হোম ফিচার শাবিপ্রবিতে ২৭ দিন পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রত্যাহার

শিক্ষা ডেস্ক :

শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনির আশ্বাসে উপাচার্যের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে চলা টানা ২৭ দিনের আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে এ আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এর আগে শাবিপ্রবির চলমান সংকট নিরসনে শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে সিলেটে শিক্ষামন্ত্রী। পরে বিকেলে সিলেট সার্কিট হাউসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। এসময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও ইউজিসির সচিব ফেরদৌস আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এসময় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ৮টি দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কয়েকটি দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। তবে ভিসির পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আচার্য। এ বিষয়টি আচার্যের কাছে তুলে ধরা হবে।

ওইদিন বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনায় সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পরে শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রীর পরামর্শে শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন শাবিপ্রবি উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

এছাড়া শুক্রবার সন্ধ্যায় শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ক্যাম্পাসে গেলে টানা ২৬ দিন পর নিজ বাসভবনের বাইরে বের হন শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

গত ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত তিনি তার বাসভবনেই অবস্থান করছিলেন। পরে সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে ভিসি এবং অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনায় বসেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

আলোচনার পর রাতে ক্ষামন্ত্রীর ক্যাম্পাস ত্যাগ করলে সংবাদ সম্মেলন ডেকে একদিনের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, আমরা আশা করি মহামান্য আচার্য (রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ) শিক্ষামন্ত্রীর মাধ্যমে আমাদের অভিযোগগুলো জেনে উপাচার্যকে দ্রুত অপসারণে উদ্যোগ নেবেন। মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর আমাদের করণীয় নির্ধারণে শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সব শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা বৈঠক করব। এই বৈঠকের পর আমাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাব। এর আগ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত থাকবে।

এদিকে দায়িত্ব নেওয়ার একদিন পরই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) নবনিযুক্ত প্রক্টর ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইশরাত ইবনে ইসমাইলের অপসারণ দাবি করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মো. ইশরাত ইবনে ইসমাইলের সামনে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সে সময় ঘটনাটি প্রতিহত করার কোনো উদ্যোগ নেননি। ওই ঘটনাটি এখন তদন্তাধীন। তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেওয়া অনুচিত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ জানুয়ারি শাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদে লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এনে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন হলের ছাত্রীরা।

এই দাবিতে আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জানুয়ারি বিকেল ৫টায় তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ ৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে।

শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় উপাচার্যকে দায়ী করে তার পদত্যাগ দাবি করে আমরণ অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

টানা সাতদিন পর ২৬ জানুয়ারি অনশন ভাঙেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এরপর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, নাটক, খেলাধুলার মাধ্যমে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তবে ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রক্টর, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালকের অব্যাহতি ছাড়া আর কোনো দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে আবারও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন