হোম জাতীয় রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতির মধ্যে ৩টি বাদ দেওয়ার সুপারিশ

রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতির মধ্যে ৩টি বাদ দেওয়ার সুপারিশ

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 10 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক:
রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতির মধ্যে তিনটি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সেইসঙ্গে গণতন্ত্র বহাল রেখে রাষ্ট্র পরিচালনার নতুন আরও চারটি মূলনীতির সুপারিশ করেছে তারা।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সংবিধান সংস্কার কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়।

বর্তমানে সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার যে চার মূলনীতি রয়েছে সেগুলো হলো— জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। এই চার মূলনীতির মধ্যে শুধু গণতন্ত্রকে প্রস্তাবিত নতুন পাঁচ মূলনীতির একটি হিসেবে রাখা হয়েছে। সুপারিশ করা নতুন পাঁচটি মূলনীতি হলো— সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র।

সুপারিশের ‘নাগরিকতন্ত্র’ অংশে কমিশন সুপারিশ করে যে, সংবিধানের প্রযোজ্য সব ক্ষেত্রে ‘প্রজাতন্ত্র’ এবং ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘নাগরিকতন্ত্র’ এবং ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ শব্দগুলো ব্যবহৃত হবে। তবে ইংরেজি সংস্করণে ‘রিপাবলিক’ ও ‘পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ শব্দগুলো থাকছে।

ভাষা: নাগরিকতন্ত্রের রাষ্ট্র ভাষা হবে ‘বাংলা’। সংবিধানে বাংলাদেশে নাগরিকদের মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহৃত সব ভাষা এ দেশের প্রচলিত ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। নাগরিকত্ব: ‘বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি। ‘কমিশন এই বিধানটি বিলুপ্ত করার সুপারিশ করছে। সুপারিশ করা হচ্ছে যে, বর্তমান অনুচ্ছেদ ৬(২) নিম্নোক্তভাবে সংশোধন করা হোক ‘বাংলাদেশের নাগরিকরা ‘বাংলাদেশি’ বলে পরিচিত হবেন’ হিসেবে প্রতিস্থাপিত হোক।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের ৭টি সুপারিশের সার-সংক্ষেপ হলো—

১. সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র’ প্রস্তাব রেখেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন।

২. ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা।

৩. প্রধানমন্ত্রী পদের একচ্ছত্র ক্ষমতা হ্রাস।

৪. অন্তর্বর্তী সরকার কাঠামোর সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব।

৫. বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ।

৬. শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সুনিশ্চিতকরণ।

৭. মৌলিক অধিকারের আওতা সম্প্রসারণ, সাংবিধানিক সুরক্ষা ও বলবৎযোগ্যতা নিশ্চিতকরণ।

সুপারিশে বলা হয়, সংবিধানের বিদ্যমান প্রস্তাবনাকে নিম্নোক্ত ভাষ্য দিয়ে প্রতিস্থাপন করার জন্য কমিশন সুপারিশ করছে— আমরা, বাংলাদেশের জনগণ, যারা এই ভূখণ্ডের মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে ঐতিহাসিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় জনযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছি এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছি, আমরা সব শহীদের প্রাণোৎসর্গকে পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে অঙ্গীকার করছি যে, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের যে আদর্শ বাংলাদেশের মানুষকে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং গণতন্ত্র ও বৈষম্যহীনতার যে আদর্শ ২০২৪ সালে ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ করেছিল, সেই সব মহান আদর্শ রাষ্ট্র ও সমাজে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে; আমরা জনগণের সার্বভৌম অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্রকে সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করে জনগণের জন্য একটি সংবিধান রচনা ও বিধিবদ্ধ করছি, যে সংবিধান বাংলাদেশের জনগণের সর্বোচ্চ আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ এবং যে সংবিধান স্বাধীন সত্তায় যৌথ জাতীয় বিকাশ সুনিশ্চিত করবে এবং বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের অধিকার সংরক্ষণ করবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন