জাতীয় ডেস্ক :
রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রত্যাবাসনে প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তবে স্বল্পকালীন ব্যঘাত ঘটতে পারে বলেও জানান তিনি।
শনিবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে কক্সবাজার বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র সচিব।
এ সময় মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের জন্য শুধু প্রত্যাবাসন নয়; জটিল কোনো কারণ থাকতে পারে, এটি এত সহজ কারণ না। মুহিবুল্লাহ না থাকলে কেবল প্রত্যাবাসন হবে না, এ ধারণাটাও সঠিক নয়।
তিনি বলেন, প্রত্যাবাসন একটা বিরাট ব্যাপার, একটা জটিল ব্যাপার। এটির (প্রত্যাবাসন) জন্য মিয়ানমার সরকারের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। এ বিষয়ে চীন আমাদের সহযোগিতা করছে। সুতরাং প্রত্যাবাসনের জন্য সেই দিক থেকে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তারপরও নিহত রোহিঙ্গা মুহিবুল্লাহ ও তার সংগঠন প্রত্যাবাসনের জন্য যে ধরনের কাজ করছিল এতে হয়তো স্বল্পকালীন কিছুটা ব্যাহত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র সচিব।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য যারা কাজ করছিল, মুহিবুল্লাহ হত্যার পর পরিস্থিতির কারণে তারা কিছুটা ভয়ে আছেন। তারা ভাবছেন তাদের নিরাপত্তার কিছুটা হুমকি আছে। এ ব্যাপারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয় ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ (এপিবিএন) সংশ্লিষ্টরা তৎপর রয়েছে এবং তাদের সবধরনের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করছে। এটি খুবই জরুরি।
তারপরও আমাদের ক্যাম্পগুলোতে কোনো ধরনের নিরাপত্তার সমস্যা হয়, সেটার জন্য এক ধরনের দায়-দায়িত্ব তো আমাদের আছে। যে কোনো ধরনের নিরাপত্তার হুমকিগুলো আমরা শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করব। আমরা মনে করছি না, মুহিবুল্লাহর অকাল মৃত্যুতে প্রত্যাবাসনটা সেইভাবে ব্যাহত হবে’ যোগ করেন তিনি।
‘প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গাদের অনেকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সবারই ফিরে যাওয়ার বেশ আগ্রহ রয়েছে। বিশেষ করে তরুণ যারা আছেন তারাই বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এখন রোহিঙ্গারা আরও যে কয়দিন থাকে তাদের আমরা চেষ্টা করব মিয়ানমারের কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষা দেওয়া, বিভিন্ন স্কিল তৈরি করা; যেগুলো মিয়ানমারে ফিরে গেলে তাদের কাজে আসবে। এতে প্রত্যাবাসনের জন্য যখন মিয়ানমার ও চীনের সাথে আলোচনায় বসব তখনও এসব বিষয়াদি নিয়ে আমরা ইমপ্রেস করতে পারব।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু-দৌজা নয়ন বলেন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল শুক্রবার সকালে দুইদিনের সফরে কক্সবাজার আসেন। পরে বিকেলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জড়িত সরকারি প্রশাসন এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
শনিবার সকালে প্রতিনিধি দলটির সদস্যরা উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরির্দশনে যান।
সেখানে পৌঁছে প্রতিনিধি দলটির সদস্যরা প্রত্যাবাসন বিষয়ে রোহিঙ্গা কমিউনিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিসহ ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনার দিকগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করেছে।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার বলেন, প্রতিনিধি দলটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের এক পর্যায়ে রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে নিহত মুহিবুল্লাহর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করেন। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এপিবিএনসহ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে নির্দেশনা দিয়েছেন।
কক্সবাজার বিমানবন্দরে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রতিনিধি দলটির সদস্য পশ্চিম ইউরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মহাসচিব ফাইয়াজ মুর্শিত কাজী, পররাষ্ট্র সচিব দপ্তরের মহা-পরিচালক মোহাম্মদ আলীমুজ্জামান, সহকারী সচিব মো. শোয়াইব-উল-ইসলাম তরফদার ছাড়াও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব শ্রাবস্তি রায় ও অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু-দৌজা নয়নসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিকেলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বিমানযোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।
