হোম অন্যান্যশিক্ষা শাবিপ্রবির গবেষণা: বিষণ্নতায় ভুগছে দেশের ৭৪ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থী

শিক্ষা ডেস্ক:

ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার পথযাত্রা শুরু হয়। শিক্ষাজীবনের এই ধাপে শিক্ষার্থীদের অনেক অল্প সময়ে পরীক্ষা প্রস্তুতির এ বিশাল চাপ সামলাতে হয়। এই সময়ে বিষণ্নতা, আলস্য, নৈরাশ্য ও ভয় দ্বারা শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হয় যা তার ফলাফলকে প্রভাবিত করে। ভর্তি পরীক্ষার্থীদের মাঝে বিষণ্নতার হার এবং বিষণ্নতার প্রভাবকসমূহ নিরূপণের বিষয়ে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক জার্নালে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা গেছে, দেশের ৭৪ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থী বিষণ্নতায় ভুগছেন।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে ‘Prevalence of depression and its associated factors among undergraduate admission candidates in Bangladesh: Anation-wide cross-sectional study’ শিরোনামে একদল গবেষক বাংলাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে ২০২১-২২ এইচএসসি সেশনের প্রায় ৫ হাজার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থীর ওপর একটি জরিপ চালান। এ জরিপের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থীদের তিনটি ক্যাটাগরিতে বিষণ্নতার বিষয়টি ওঠে এসেছে। গত ৩০ নভেম্বর আন্তর্জাতিক মাল্টিডিসিপ্লিনারি কিউ-১ জার্নাল প্লস ওয়ান জি (ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর: ৩.৭, ২০২২) এ গবেষণা প্রকাশিত হয়।

গবেষণার বিষয়ে অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, দেশের ৭৪ শতাংশ ভর্তি পরীক্ষার্থী বিভিন্ন পর্যায়ের বিষণ্নতায় ভুগছেন। এর মধ্যে মাঝারি বিষণ্নতায় ২৬ শতাংশ, অত্যধিক বিষণ্নতায় ২৬ শতাংশ এবং ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী মারাত্মক পর্যায়ের বিষণ্নতায় ভুগছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিষণ্নতা বৃদ্ধি ও হ্রাস, উভয়পক্ষেই প্রভাবক কারণ চিহ্নিত হয়েছে। বিষণ্নতা বৃদ্ধির পেছনে প্রভাবক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে লিঙ্গ, ব্ল্যাকমেইলের স্বীকার, পারিবারিক সমস্যা, গুরুতর অসুস্থতা, কোভিড আক্রান্ত, প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফল, মানসিক সমস্যা। অন্যদিকে, ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস, শরীরচর্চা, পড়াশুনার সময়, ধর্মচর্চা, বিষণ্নতা হ্রাস করতে ভূমিকা পালন করে। পারিবারিক আয় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বিষণ্নতার প্রভাবক হিসেবে চিহ্নিত হলেও এদের প্রভাব খুব জোরালো নয়। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষার্থীদের বিষণ্নতার সঙ্গে ধূমপানের অভ্যাস, বৈবাহিক অবস্থা, প্রেমের সম্পর্ক ও ধর্মবিশ্বাসের কোনো সম্পর্ক নেই বলেও উঠে এসেছে এ গবেষণায়।’

এ গবেষণার আরেক গবেষক মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘ছেলেদের তুলনায় মেয়ে শিক্ষার্থীদের অত্যধিক বিষণ্নতায় ভোগার ঝোঁক প্রায় দ্বিগুণ। খুব সম্প্রতি কোনোপ্রকার ব্ল্যাকমেইলের শিকার হওয়া এবং পারিবারিক সমস্যায় আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের অত্যধিক বিষণ্নতায় ভোগার ঝোঁক যথাক্রমে ২ গুণ এবং ৩ গুণ। অপরদিকে, যাদের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ আছে তাদের মাঝে বিষণ্নতার হার অধিক এবং ঝোঁক প্রায় দেড়গুণ। তবে ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি সচেতন এবং নিয়মিত শরীরচর্চাকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিষণ্নতার হার তুলনামূলক কম এবং আক্রান্ত হওয়ার ঝোঁক যথাক্রমে ১.৪ এবং ২ গুণ কম।’

বিষণ্নতা হ্রাস করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সৎ সঙ্গ এবং উত্তম পারিবারিক পরিবেশ ও বোঝাপড়ার কোনো বিকল্প নেই। সেইসঙ্গে শরীরচর্চা এবং ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি সচেতনতাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার্থীদের শুধু দৈহিক সুস্বাস্থ্যই নয়, মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করাও অপরিহার্য। শুধু ভালো একাডেমিক ফলাফল নয়, দৈহিক ও মানসিকভাবে বলিষ্ঠ প্রজন্ম গড়ে তুলতে হলে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজ ও রাষ্ট্রের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।’

এ গবেষণায় আরও অবদান রেখেছেন চট্টগ্রাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জুবায়ের আহমেদ, শাবিপ্রবি পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাফিউল হাসান ও আল মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী মুনমুন সরকার, যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান মিলাদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী আখের আলী।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন