কালীগঞ্জে চোর আখ্যা দিয়ে কিশোর গং এর ১জনকে ধরে নিয়ে চেয়ারম্যান নাজমুলের টর্চার সেলে ৫ঘন্টা বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ
কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি :
মোবাইল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্দেহজনক চোর চক্রের কিশোর গং এর ৪জনকে চৌকিদার দিয়ে বাড়ি থেকে ধরে এনে চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান নাঈম এর টর্চার সেলে বেধে দরজা বন্ধ করে ৫ঘন্টা পিটিয়ে মৃত্যু ভেবে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
পরিবারের দাবি নির্বাচনের সময় বর্তমান চেয়ারম্যান বিদ্রোহী প্রার্থী নাজমুলের পক্ষে কাজ না করে নৌকার পক্ষে কাজ করার প্রতিশোধ নিতে স্থানীয় ইউপি সদস্য মকবুলের সহায়তায় মোবাইল চুরির অপবাদে চারজনকে ধরে এনে শুধুমাত্র আমার পুত্র অহিদুলের উপর জোরপূর্বক নির্যাতন অমানুষিক মারপিট চালিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ভিডিও ধারণের জন্য চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান এই নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে।
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার ভাড়া শিমলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান নাঈম এর কক্ষে কথিত টর্চার সেলে গত বুধবার (১৩এপ্রিল) বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ নির্মম ভাবে পিটানো ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। পবিত্র রমজান মাসে এমন ঘটনা যখন চেয়ারম্যান নাজমুল হাসানের টর্চার সেলে নির্যাতনের পেটানোর দৃশ্য দেখে সেখান থেকে অনেক ইউপি সদস্য ও চৌকিদার রা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বাহিরে যায় বলে ভুক্তভোগী রা ও নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউপি সদস্য ও চৌকিদার দফাদার সাংবাদিকদের জানায়।
ওই সময় বাইরে দাঁড়ানো কথিত চোর অহিদুলের মা বাবা অন্যান্য সদস্যরা চেয়ারম্যানের নিকট প্রাণভিক্ষা চেয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। অবশেষে প্রায় মৃত ভেবে রাত ৮টার সময় তার বাবা আনোয়ার হোসেন ও মা মমতাজ বেগম এর নিকট তুলে দিয়ে হাসপাতালে না নিয়ে ভয় দেখিয়ে বাড়িতে নিতে বলেন। চেয়ারম্যানের সাজানো টর্চার সেলের সদস্যরা হল স্থানীয় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, জুয়াড়িদের নিয়ে তারাই কথিত টর্চার সেল পরিচালিত হয় বলে ভুক্তভোগী ও নির্যাতিত অনেকেই সাংবাদিকদের জানান।
ওই সময় বাড়িতে নিয়ে শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটলে স্থানীয়দের সহায়তায় তার বাবা-মা রাত ১১টার সময় সময় কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। বর্তমান অহিদুল ইসলাম হাসপাতালে দ্বিতীয় তলায় ১০ নম্বর বেডে মৃত্যুর যন্ত্রনা কাতরাচ্ছে আর সেদিনকার সেই ভয়াবহ ঘটনার কথা মনে পড়লে আতঙ্কে শিউরে উঠছে। বিষয়টি নিয়ে অহিদুলের বাবা বুধবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার সময় ফোন করে সাংবাদিকদের সাহায্য কামনা করে।
বিষয়টি জানার পরে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার সময় কালিগঞ্জ হাসপাতালে গেলে সা ত বসু গ্রামের আনোয়ার কারিকর ও তার পুত্র কথিত চোর অহিদুল ইসলাম (২০)ও তার মাতা মমতাজ বেগম প্রতিবেশী রোমেছা, রমজান আলী সহ একাধিক ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানায় বাগবাটি গ্রামের জনৈক মধুর একটি মোবাইল চুরি হয়। উক্ত মোবাইল চুরির ঘটনায় সাত বসু গ্রামের কিশোর গং এর সদস্য অহিদুল, ফয়সাল, নাজমুল এবং ইব্রাহিম সহ ৪জনকে সন্দেহ করে স্থানীয় রমজান আলী তাদের জিজ্ঞাসা করলে তারা ঠাট্টা করে মধু কাকার মোবাইল নেওয়ার কথা স্বীকার করে ফেরত দেয়।
বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় ইউপি সদস্য মকবুল হোসেন ঘটনাটি চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান নাইম কে জানায়। এ সময় ইউপি সদস্য মকবুল হোসেন বাগবাটি গ্রামের তাপসের স্ত্রীকে ডেকে নিয়ে চেয়ারম্যানের নিকট মোবাইল চুরির অভিযোগ দিয়ে বেলা ১টার সময় খোরশেদ চৌকিদার কে দিয়ে কিশোর গংয়ের চারজনকে বেঁধে পরিষদে আনে। এরমধ্যে দফাদার আমজাদ হোসেনকে দিয়ে কিশোর গংয়ের অহিদুল ইসলামের বাবার নিকট হতে ৩হাজার ফয়সাল নাজমুল এবং ইব্রাহিমের নিকট হতে ১ হাজার করে মোট ৬ হাজার টাকা আদায় করে নিয়ে আসে।
