আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর ‘বিদ্যুতের গতি’তে এগোচ্ছে সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘোষণা করা ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধারা। এরই মধ্যে অর্ধেক পথ পার হয়ে রাজধানীর কাছাকাছি পৌঁছে গেছে তাদের একটি বহর। তবে পথিপথে রুশ বাহিনীর ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়েছে তারা। রুশ সামরিক হেলিকপ্টার থেকে ওয়াগনার যোদ্ধাদের ওপর গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে।
যে ভাড়াটে ওয়াগনার বাহিনীকে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠিয়েছিল, সেই বাহিনীরই সশস্ত্র বিদ্রোহের মুখে পড়েছে দেশটি। রুশ সামরিক নেতাদের উৎখাতের ঘোষণা দিয়ে সর্বাত্মক হামলা শুরু করেছে ওয়াগনার যোদ্ধারা। এরই মধ্যে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত দুটি শহর দখলে নিয়েছে তারা।
বিবিসির প্রতিবেদন মতে, কমান্ডার ইয়েভজেনি প্রিগোজিন নেতৃত্বাধীন এই বাহিনী এরই মধ্যে ইউক্রেন সীমান্তবর্তী ও রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় রোস্তভ-অন-ডন শহরের সামরিক দফতরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এছাড়া ভরোনেঝ নামে আরেকটি শহরের বেশ কয়েকটি সামরিক স্থাপনা দখল করেছে। এখন পশ্চিম রাশিয়ার মধ্যদিয়ে উত্তরের দিকে রাজধানী মস্কোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তারা।
শনিবার (২৪ জুন) রয়টার্স জানিয়েছে, সামরিক গাড়ি ও ট্যাংক নিয়ে ওয়াগনার বাহিনীর একটি সেনাবহর ভরোনেঝ শহর পেরিয়ে মস্কো অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে রুশ সামরিক হেলিকপ্টার থেকে বহরের ওপর এলোপাতাড়ি গোলাবর্ষন করা হচ্ছে। রোস্তভ-অন-ডন শহর থেকে রাজধানী মস্কোর দূরত্ব প্রায় ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার। এই দুই শহরের মাঝামাঝি ভরোনেঝ শহরটি।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এরপর এই অভিযানে রুশ বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ। এরপর চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত এই বাহিনী মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর বাখমুতে লড়াই করে।
রুশ সামরিক নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে গত মাসের শেষের দিকে ইউক্রেনের বাখমুত শহর থেকে সেনাদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। এরপর চলতি মাসের শুরুর দিকে রুশ বাহিনীর কাছে বাখমুত বুঝিয়ে দেন। তারপর থেকেই রুশ নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক বাক্যবাণ ছুড়তে থাকেন তিনি।
শুক্রবার (২৩ জুন) অনেকটা আকস্মিকভাবেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন প্রিগোজিন। একাধিক টেলিগ্রাম বার্তায় ৬২ বছর বয়সী প্রিগোজিন বলেন, তার যোদ্ধারা রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছে। তবে এটাকে তিনি অভ্যুত্থান বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, ওয়াগনার যোদ্ধারা রাশিয়ার রোস্তভ-অন-ডন শহরে ঢুকে পড়েছে এবং এর বেশ কিছু সামরিক স্থাপনা দখলে নিয়েছে। এই এলাকার অধিবাসীদেরকে ঘরে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এছাড়া তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু তার সঙ্গে আলোচনায় না বসা পর্যন্ত রাজধানী মস্কোর অভিমুখে অভিযান অব্যাহত রাখবে তার যোদ্ধারা।
এদিকে ওয়াগনার বাহিনীর এই বিদ্রোহের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই ভাড়াটে বাহিনীকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ অভিহিত করে তাদের কঠোর শাস্তি দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি।
শনিবার (২৪ জুন) জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণ দেন পুতিন। ভাষণে ওয়াগনার বাহিনী ও এর কমান্ডারের তৎপরতাকে ‘পিঠে ছুরি মারা’র শামিল বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে। কারও কারও উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাদেরকে গভীর রাষ্ট্রদ্রোহিতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’
এদিকে শুক্রবার রাত থেকেই রাশিয়াজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ইন্টারনেটের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া মস্কোর রাস্তায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানে সামরিক ট্রাক টহল দিতে শুরু করেছে।