হোম রাজনীতি শামীম ওসমানের কথা শুনলেন না নারায়ণগঞ্জের ডিসি-এসপি

শামীম ওসমানের কথা শুনলেন না নারায়ণগঞ্জের ডিসি-এসপি

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 114 ভিউজ

রাজনীতি ডেস্ক:

নারায়ণগঞ্জের ডিসি-এসপির বিষয়ে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রশ্ন তুলবেন বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।

মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যু ও কিশোর গ্যাং নির্মূলে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর এলাকায় একেএম সামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপেক্স স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।

নারায়ণগঞ্জে মাদক, সন্ত্রাস, কিশোর গ্যাংসহ প্রধান সামাজিক সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের আহবানে সাড়া দিয়ে এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হন জেলার আলেম ওলামা, শিক্ষক, আইনজীবী, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরাসহ সব পেশাজীবী মানুষ।

তবে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা মতবিনিময় সভায় না আসায় বক্তারা হতাশা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদের বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিশেষ করে সবার ক্ষোভ প্রকাশ পায় ডিসি-এসপির বিষয়ে, যারা জেলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করেন। একই প্রশ্ন ওঠে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভীর ব্যাপারেও। কারণ তিনিও শামীম ওসমানের আমন্ত্রণে মতবিনিময় সভায় আসেননি।

তাদের বিষয়ে বক্তারা নানা প্রশ্ন তুললে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, ‘ডিসি এসপি দাওয়াত গ্রহণ করেও কেন, কার ইশারায় মাদক, সন্ত্রাস বিরোধী এ সভায় আসেন নি, আপনারা আমাকে প্রশ্ন করেছেন। নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনের একজনকেও যারা আজকে এখানে আসতে দেন নাই কিংবা আসেন নাই কেন, এ প্রশ্নের জবাব আমি নারায়ণগঞ্জে দিব না।’

শামীম ওসমান রাগান্বিত হয়ে বলেন, ‘আমার সম্পর্কে আপনাদের ধারণা কম। জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে আমি শামীম ওসমান জাতীয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করব, জনগণের সেবক হিসেবে যারা জনগণের চাকরি করতে এ নারায়ণগঞ্জে এসেছেন আজকে তারা অনুপস্থিত কেন আমি জিজ্ঞাসা করব। আমি মাথা নোয়াবার মানুষ না। এমন কোনো কাজ করি না আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করব। আমি কথা বলতে চাই নাই। অনেকেই অনেক কিছু করেন, আমরা দেখি। নারায়ণগঞ্জের টাকা ধরা পড়ে যাত্রাবাড়িতে, আর কেইস দেখান ফতুল্লাতে। আমাদের কাছে অনেক খবর আসে। এ কথাগুলি আজকে বলার কথা না। এখানে যারা এসেছেন তারা সবাই হতাশ হয়ে গেছেন। কেউ হতাশ হবেন না। আমাদের নারায়ণগঞ্জ আমরাই ঠিক করবো।’

সমাজের অপরাধ নির্মূলে তার আহবানে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা সাড়া না দেয়ায় শামীম ওসমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আজকের এই সভায় সর্বস্তরের নেতারা এসেছেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, আলেম ওলামা, সাংবাদিক, শিক্ষক সবাই এসেছেন। আমি সবাইকে দাওয়াত করেছি। আপনারা আমাকে প্রশ্ন করেছেন আমি জেলা প্রশাসককে বলেছি কিনা। আমি জেলা প্রশাসককে একবার বলি নাই। বারবার বলেছি। আমার মোবাইলে সব রেকর্ড আছে কাকে কীভাবে দাওয়াত দিয়েছি। খুব ভালোভাবেই তাদের দাওয়াত দিয়েছিলাম। আপনারা জেনে অবাক হবেন, জাতীয় সংসদের ক্যাবিনেট সেক্রেটারি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সচিব, খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা আমাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারা আমাকে বলেছেন, আমার মতো উদ্যোগ সব জেলায় যদি নেয়া হয়, তাহলে আমরা একটা সুন্দর বাংলাদেশ পাব।’

শামীম ওসমান বলেন, ‘একটা ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সিতে একজন সংসদ সদস্যের অবস্থানটা কোথায় এটা হয়তো নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনের অনেকেই বুঝতে পারেন না। নির্বাচনের আগে প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তার কাছে শামীম ওসমান ফোন করে নাই। তাই নারায়ণগঞ্জে যারা আছেন সবাইকে মনে রাখতে হবে, আমার নাম শামীম ওসমান। আমি কারো দয়ায় চলি না কিন্তু। আমি কারো দয়া দাক্ষিণ্যে চলার মতো লোক না। আমি রাজপথ থেকে সৃষ্টি হওয়া মানুষ। রাজপথেই শেষ হবো।’

শামীম ওসমান জানান, ‘তরুণ সমাজ ও ছাত্র সমাজকে নিয়ে তার নিজের গঠিত অরাজনৈতিক সংগঠন প্রত্যাশার মাধ্যমে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চান। এরই লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের নব্বইটি ওয়ার্ডে এক হাজার সদস্য নিয়ে একটি করে মোট নব্বইটি কমিটি গঠন কববেন। যার নেতৃত্ব দেবেন পঞ্চায়েত কমিটির নেতারা। আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের পূর্বেই মাদক নির্মূলের ব্যাপারে ইতিবাচক ফলাফল আশা করছি।’

মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, ‘কিছুদিন পরেই মাদকের বিরুদ্ধে নব্বইটা ওয়ার্ড থেকে সাড়ে চার লাখ লোক নামানো হবে। তবে লোক আরও বেশি হবে। সাড়ে চার লাখ, পাঁচ লাখ লোক আমরা ইচ্ছা করলে কালকেই নামাতে পারি। রাত বারোটার পরেও পাঁচ লাখ লোক নামানোর ক্ষমতা শামীম ওসমান রাখে ইনশাল্লাহ।’

প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ইঙ্গিত করে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, ‘এই পাঁচ লাখ লোক নামার পরে আমরা যদি বলি, জনগণ যদি বলে আমরা এখানে কাউকে চাই না, তাহলে কিন্তু এখানে কারো থাকার উপায় নাই। এ কথাও মাথায় রাখবেন কিন্তু। পরিষ্কারভাবে বলতে চাই। আগের মেজাজ থাকলে এখনই বলে দিতাম। বয়স বাষট্টি হিসেবে বক্তব্য দিলাম। ছাব্বিশ বানায়া দিয়েন না কিন্তু। সাবধান থাকবেন সবাই।’

নারায়ণগঞ্জে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে অচিরেই প্রেসক্লাবের আয়োজনে সবার সাথে গোল টেবিল বৈঠকে থাকবেন বলে জানান সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।

সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমার ছোট বোন মেয়রকেও আমি ব্যক্তিগতভাবে দাওয়াত দিয়েছি। তিনি আসেন নাই হয়তো তার জরুরি কোনো কাজ আছে। সে বয়সে আমার অনেক ছোট। তারপরেও মেয়র হিসেবে আমি তাকে বলেছি। সিটি কর্পোরেশনের সমস্যাগুলোর ব্যাপারে আমার ভাই সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও মেয়রকে নিয়ে প্রেস ক্লাবের গোলটেবিল বৈঠকে আমি বসবো। তাদের সাথে আমি কথা বলবো। নারায়ণগঞ্জের ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জকে সুন্দরভাবে আমরা গড়ে তুলতে চাই।’

সংসদ সদস্য শামীম ওসমান আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল হাই। বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি চন্দন শীল, মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের জেলা শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক শংকর কুমার দে, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল, নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সালাম, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি আরিফ আলম দিপু, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন প্রমুখ।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন