাধারণত যে সাজা দেয়া হয় অনেক সময় উচ্চ আদালতে আসলে তা কমে আসে। কিন্তু এই সরকারের আমলে তার ক্ষেত্রে উলটো ঘটনা ঘটছে। আমি আদালতের অবমাননা করতে চাই না। করবোও না। কিন্তু এসব রায় প্রশ্নবিদ্ধ করে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আগের নির্বাচনগুলোর চেয়ে এখনকার নির্বাচনে কেন এতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে? আসলে অন্যায়- অনিয়মের মাত্রা এতোটাই তীব্র হয়ে পড়েছে যে মানুষ এখন ক্ষুব্ধ ও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
গয়েশ্বর বলেন, এই সরকারের ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক আছে। এমনকি পাকিস্তানের সঙ্গেও সম্পর্ক আছে। পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই এটা তারা বলতে পারবে না। যাদের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক আছে তাদের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক অবশ্যই আছে।
এখন সরকার সেলফি নির্ভর মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সেলফি তুলে প্রচার করার জন্য। অথচ সেলফি কখনোই আনুষ্ঠানিক ছবি না, যা প্রচার করে ছড়িয়ে দিতে হবে। আনুষ্ঠানিক ছবি হয় পাশাপাশি বসে। একটা সেলফি দেখে ওবায়দুল কাদেরের মাথা গরম হয়ে গেছে। নির্বাচনের আগে তার মাথা ঠান্ডা রাখা উচিত।
চোরে চোরের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারে মন্তব্য করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, একটা ইমাম তো চোরের সঙ্গে জেনেশুনে বন্ধুত্ব করতে পারে না। আমাদের সরকার সেদিকেই অগ্রসর হচ্ছে।
কোনো সাংবাদিক স্বাধীন না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই এটার সঙ্গে আমি একমত না। আমার মনে হয় সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নেই। আমি হলফ করে বলতে পারি সাংবাদিকরা তাদের কথা লিখতে পারে না। কোনো অনুষ্ঠানে যদি সাংবাদিক কোনো বক্তব্য সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারে তবেই আমি মনে করি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আছে। সাংবাদিকরা তাদের প্রকৃত কথা লিখতে পারে না। লিখলেও তা প্রকাশ পায় না। তাই সাংবাদিকদের স্বাধীনতা থাকলেই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আসবে।’
কোনো রাজনৈতিক দল পরাজিত হতে পারে কিন্তু জনগণ কখনো পরাজিত হয় না মন্তব্য করে গয়েশ্বর বলেন,
আমাদের এই আন্দোলন বিএনপির নয়, গণঅধিকার পরিষদের নয়, এ আন্দোলন জনগণের। জনগণ এ সরকারের অন্যায় অত্যাচারে অতিষ্ঠ। তবে জনগণ এবার জেগেছে। আর জনগণ জাগলে কখনোই তাদের পরাজয় হয় না। দেশের মালিক জনগণ। দেশের মানুষ যাকে চাইবে তাকে ক্ষমতায় বসাবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলে, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে এক লাখ লোক মারা যাবে অথচ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে যে ১৮ কোটি লোকই মারা যাবে!’
এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মী ও আগত অতিথিরা।