হোম খেলাধুলা যুব বিশ্বকাপ থেকে জাতীয় দলে, বাংলাদেশের অবস্থান কী বার্তা দিচ্ছে?

যুব বিশ্বকাপ থেকে জাতীয় দলে, বাংলাদেশের অবস্থান কী বার্তা দিচ্ছে?

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 66 ভিউজ

স্পোর্টস ডেস্ক:

বয়সভিত্তিক দলগুলোকে ধরা হয় সিনিয়র দলে আসার প্রাথমিক পথ হিসেবে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে মোটামুটি বয়সভিত্তিক ক্রিকেটই হচ্ছে জাতীয় দলে আসার পাইপলাইন। বিশেষ করে যুব বিশ্বকাপে ভালো পারফরম্যান্সের পর তড়িঘড়ি করে জাতীয় দলে অভিষেক ঘটাতে বাংলাদেশের জুড়ি মেলা ভার। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের আলো ছড়ানো অনেক তারকাই পরবর্তীতে জাতীয় দলের হয়েও সুনাম কুড়িয়েছেন। তবে ঝরে যাওয়াদের তালিকাটাও কম দীর্ঘ নয়।

বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের নায়ক এনামুল হক জুনিয়র থেকে শুরু করে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, এনামুল হক জুনিয়র, নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদী হাসান মিরাজ কিংবা তাওহীদ হৃদয়, শরিফুল ইসলাম – যুব বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশ জাতীয় দলে জায়গা পাওয়া খেলোয়াদের তালিকাটা কম দীর্ঘ নয়। সাকিব-মুশফিক-তামিমরা নিজেদের দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরাদের তালিকায় নিয়ে গেলেও এনামূল হক জুনিয়র কিংবা এনামুল হক বিজয়রা প্রত্যাশার পুরোটা পূরণ করতে সমর্থ হয়নি।

তবে বৈশ্বিক চিত্রটা এমন নয়। বিরাট কোহলি, যুবরাজ বা গেইল যুব বিশ্বকাপে আলো ছড়িয়ে জাতীয় দলে জায়গা করে নিলেও তাদের রাস্তাটা বাংলাদেশের তরুণদের মতো সোজা ছিল না। যুব বিশ্বকাপ থেকে বেরিয়ে আসা প্রতিভাবান তরুণদের জাতীয় দলে সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে সবার চেয়ে এগিয়ে!

আইসিসির নিজস্ব পরিসংখ্যান থেকেই বেরিয়ে এসেছে এমন তথ্য। এখন পর্যন্ত যুব বিশ্বকাপে খেলা বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের ৪১ শতাংশই কখনো না কখনো জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপানোর সুযোগ পেয়েছেন। অর্থ্যাৎ এখন পর্যন্ত যুব বিশ্বকাপে খেলা খেলোয়াড়দের প্রায় অর্ধেকই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়েছেন, যা টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।

এই তালিকায় বাংলাদেশের পরেই আছে আফগানিস্তানের নাম। ক্রিকেটের এই নবীন শক্তি যুব বিশ্বকাপে খেলা প্রায় ৩৮ শতাংশ খেলোয়াড়কে জাতীয় দলে খেলিয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বেলা হারটা ৩৬ শতাংশ। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের বিখ্যাত খেলোয়াড়দের মধ্যে ক্রিস গেইল, রামনরেশ সারওয়ান, ড্যারেন ব্রাভো কিংবা হালের শিমরন হেটমেয়াররা যুব বিশ্বকাপের আবিষ্কার।

যুব বিশ্বকাপ খেলা ৩৪ শতাংশ ক্রিকেটার জিম্বাবুয়ের জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়েছেন। এর পরেই আছে সাবেক দুই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। ৩৩ শতাংশ যুব বিশ্বকাপ তারকা এই দেশ দুটির জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের বেলা সংখ্যাটা ৩২ শতাংশ। আর বছর দুই আগে টেস্ট স্টেটাস পাওয়া আয়ারল্যান্ডের বেলা ৩১ শতাংশ।

ক্রিকেটের দুই পরাশক্তি ভারত ও ইংল্যান্ডের যথাক্রমে ২৭ ও ২৮ শতাংশ যুব বিশ্বকাপ খেলা খেলোয়াড় পরবর্তীতে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন। তবে যুব বিশ্বকাপে খেলা প্রতিভাবানদের মধ্যে জাতীয় দলের চৌকাঠ পর্যন্ত আসা খেলোয়াড় সবচেয়ে কম দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ায়। অস্ট্রেলিয়ার বেলা সংখ্যাটা ২০ শতাংশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বেলা মাত্র ১৮ শতাংশ!

এই তালিকার শীর্ষে থাকাটা অবশ্য খুশির কথা নয়। মূলত যে দলগুলোর পাইপলাইনে বেশি খেলোয়াড় নেই এবং ক্রিকেটীয় অবকাঠামো অনুন্নত, তারাই যুব বিশ্বকাপে আলো ছড়ানো খেলোয়াড়দের দ্রুত জাতীয় দলে সুযোগ করে দিয়েছে। যথেষ্ট পরিপক্ব না হয়ে জাতীয় দলে আসার কারণে তাদের টেকনিক ও স্কিলও পর্যাপ্ত ছিল না। তাই বাংলাদেশের মতো দল থেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের ঝরে পড়ার হারও বেশি।

এ বিষয়ে যুব বিশ্বকাপের ফাইনাল চলাকালীন সময়ে ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো যেসব দলে অনূর্ধ্ব ১৯ খেলা খেলোয়াড়দের শতাংশ হার বেশি, এর মানে তাদের পাইপলাইন অবকাঠামো অনেক বেশি পরিমাণে বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলে এই সংখ্যা কম হওয়ার কারণ তাদের পাইপলাইনকে সমৃদ্ধ করতে আরও উৎস আছে।’

অস্ট্রেলিয়া কিংবা ভারতের মতো দেশে বয়সভিত্তিক দলের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে সরাসরি জাতীয় দলে সুযোগ করে দেওয়ার নজির নেই বললেও চলে। বরং যুব বিশ্বকাপে ভালো করা খেলোয়াড়দের ঘরোয়া ক্রিকেটে পর্যাপ্ত সুযোগ দিয়ে যোগ্যতা অর্জন করতে পারলেই সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে। যে কারণে বয়সভিত্তিক বিশ্বকাপে দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়েও কখনোই জাতীয় দলে খেলার সুযোগ না পাওয়ার ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে বড় দলগুলোর।

ভারতের যুব বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক উন্মুক্ত চাঁদ বা অস্ট্রেলিয়াকে ২০১২ যুব বিশ্বকাপ জেতানো উইল বশিস্টোর কথাই ধরা যাক, তারা কখনোই দেশ দুটির জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগই পাননি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন