জাতীয় ডেস্ক:
রানওয়ের সক্ষমতা বাড়ানোয় চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে অনায়াসে ওঠানামা করছে ড্রিমলাইনারের মতো বড় আকারের বিমান। এ ছাড়া ফ্লাইট পরিচালনা করবে সৌদি এয়ারলাইনস, কাতার এয়ারওয়েজ এবং এমিরেটসের মতো ৭টি আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা। পাশাপাশি গত এক বছরে এই বিমানবন্দর দিয়ে রেকর্ড ১৬ লাখ যাত্রী পরিবহন হওয়ায় বিমান সংস্থাগুলোর আগ্রহ বাড়ছে।
বর্তমানে সেভেন এইট সেভেন ড্রিমলাইনারের মতো বড় আকৃতির বিমান অনায়াসে ওঠানামা করছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে। বিশেষ করে রানওয়ের স্ট্রেংথ ৬৪ পিসিএন থেকে বাড়িয়ে ৯০ পিসিএন করায় এখন যে কোনো বিমান ওঠানামার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাই যাত্রী পরিবহনের জন্য বিমানবন্দরের শ্লট নিয়েছে সৌদি এয়ারলাইনস, কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস, জাজিরা এয়ারলাইনস ও স্পাইস জেট। আগামী মার্চ থেকে পর্যায়ক্রমে সংস্থাগুলোর বিমান চলাচল চালু হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তসলিম আহমেদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। আগে যেখানে ১০টি ফ্লাইট চলাচল করতে পারত, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩টিতে।’
বর্তমানে এই বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ বিমান এবং ইউএস-বাংলা ছাড়াও বাজেট এয়ারলাইনস হিসেবে পরিচিত ওমান এয়ার, ফ্লাই দুবাই, এয়ার এরাবিয়া ও সালাম এয়ার ফ্লাইট পরিচালনা করছে। কাজের সূত্রের পাশাপাশি পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য এ অঞ্চলে মধ্যপ্রাচ্যগামী যাত্রী তুলনামূলক বেশি। বিশেষ করে শুধু হজ ছাড়া বছরের বাকি ১১ মাসে পবিত্র ওমরাহ পালনের সৌদি আরব অনুমতি দেয়ায় পরিপূর্ণ যাত্রী পাচ্ছে বিমানগুলো। এতে বিমান সংস্থাগুলোর আগ্রহ যেমন বাড়ছে, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক কম দামে টিকিট কেনার সুযোগ পাবেন যাত্রীরা।
যাত্রী বাড়ার বিষয়ে চট্টগ্রামের অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, এখন পবিত্র হজ ছাড়া প্রতিমাসেই সৌদি আরবে যাওয়া যাবে। যে সুযোগ আগে ছিল না। প্রতিমাসেই প্রচুর সংখ্যক চট্টগ্রামের মানুষ ওমরাহ পালন করতে যান।
প্রতিযোগিতা বাড়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম এভিয়েশন ক্লাবের সভাপতি মো. আসিফ চৌধুরী বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির যে সুবিধাগুলো পাওয়া যায়, তার এয়ারলাইনসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সবাই এর সুবিধা ভোগ করতে পারবে। এতে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে।
সিভিল এভিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে ১৬ লাখ ১০ হাজার ৪২৮ জন যাত্রী পরিবহন হয়েছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী ৬ লাখ ৪২ হাজার ৪২৪ জন এবং আন্তর্জাতিক রুটের ৯ লাখ ৬৮ হাজার যাত্রী ছিলেন। যেখানে ২০২২ সালে এই বিমানবন্দর দিয়ে ১৪ লাখ ১৫ হাজার ১৮ জন যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিমান সংস্থাগুলো চট্টগ্রামমুখী হওয়ায় টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিমানকে বিদেশি সংস্থাগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। তবে এ শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ বিমানের (চট্টগ্রাম) মহাব্যবস্থাপক সজল কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা প্রতিযোগিতায় বিশ্বাস করি। আমরা প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত। প্রতিযোগিতা হলে একটি সুবিধা হয়। যেমন: আমাদের যদি কোনো ধরনের ঘাটতি থাকে, তাহলে তা ঘুচিয়ে নিতে পারব।’
স্বাধীনতার পর সীমিত আকারে এই বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু হলেও ২০০০ সালে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের মর্যাদা পায়। বর্তমানে প্রতিদিন ১৮টি অভ্যন্তরীণ এবং ৪০টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ওঠানামা করে এই বিমানবন্দরে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক রূপ পেয়েছে অন্তত ২৩ বছর আগে। কিন্তু এটি নানা জটিলতায় পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। এখন চলছে সব জটিলতা নিরসন করে এটিকে বিজনেস হাব হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া।