হোম খুলনাবাগেরহাট মোংলা- রামপালে সুপেয় পানির সংকট থেকে মুক্তি পাচ্ছে ৭৩৮৭ পরিবার

মোংলা- রামপালে সুপেয় পানির সংকট থেকে মুক্তি পাচ্ছে ৭৩৮৭ পরিবার

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 36 ভিউজ

জসিম উদ্দিন:
উঠানে কংক্রিটের তৈরি গোলাকার ভিত। তার ওপরে বসানো প্লাস্টিকের ট্যাঙ্ক। ওই ট্যাঙ্কে টিনের চালের সঙ্গে ঝুলানো পাইপ। পাইপের এক মুখ ট্যাঙ্কের সঙ্গে সংযোগ দেওয়া। বর্ষা হলেই চালের পানি পাইপের মাধ্যমে চলে আসে ট্যাঙ্কে। বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার বাশতলা গ্রামের নজরুল ফকিরের বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
নজরুল ফকিরের গ্রামসহ উপজেলার প্রতিটি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে লবণাক্ততার কারণে সুপেয় পানির তীব্র সংকট রয়েছে। এ সংকট আরও প্রকট হয় শুষ্ক মৌসুমে। তখন এলাকাজুড়ে শুধু পানযোগ্য পানি নয়, দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের পানিরও চরম সংকট দেখা দেয়। এ সংকট নিরসনে এলাকায় রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম স্থাপনের উদ্যোগ নেয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
নজরুল ফকির  এ প্রতিবেদককে বলেন, বছরজুড়ে এ অঞ্চলের সমস্যা নোনাপানি। এলাকায় বিশুদ্ধ পানি পাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য। সুপেয় পানির একমাত্র উৎস হলো পুকুর। তবে সেটাও আগের মতো নেই। বর্তমানে ড্রামে করে দুর দুরান্ত থেকে পানি আনতে হয়। এর মধ্যে আশার কথাহচ্ছে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে বর্ষার পানি সংরক্ষণের জন্য আমার বাড়ীতে বিনামুল্যে একটি ট্যাঙ্ক স্থাপন করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে ওই ট্যাঙ্ক এ বৃষ্টির পানি সংরক্ষন করেছি। আশা করি বৃষ্টির দিন শেষ হলে বছরের বাকী সময় এখান থেকে  সুপেয় পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। একই গ্রামের ইসরাফিল শেখ জানান, তিনিও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল থেকে একটি ট্যাঙ্ক পেয়েছেন। তার ওই ট্যাঙ্ক কেনার সামর্থ্য ছিলোনা । তাই বছরের পর বছর বিশুদ্ধ পানির অভাবে লবন পানি পান করেছেন।
শুধু নজরুল ফকির আর ইসরাফিল শেখ নয়, উপকুলের মোংলা ও রামপাল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অন্তত প্রায় ছয় হাজার পরিবার উপকূলীয় জেলাগুলোয় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় এই ট্যাঙ্ক পেয়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের জন্য ট্রাষ্ট ফান্ড থেকে ও উপকুলীয় অঞ্চলে বৃষ্টির পানি সংরক্ষন নামে দুইটি প্রকল্পের মাধ্যমে মোংলা ও রামপালে মোট ৭ হাজার ৩ শ ৮৭টি পানির ট্যাঙ্ক স্থাপন করার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী(বাগেরহাট)জয়ন্ত মল্লিক জানান, লবণাক্ততার কারণে সুপেয় পানির সবচেয়ে বড় সংকট তৈরি হয়েছে সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের উপজেলা গুলোতে। সরকারী দুইটি প্রকল্প জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে মোংলা ও রামপাল উপজেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডে ১০ কোটি ১০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে মোংলা ও রামপাল উপজেলায় দুই হাজার ট্যাঙ্ক স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পের কাজ ৭০ ভাগ শেষ হলেও মাত্র ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ পাওয়াগেছে। তাই অল্প কিছু দিন কাজ সাময়িক স্থগিত ছিলো।
তিনি জানান, গেল ১৮ আগষ্ট  আরো ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা অর্থ ছাড়দেয় জলবায়ু ট্রাষ্ট  ফান্ড থেকে। তাই দ্রুত ট্যাঙ্ক স্থাপন কাজ চলছে। চলতি বছরের ডিসেম্বারের মধ্যে ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ রয়েছে। আশা করি তার আগে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। এছাড়া উপকুলীয় অঞ্চলে বৃষ্টির পানি সংরক্ষন প্রকল্প নামে মোংলায়  ১৭ কোটি ৭০ লক্ষ ১২ হাজার টাকা ব্যায়ে ৪ হাজার ২৩টি ও রামপালে ৬ কোটি ১৬ হাজার টাকা ব্যায়ে ১৩৬৪টি ট্যাঙ্ক স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। তবে এ প্রকল্পের  মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বার মাসে।
খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিউল হক বলেন, মোংলা ও রামপাল উপজেলার  অধিকাংশ স্থানেই ভূগর্ভে পানযোগ্য পানির স্তর না পাওয়ায় গভীর নলকূপ চালু করা যায় না। অগভীর নলকূপের পানিতে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা । তাই এসব এলাকায় সুপেয় পানির অভাব সবসময় থাকে। এলাকার মানুষের পানির চাহিদা পূরণের জন্য রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম হচ্ছে ভরসা। তাই আমরা আশা করবো সরকার এ উপকুলের মানুষদের বিশুদ্ধ পানির চাহিদা পুরণে আরো নতুন প্রকল্প বরাদ্ধ দিবেন। ##

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন