আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
হামাসের সঙ্গে গত ১০ই অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর গাজার যে অঞ্চলগুলো ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) নিয়ন্ত্রণে রয়ে গেছে, সেখানে কমপক্ষে ১৫০০ ভবন ধ্বংস করা হয়েছে।
বিবিসি ভেরিফাইয়ের পর্যালোচনায় প্রকাশিত স্যাটেলাইট চিত্রে এই তথ্য ফুটে উঠেছে। এই ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞকে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করছে বলে মনে করছেন। তবে আইডিএফের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা ‘যুদ্ধবিরতি কাঠামোর মধ্যেই’ কাজ করছে। প্রকৃত ধ্বংস হওয়া ভবনের সংখ্যা এর চেয়েও বেশি হতে পারে, কারণ সব অঞ্চলের স্যাটেলাইট চিত্র বিবিসির কাছে নেই।
৮ই নভেম্বর তোলা সর্বশেষ স্যাটেলাইট ছবিগুলো এই ধ্বংসলীলা দেখায়। গাজা শান্তিচুক্তির ২০ দফা পরিকল্পনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন যে, ‘সব ধরনের সামরিক অভিযান, যেমন বিমান ও কামান হামলা, স্থগিত থাকবে’ এবং পরবর্তীতে তিনি বারবার যুদ্ধ শেষ হওয়ার ঘোষণা দিলেও, বিবিসির বিশ্লেষণে দেখা গেছে সামরিক বাহিনীর হাতে ভবন ধ্বংস ব্যাপক হারে চলছে।
বিবিসি তাদের রাডার চিত্র বিশ্লেষণের জন্য ‘চেঞ্জ ডিটেকশন অ্যালগরিদম’ নামে একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেছে, যা যুদ্ধবিরতির আগে ও পরে তোলা ছবিগুলোর পার্থক্য নির্ণয় করে সম্ভাব্য ধ্বংসের চিহ্ন শনাক্ত করে। এই বিশ্লেষণ ‘ইয়েলো লাইন’-এর পেছনের অঞ্চলগুলোতে চালানো হয়েছে, যা অক্টোবরের যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েলের বাহিনী প্রত্যাহারের কথা ছিল।
খান ইউনুসের পূর্বাঞ্চলের আবাসান আল-কবিরার মতো এলাকায় ধ্বংস হওয়ার আগে অক্ষত থাকা অনেক ভবন ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দা লানা খলিল বলেন, তার বাড়িটি ছিল ‘একটি স্বর্গ’ কিন্তু এখন সেই এলাকা ‘পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত’ হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘ইসরাইলি সেনারা আমাদের কিছুই রাখেনি। সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে।’
একইভাবে রাফাহ শহরের পূর্বে আল-বায়ুক অঞ্চলেও যুদ্ধবিরতির আগে অক্ষত থাকা অনেক ভবন পরে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলের কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রধান ইটান শামির অবশ্য দাবি করেছেন, আইডিএফের এই কর্মকাণ্ড যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন নয়, কারণ ‘ইয়েলো লাইনের’ পেছনের অঞ্চলগুলো চুক্তির আওতায় পড়ে না।
আইডিএফ তাদের কর্মকাণ্ডের পক্ষে জানিয়েছে যে, চুক্তি অনুযায়ী গাজার ‘সব সন্ত্রাসী অবকাঠামো, যেমন টানেল, ধ্বংস করতে হবে’ এবং ইসরায়েল হুমকি, লঙ্ঘন ও সন্ত্রাসী অবকাঠামোর প্রতিক্রিয়ায় কাজ করছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল ক্যাটজও এক্সে লিখেছেন যে, ‘গাজাকে নিরস্ত্রীকরণ মানে সন্ত্রাসী টানেল ও অবকাঠামো ধ্বংস করা—এটাই ইসরাইলের নিরাপত্তা নীতির স্পষ্ট অংশ।’
তবে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার ১৩ নম্বর পয়েন্টে সামরিক অবকাঠামো ধ্বংসের কথা বলা হলেও, এও বলা আছে যে এই নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া ‘স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের তত্ত্বাবধানে’ হবে। রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট (আরইউএসআই)-এর সিনিয়র ফেলো ড. এইচ এ হেলিয়ার মনে করেন, এটি ‘নিঃসন্দেহে যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন,’ কিন্তু ওয়াশিংটন এটি স্বীকার করতে রাজি নয় এবং তারা শুধু বলছে যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর আছে।
সূত্র: বিবিসি