চেয়ারম্যান বেলা ৩টার সময় ইউনিয়ন পরিষদে তার কথিত টর্চার সেলে ধরে আনা ৪ কিশোর গং এর মধ্যে শুধুমাত্র অহিদুল কে হাত পা বেঁধে পেটাতে শুরু করে। পবিত্র রমজান মাসে নিজে হাতে আইন তুলে নিয়ে বিকাল ৩টা হতে ৮টা পর্যন্ত জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য বেধড়ক পিটিয়ে ভিডিও ধারণ এর মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায় করে। মৃত ভেবে রাত ৮টার সময় হাসপাতালে না নিয়ে তাদেরকে বাড়িয়ে নিয়ে যেতে বলে। বাড়িতে নিয়ে অবস্থার অবনতি হলে এলাকাবাসী এবং তার পরিবারের সদস্যরা রাত ১১টার সময় কালিগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করে।
খবরটি ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়লে ইউনিয়ন বাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সকালে ইউনিয়ন বাসী চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন এর প্রস্তুতির সময় চেয়ারম্যানের ক্যাডার বাহিনী এর সদস্যরা নির্যাতিত অহিদুলের ভগ্নিপতিকে জিম্মি করে মীমাংসার ভয় দেখিয়ে মানববন্ধন থেকে ফিরে আসতে বলে। উপায়ান্তর না দেখে ”ভিক্ষার দরকার নাই কুত্তা খেদা ”। তেমনি ছেলের ওপর নির্যাতনের বিচার চাওয়ার দরকার নাই জামাই কে বাঁচানোর জন্য থানায় অভিযোগ ও মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে ফিরে আসে। ওই সময় রাস্তায় এবং হাসপাতালে চেয়ারম্যানের ক্যাডার বাহিনী এর তোদের মোটর সাইকেলে মহড়া ও অবস্থান করতে দেখা যায়। পরে প্রতিবাদ করতে আসা লোকজন ভয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
এ ব্যাপারে হাসপাতাল চত্বরে ভুক্তভোগী কিশোর গং এর সদস্য ওয়াহিদুল ইসলামের পিতা আনোয়ার কারিকার মাতা মমতাজ বেগম সহ পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের জানায় আমরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে থানায় অভিযোগ দেওয়ার কথা শুনে চেয়ারম্যানের লোকজন মীমাংসার কথা বলে ডেকে এনেছে। আমরা গরীব মানুষ আমাদের মামলার ভয় দেখিয়ে থানায় যেতে নিষেধ করেছে।
ঘটনার সত্যতা জানার জন্য চৌকিদার খোরশেদ আলম এবং দফাদার আমজাদ হোসেন এর নিকট জানতে চাইলে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সাংবাদিকদের জানায় আমরা সামান্য চৌকিদার হুকুমের গোলাম চেয়ারম্যান ধরে আনতে বলেছে আমরা ধরে নিয়ে এসেছি। ৬হাজার টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে তারা বলেন যে অমানুষিক নির্যাতন মারপিট করা হয়েছে তা আমরা দেখতে না পেরে চলে গিয়েছিলাম। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সময় উপস্থিত একাধিক ইউপি সদস্য স্বীকার করে বলেন এটা একটি বীভৎস ঘটনা না দেখলে ঘটনার বিবরণ দেওয়া যাবেনা।
স্থানীয় বাসিন্দা রমজান আলী জানান মঙ্গলবারে প্রথমে বিষয়টি আমি জানতে পেরে তাদের নিকট থেকে মোবাইলটি উদ্ধার করে মধুকে ফেরত দেই। তারপরের ঘটনা চেয়ারম্যান যা ঘটিয়েছে সেটা একজন মানুষের পক্ষে ঘটানো সম্ভব না। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এ প্রসঙ্গে ঘটনার সত্যতা জানার জন্য চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান নাঈম এর নিকট মুঠোফোনে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ধরে আনার বিষয়টি শিকার করে মোবাইল চুরির ঘটনায় দু-চারটি চড়-থাপ্পড়ের কথা স্বীকার করেন।
তবে দীর্ঘ ৫ ঘন্টা বেধড়ক পেটানো ও নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন বিষয়টি খবরের কাগজে নিউজ না করার জন্য। নিজে এবং বিভিন্ন আওমীলীগ নেতাদের দিয়ে সাংবাদিকদের নিকট ফোন করাতে থাকেন।
এ প্রসঙ্গে থানার পুলিশ পরিদর্শক( তদন্ত) মিজানুর রহমানের নিকট জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান। ভুক্তভোগীদের থানায় অভিযোগ দিতে বলেন। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান নাঈম গত ২৫ জানুয়ারি শপথ নিয়ে ভাড়া সিমলা ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে একের পর এক ঘটনার জন্ম দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে চলেছে বলে ইউনিয়ন বাসী জানান।