জাতীয় ডেস্ক :
ক্রীড়া ও সংস্কৃতিচর্চা জাতির জন্য অপরিহার্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নতুন প্রজন্মের বিপথে যাওয়া ঠেকাতে খেলাধুলার চর্চা আরও বাড়াতে হবে।
শিশু-কিশোরদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের প্রতি গুরুত্বারোপ করে দেশের প্রতিটি এলাকায় খেলার মাঠ রাখার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শিশুরা, এখন তো সব ফ্ল্যাটে বাস করে, ফ্ল্যাটে বাস করে করে তারা ফার্মের মুরগির মতোই হয়ে যাচ্ছে।’ এ সময় শিশুদের খেলাধুলায় উৎসাহিত করার জন্য অভিভাবকদের আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বেশির ভাগ শিশু প্রায় সময় ফ্ল্যাটে মোবাইল, ল্যাপটপ ও আইপ্যাড নিয়ে সময় কাটাচ্ছে, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই অমঙ্গলজনক। আপনারা আপনাদের শিশুদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতিও মনোযোগী হবেন, তাহলে শিশুরা আর ভুল পথে যাবে না।
বুধবার (১১ মে) সকালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সব উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেন সরকারপ্রধান।
রাজধানী ঢাকায় খেলাধুলার জায়গা কম উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কিছুটা উদ্যোগ নিয়েছি প্রত্যেক এলাকাতেই যেন খেলার মাঠ থাকে। যেখানে খালি জায়গা পাচ্ছি খেলার মাঠ করে দিচ্ছি। কারণ, প্রত্যেকটা এলাকাতেই খেলার মাঠ থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে সংসদ ভবনের পাশে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের খেলাধুলার জন্য একটা একাডেমিও নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে।’
ক্রীড়ার মাধ্যমে সুস্থ প্রজন্ম গড়তে সরকারের উদ্যোগগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধুলা, শরীরচর্চা ও সংস্কৃতিচর্চা একটি জাতির জন্য অপরিহার্য। এ কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে, আমাদের একেবারে ছোট শিশু থেকে সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে এবং সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। তাহলেই আমাদের ছেলেমেয়েরা মানুষের মতো মানুষ হতে পারবে। তাদের মনটাও ভালো থাকবে, তারা ভালোভাবে লেখাপড়া শিখবে এবং বিপথে যাবে না–এটাই আমার বিশ্বাস।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত খেলাধুলার আধুনিক চর্চার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে জানিয়ে সরকারপ্রধান দ্রুতই দেশের সব মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণকাজ শেষ করার তাগিদ দেন। বলেন, নারীদেরও খেলাধুলায় আরও সুযোগ দিলে মিলবে বিরল সম্মান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খেলাধুলা একধরনের শরীর চর্চা। এতে আমাদের ছেলেমেয়েরা শারীরিক এবং মানসিকভাবেও যথেষ্ট উপকৃত হয়। সেই সঙ্গে আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে অনেক ধরনের খেলাধুলা ছিল, সেগুলো আবার সচল করতে হবে। এ জন্য আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা, আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতা এবং আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতাগুলো যেন ব্যাপকভাবে চলে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, সাঁতার, হকিসহ বিভিন্ন খেলার সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় খেলাগুলো যেমন: ডাংগুলি, সাত চারা, গোল্লাছুট থেকে শুরু করে হাডুডুসহ যেসব খেলা প্রচলিত ছিল, সেগুলো আবার চালু করতে হবে। আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। যেটা আমরা ফুটবলের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা শুরু করেছি। ফলে আমাদের অনেক নতুন নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টি হচ্ছে এবং তারা জাতীয় পর্যায়েও বিশেষ অবদান রাখছে। কাজেই এদিকে সবাই বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন।’
এ ব্যাপারে যে ধরনের সহযোগিতা দরকার তার সরকার তা করে যাচ্ছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা চাই এ খেলাধুলার বিষয়ে আমাদের আরও উদ্যোগী হতে হবে।’
জয়ের নেশা বাংলাদেশের হৃদয় গহিনে; লাল-সবুজের এ পতাকা এখন যাচ্ছে সাফল্যের নতুন আঙিনায়। অন্যান্য খাতের মতোই সমানতালে ক্রীড়াঙ্গনেও অগ্রগামী হয়ে মাঠে-মাঠে দুর্বার হয়ে উঠছে লাল-সবুজের জার্সি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে কৃতিত্বপূর্ণ অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশিষ্ট খেলোয়াড়দের সম্মান জানালো রাষ্ট্র।
আজ ২০১৩ থেকে ২০২০ পর্যন্ত বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ৮৫ জন ক্রীড়াবিদ ও সংগঠককে দেয়া হয় জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার।
সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এসব পুরস্কার বিতরণ করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।