হোম ফিচার শ্রেষ্ঠ ইউএনও’র এ কেমন উক্তি ?

শ্রেষ্ঠ ইউএনও’র এ কেমন উক্তি ?

কর্তৃক
০ মন্তব্য 898 ভিউজ

২০০৮ সালের কথা। আওয়ামীলীগ কেবল সরকার গঠন করল। সীমিত আকারে শুরু হল টেন্ডারবাজি। আশাশুনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীরা অঘটন ঘটাল। তারা টেন্ডার বক্স ভেঙে ফেলল। উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে মারপিট করল। এমনকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লাঞ্ছিত হলেন। এ ঘটনায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার থানায় এজাহার দাখিল করলেন। কিন্তু মামলা রেকর্ড হল না। এ ঘটনার তিনদিন পর ছিল জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা। সে সময় জেলা প্রশাসক ছিলেন আব্দুস সামাদ, যিনি বর্তমানে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে সচিবের দায়িত্বে আছেন।

আমি তখন সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিবের দায়িত্বে ছিলাম। ওই সময় আমি ‘দৈনিক সমকাল’ পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্তব্যরত ছিলাম। মাসিক সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করলাম। সিদ্ধান্ত হল, আশাশুনি থানা পুলিশ অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্যকরে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু কোন কিছু হল না। মাস গড়িয়ে গেল, পরবর্তী মাসের আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি পুনরায় উপস্থাপন করলাম। বলেছিলাম, বিচার বিভাগ পৃথক হয়ে গেছে। কালেক্টরেট ভবন এখন শ্বেতহস্তীতে পরিণত হয়েছে। কমিটির সভাপতি তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুল সামাদ সাহেব মলীন মুখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। কোন উত্তর দিতে পারলেননা। পুলিশ সুপার ওই সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে তৎকালীন পুলিশ সুপার (মনিরুজ্জামান, বর্তমান অবসরে) ফোন করলেন।

তিনি বললেন, পরপর দুটি সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করার কি দরকার ? উনার বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি উপজেলায়। আকার ইঙ্গিতে উনি বুঝাতে চাইলেন টেন্ডারবাজরা দলের ছেলে। প্রতি উত্তরে বলে ছিলাম, এখনি যদি লাগাম টেনে না ধরা যায় তাহলে পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিবে। কারণ ২০০১ সালে বিএনপি -জামায়াতের চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই দেশজুড়ে আ’লীগ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর যে জুলুম, নির্যাতন, অত্যাচার, হত্যাকান্ড চালিয়েছিল তা এখনও স্মৃতিতে অম্লান হয়ে রয়েছে।

বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ ও কালেক্টরেটের ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে লিখতে গিয়ে বিষয়টির অবতারণা করলাম। এখনও মোবাইল-কোর্ট কালেক্টরেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যদিও বিষয়টি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। আর এই মোবাইল কোর্টের ক্ষমতা নিয়ে সিভিল প্রশাসন করোনা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শুধু সিভিল প্রশাসন নয়- পুলিশ, সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা করোনা যুদ্ধের অগ্রজ সৈনিক। কারও দায়িত্ব কর্তব্য নিয়ে ত্রæটি তেমন চোখে পড়ছেনা। তাদের মানবিক কার্যক্রমও প্রশংসনীয়। কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা চাইলে সেই অঞ্চলের চেহারা পাল্টে দিতে পারে। তিনি যথার্থই বলেছিলেন। তালা উপজেলার নির্বাহী অফিসার ইকবাল হোসেন প্রজাতন্ত্রের একজন সৎ, নিষ্ঠাবান ও কর্মঠ কর্মকর্তা হিসেবে সমাদৃত হয়েছেন।

ব্যক্তিগত ভাবে তাকে চিনি না বা কোন দিন কথাও হয়নি। তবে খোঁজনিয়ে জেনেছি, তার সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। চলতি সপ্তাহে তিনি জেলার শ্রেষ্ঠ ইউএনও হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু গতকাল সহকর্মী জামাল উদ্দীনের এক ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়ে খটকা লাগল। ওই সংবাদকর্মীর কাছে তথ্য ছিল, একজন টিসিবি ডিলার দুই চালানে ছয় টন বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী উত্তোলন করেন। এক চালানের পণ্য নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে বিক্রি করেন আরেক চালানের পণ্য গোপনে কালোবাজারে বিক্রি করেন। জানিনা এ তথ্য কতটুকু সত্য আর কতটুকু মিথ্যা। ওই সংবাদকর্মী বিষয়টি তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেন।

কিন্তু তালা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তার সেলফোনে ওই সংবাদকর্মীকে চোরাইপণ্যসহ চোরকে ধরে উপযুক্ত প্রমাণসহ তার কার্যালয়ে যেতে বলেন। জানিনা একজন শ্রেষ্ঠ ইউএনও এ ধরণের কথা একজন সংবাদকর্মীকে বলতে পারেন কিনা? টিসিবির পণ্য কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগটি সত্য বা মিথ্যা যা হোক না কেন তা যাচাই করা প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বলে আমি মনে করি। বিশেষকরে সরকার ভর্তুকি দিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য স্বল্পমূল্যে টিসিবির মাধ্যমে বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর সেই পণ্য সামগ্রী যদি কালোবাজারে চলে যায় তাহলে যাদের জন্য সরকারের এ উদ্যোগ তা ব্যাহত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সিভিল প্রশাসন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ও যে মানবিক কার্যাবলি চালিয়ে যাচ্ছে তা দেশের মানুষ দীর্ঘদিন মনে রাখবে। আর এ ধরণের অভিযোগ এলে তা অবশ্যই খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

লেখক : সম্পাদক,দৈনিক সংকল্প, RTV এর নিজস্ব প্রতিনিধি,সাতক্ষীরা।

 

 

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন